বয়সের ভারে নুয়ে পড়লেও দমে যাননি ওমেদ আলী (৮০)। বাঁশ দিয়ে নান্দনিক হস্তশিল্প তৈরিতে তিনি সিদ্ধহস্ত। দেশি বাঁশ দিয়ে তৈরি করেন দৃষ্টিনন্দন আসবাবপত্র। হস্তশিল্পের এই কারিগরের বাড়ি উপজেলার উত্তর সিঙ্গেরগাড়ি ডাঙ্গাপাড়া গ্রামে। কারাভোগের পর ৩৫ বছর ধরে তার কারুকার্যখচিত বাঁশের তৈরি আসবাবপত্র নান্দনিকতার সাড়া ফেলেছে। সরেজমিনে জানা যায়, জীবিকার তাগিদে তিনি পুরোদস্তুর বাঁশ শিল্পে মনোনিবেশ করেন ১৯৮৯ সালে। তার বাঁশের তৈরি চেয়ার, টেবিল, খাট, সোফা সেট, দোলনা ও মোড়াসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র অনেকের নজর কাড়ছে। যা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি হচ্ছে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে। সৌখিন মানুষ ঘর সাজাতে সিঙ্গেরগাড়ি বাজারে তার কারখানায় গিয়ে বাঁশের তৈরি আসবাবপত্র ক্রয় করেন।একটা সময় গ্রামীণ জনপদের প্রত্যেক বাড়িতে বাঁশের তৈরি জিনিসপত্রের কদর ও চাহিদা ছিল প্রচুর। বর্তমানে প্লাস্টিকসহ নানা পণ্যের ভিড়ে বাঁশের তৈরি আসবাবপত্র হারিয়ে যাচ্ছে। তবে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এ শিল্পের উদ্যোক্তা ও শ্রমিকদের ভালো কিছু করার সম্ভবনা রয়েছে। প্রশিক্ষণ নিয়ে স্বল্পপুঁজি খাটিয়ে পরিশ্রম করলে যে কেউ ঘরে বসে প্রতি মাসে ২০/২৫ হাজার টাকা আয় করতে পারবে।
এ ব্যাপারে ওমেদ আলী দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন, ষড়যন্ত্র করে আমাকে ডাকাতি মামলায় জড়ানো হয়েছিল। এতে ৬ বছর রংপুর কারাগারে থাকাকালীন কারা কর্তৃপক্ষ আমাকে বাঁশের তৈরি হস্তশিল্পের ওপর প্রশিক্ষণ দেন। ১৯৮৯ সাল থেকে সেই প্রশিক্ষণকে কাজে লাগিয়ে স্বল্প পুঁজি দিয়ে ৭ সদস্যের সংসার চালাচ্ছি। কারাগারে ঢুকেছিলাম অপরাধী হিসেবে, বের হয়েছি একজন কর্মঠ মানুষ হিসেবে। মাগুড়া ইউপি চেয়ারম্যান আখতারুজ্জামান মিঠু জানান, ওমেদ আলী বৃদ্ধ বয়সেও গ্রামবাংলার চিরায়িত ঐতিহ্য বাঁশের তৈরি নান্দনিক হস্তশিল্প ধরে রেখে জীবিকা নির্বাহ করছেন। বাঁশ শিল্পের এ ঐতিহ্য ধরে রাখার পাশাপাশি তিনি স্বচ্ছলভাবে বাঁচতে সংগ্রাম করে যাচ্ছেন। বিষয়টি ইউএনওকে অবগত করে সরকারি বিভিন্ন সহায়তা দিয়ে তাকে পৃষ্ঠপোষকতা করা হবে।