স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলাম যেসব নথি কব্জায় নিয়েছিলেন সেগুলো প্রকাশ পেলে দেশের ক্ষতি হয়ে যেত। তিনি টিকা আমদানি সংক্রান্ত কিছু নথি সরিয়েছিলেন।
সরকারি নথি ‘চুরির চেষ্টার’ অভিযোগে রোজিনা ইসলামকে গ্রেপ্তার এবং তার বিরুদ্ধে ‘অফিসিয়াল সিক্রেটস’ আইনে মামলা প্রসঙ্গে মঙ্গলবার দুপুরে আগারগাঁওয়ে একনেক সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী একথা বলেন।
জাহিদ মালিক বলেন, সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের কাছে যেটুকু আমি শুনেছি, তাতে স্বাস্থ্যসচিবের পিএসের অনুপস্থিতিতে সোমবার দুপুরে তার কক্ষে ঢুকেছিলেন রোজিনা। ওখানে যে ডিউটিতে ছিল, সে দেখতে পায় একজন ব্যক্তি ওখানে ফাইলের ছবি তুলতেছে, কিছু ফাইল বের করে ব্যাগে ঢুকিয়েছে, শরীরেও ঢুকিয়েছে। তখন সে চিল্লাচিল্লি করেছে, আমাদের মহিলা অফিসাররা এসেছে, এসে তারা ধরেছে যে ‘আপনি কেন এইসব করছেন?’ তখন তার কাছ থেকে ওই কাগজ আর ফাইলগুলো নিয়ে নিয়েছে। এর মধ্যে পুলিশে খবর দিয়েছে, পুলিশ কর্মকর্তারা আসছে, তারা এটা টেকওভার করেছে। প্লাস মোবাইলটাও নিয়েছে, মোবাইলেও অনেক ছবি পাইছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, এই জিনিসটাও দুঃখজনক। কেননা এই ফাইলগুলো ছিল টিকা সংক্রান্ত। আমরা যে রাশিয়ার সঙ্গে টিকার চুক্তি করছি, চায়নার সঙ্গে টিকার চুক্তি করছি। সেগুলো নন-ডিসক্লোজার আইটেম। আমরা রাষ্ট্রীয়ভাবে বলেছি, আমরা এটা গোপনে রাখব, এগুলো বলব না। তো সেইগুলো যদি বাইরে চলে যায়, তাহলে রাষ্ট্রীয়ভাবে আমরা প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করলাম, এবং আমরা টিকা না-ও পেতে পারি। এতে দেশ ও দেশের মানুষের জন্য বিরাট ক্ষতি হতে পারে। এগুলো সিক্রেট ডকুমেন্ট, বাইরে যাওয়া ঠিক হয় নাই।
সোমবার দুপুরের পর স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিবের একান্ত সচিব মো. সাইফুল ইসলাম ভূঞার কক্ষে রোজিনাকে প্রায় সাড়ে ৫ ঘণ্টা আটকে রাখা হয়। পরে রাত সাড়ে ৮টার দিকে তাকে শাহবাগ থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের একজন উপসচিব তার বিরুদ্ধে মামলা করেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, রোজিনা যেসব নথির ছবি তুলেছেন তার মধ্যে টিকা আমদানি সংক্রান্ত কাগজপত্রও ছিল।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে প্রতিবেদন করায় এখন ‘অন্যায়ের’ শিকার হচ্ছেন রোজিনা-এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, দুর্নীতির রিপোর্টিংয়ের জন্য তো আজকের ঘটনা না। ওটা ওখানের ঘটনার, এর উপরই পরবর্তী ঘটনা ঘটছে। সিনিয়র অ্যাডিশনাল সেক্রেটারি ও ডেপুটি সেক্রেটারি লেভেলের দুজন ছিল, প্রাথমিকভাবে তারাই ডিল করছে। পরে যখন রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তার বিষয় আসছে, তখন তারা পুলিশ ডেকেছে।
রোজিনাকে গ্রেপ্তারের ঘটনা নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে এদিন সকাল ১১টায় সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়েছিল। কিন্তু সচিবালয়ে কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএসআরএফ) তা বর্জন করে।