ঢাকা , শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫ , ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের মদের দোকানে তাণ্ডব চালিয়ে মাতাল হয়ে বাথরুমে পড়ে রইল র‍্যাকুন ঋণের চাপে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব এয়ারলাইনস বেচে দিচ্ছে পাকিস্তান সৌদিতে চলচ্চিত্র উৎসবের পর্দা উঠছে কাল, আলো ছড়াবেন জোলি-ঐশ্বরিয়ারা এখনও ‘ট্রাভেল পাস’ চাননি তারেক রহমান: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা আবারও সংশোধন হচ্ছে আরপিও বায়ুদূষণে আজ শীর্ষে ঢাকা, বাতাসের মান ঝুঁকিপূর্ণ নেতৃত্বের ফয়সালা আসমান থেকে আসে: হাসনাত নতুন দুই ছানা পেল সন্তানহারা সেই মা কুকুর রাবির ৩ শিক্ষক বরখাস্ত, ২ শিক্ষার্থীর ছাত্রত্ব বাতিল তুরাগ নদী থেকে যুবকের লাশ উদ্ধার ইমরান খানের জন্য চিন্তিত ভারতীয় অভিনেত্রী মুনমুন সেন এবার ৪.১ মাত্রার ভূমিকম্পে কাঁপল রাজধানী, উৎপত্তিস্থল যেখানে গাজায় যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপ শিগগিরই শুরু হবে: ট্রাম্প হবিগঞ্জের প্রায় ১৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে ফেলে যাওয়া নবজাতককে সারা রাত পাহারা দিল একদল কুকুর! বিশ্বকাপ স্টেডিয়ামের পাশে প্রায় ৫শ ব্যাগে মানুষের দেহাবশেষ উদ্ধার এভারকেয়ারের পাশে উড়বে সেনা ও বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টার ৪ দিন পর নীলফামারী-রংপুর রুটে বাস চলাচল শুরু ২৫ বছর আগে যা ছিলাম, এখন তার চেয়েও চাঙা বলার পরই বৈঠকে এক ঘণ্টা ঘুমালেন ট্রাম্প

নদীর কবর নিষিদ্ধ পলিথিনে

  • আপলোড সময় : ০৭-১২-২০২৪ ০৯:২১:৩৩ পূর্বাহ্ন
  • আপডেট সময় : ০৭-১২-২০২৪ ০৯:২১:৩৩ পূর্বাহ্ন
নদীর কবর নিষিদ্ধ পলিথিনে

শুধু মাটি বা পানিদূষণই নয়, দেশের নদনদী এবং খালের মৃত্যু ডেকে আনছে নিষিদ্ধ পলিথিন ও প্লাস্টিক। অপচনশীল বর্জ্যে ভরাট হয়ে যাচ্ছে নদী, খাল ও বিলের তলদেশ। বন্ধ হয়ে যাচ্ছে খালের প্রবাহ, স্যুয়ারেজ লাইন। নদীপাড়ের মাটি খুঁড়লে মিলছে ১৫-২০ বছরের পুরনো পলিথিন। পলিথিনের কারণে একাধিকবার ড্রেজারের ব্লেড ভেঙে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে বুড়িগঙ্গার খনন কার্যক্রমও। একই কারণে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে তুরাগ, বালু, শীতলক্ষ্যা, কর্ণফুলী, রূপসা ও সুরমা নদীও। পরিবেশ রক্ষায় বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে ২০০২ সালে বাংলাদেশে পলিথিন নিষিদ্ধ করা হলেও রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় গত দুই দশকে উল্টো এর ব্যবহার বেড়েছে ৭-৮ গুণ। বেড়েছে নিষিদ্ধ পলিথিনের কারখানা। দেশের সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে এসব ভয়ংকর তথ্য। জানা যায়, গত বছর একটি বেসরকারি সংস্থা ঢাকার চারপাশের নদীতীরের মাটি খুঁড়ে প্রতি টন মাটিতে আধা কেজি থেকে দেড় কেজি পর্যন্ত প্লাস্টিক পেয়েছে। এর মধ্যে ১৫-২০ বছরের পুরনো প্লাস্টিকও ছিল। কর্ণফুলী নদীতে ২০১৮ সালের ড্রেজিংয়ের সময় ৪৮ লাখ ঘনমিটার মাটি উত্তোলন করা হয়। এর মধ্যে ২২ লাখ ঘনমিটার ছিল পলিথিনযুক্ত বালুমাটি। ২০১২-১৩ সালে ঢাকার চারপাশের নদীর তলদেশের বর্জ্য তুলতে পদক্ষেপ নেয় সরকার। ড্রেজার দিয়ে বর্জ্যযুক্ত মাটি তুলতে গেলে পলিথিনে আটকে ভেঙে যায় ড্রেজারের ব্লেড। গবেষণায় দেখা যায়, নদীর তলদেশ থেকে প্রায় ৬-৭ ফুট নিচ পর্যন্ত পলিথিন ও প্লাস্টিক বর্জ্য জমে আছে। পরে ড্রেজিং বন্ধ হয়ে যায়।

রাজধানী ঢাকার বেশির ভাগ খালই ভরাট হয়ে আছে প্লাস্টিক বর্জ্য।ে কয়েকটি খাল পরিষ্কার করা হলেও সেখান থেকে তোলা শত শত টন পলিথিন ধ্বংস করা যায়নি। সেগুলো ল্যান্ডফিলে ফেলা হয়। এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন-এসডোর গবেষণায় দেখা যায়, সিলেটের সুরমা নদীতে শুধু ২০২১ সালেই জমে ১৯ হাজার টন প্লাস্টিক বর্জ্য। এ ছাড়া এই প্লাস্টিক বর্জ্যরে বড় অংশের শেষ গন্তব্য হচ্ছে বঙ্গোপসাগর, যা সাগরের জীববৈচিত্র্যের জন্য হুমকি। জাতিসংঘের পরিবেশবিষয়ক কর্মসূচির (ইউএনইপি) প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের পদ্মা, যমুনা ও মেঘনা নদী দিয়ে প্রতিদিন ৭৩ হাজার টন প্লাস্টিক বর্জ্য সাগরে মিশছে। ২০২১ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের এক গবেষণায় প্রতি কেজি লবণে গড়ে প্রায় ২ হাজার ৬৭৬টি মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া যায়।

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক উপদেষ্টার দায়িত্ব নিয়ে পলিথিন শপিং ব্যাগের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। নভেম্বর থেকে শুরু হয় বাজারে ও কারখানায় অভিযান। তবে এক মাস পরও বদলায়নি চিত্র। গত ৬ নভেম্বর আন্তর্জাতিক পরিবেশ সম্মেলনে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সবাইকে পলিথিন বর্জনের আহ্বান জানিয়ে বলেন, পলিথিনের কারণে ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদী উদ্ধার করা যাচ্ছে না। নদীর নিচে তিন থেকে চার আস্তরের পলিথিন পড়ে আছে। এ কারণে সেখানে ড্রেজিং করা সম্ভব নয়।যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ওশেনিক অ্যান্ড অ্যাটমোসফেরিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের গবেষণা বলছে, মুদি দোকানের পণ্য বিক্রিতে ব্যবহৃত প্লাস্টিক ব্যাগ মাটিতে মিশতে সময় লাগে প্রায় ২০ বছর। চা, কফি, জুস তথা কোমলপানীয়ের প্লাস্টিক কাপের ক্ষেত্রে সময় লাগে ৫০ বছর। প্লাস্টিকের বোতল প্রকৃতিতে অবিকৃত থাকে প্রায় ৪৫০ বছর।

পরিবেশবাদী গবেষণা প্রতিষ্ঠান চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, শুধু নদনদী ভরাটই নয়, প্লাস্টিক ও পলিথিন দূষণে কমছে মাটির উর্বরতা। দূষিত হচ্ছে পানি। একপর্যায়ে এই প্লাস্টিক গুঁড়া হয়ে মাইক্রোপ্লাস্টিক হিসেবে খাদ্যচক্রের মাধ্যমে ঢুকছে মানুষসহ অন্যান্য প্রাণীর দেহে। ন্যানো প্লাস্টিক উদ্ভিদ ও প্রাণীর কোষের ভিতর অবস্থিত ডিএনএ ও আরএনএ অণুর মধ্যে মিউটেশন ঘটিয়ে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। এর আর্থিক ক্ষতি বছরে কয়েক লাখ কোটি টাকা। তিনি আরও বলেন, বাজারে গিয়ে পলিথিন খুঁজলে হবে না- এর উৎপাদন বন্ধ করতে হবে। উৎপাদনকারী কারখানা নয়, ব্যক্তিকে কয়েক বছরের জন্য সরকারি সব সুবিধা থেকে বঞ্চিত করতে হবে। জরিমানা আদায় করতে হবে ব্যাংকিং ট্রানজেকশনের মাধ্যমে-যাতে দুর্নীতির সুযোগ না থাকে। প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোকে ব্যাপকহারে করারোপ করতে হবে। একই সঙ্গে পর্যাপ্ত বিকল্প পণ্যের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রণোদনা দিয়ে এগুলোকে অনুপ্রাণিত করতে হবে। ২৫-৩০ টাকা দিয়ে ব্যাগ কেনা একজন ভোক্তার জন্য কঠিন। ব্যাগের দামের একটা অংশ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান তাদের সিএসআর ফান্ড থেকে দিতে পারে। কঠোরভাবে আইন প্রয়োগের পাশাপাশি বিকল্প পণ্য সহজলভ্য না করলে পলিথিন নির্মূল কঠিন হবে। পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, দেশে বছরে ৮ লাখ ২১ হাজার ২৫০ টন প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপন্ন হয়। এর ৪০ শতাংশ রিসাইকেল বা পুনঃব্যবহার হয়। বাকিটা পরিবেশে পড়ে থাকে। শুধু ঢাকা শহরেই বছরে প্রায় আড়াই লাখ টন প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপন্ন হয়, যা সারা দেশে উৎপাদিত প্লাস্টিক বর্জ্যরে ৩০ ভাগের বেশি। সরকারি তথ্যানুযায়ী, সারা দেশের মানুষ বছরে মাথাপিছু ৯ থেকে ১০ কেজি প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপন্ন করে। রাজধানীতে মাথাপিছু প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদন হয় ১৮ থেকে ২২ কেজি পর্যন্ত। আর এই প্লাস্টিক ও পলিথিনের একটি বড় অংশের শেষ গন্তব্য হয় নদনদী ও বিভিন্ন জলাশয়ে। পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) জরিপে দেখা গেছে, রাজধানীসহ সারা দেশে নিষিদ্ধ পলিথিন তৈরির কারখানা রয়েছে প্রায় দেড় হাজার, যার বেশির ভাগ রাজধানীর পুরান ঢাকা ও গাজীপুরকেন্দ্রিক। এনভায়রনমেন্টাল পারফরম্যান্স ইনডেক্স (ইপিআই) সূচকে ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৭৭তম।


কমেন্ট বক্স