টাইম ম্যাগাজিনের ২০২১ সালে বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ১০০ ব্যক্তিদের তালিকায় নাম এসেছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও আফগানিস্তানের ভারপ্রাপ্ত উপ প্রধানমন্ত্রী তালেবান নেতা মোল্লা আব্দুল গনি বারদারের।
বুধবার নিউইয়র্ক ভিত্তিক বিশ্ববিখ্যাত সাপ্তাহিকী টাইম ম্যাগাজিন ১০০ জন সর্বাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তির তালিকা প্রকাশ করেছে।
আন্তর্জাতিক এই তালিকায় রয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, উপরাষ্ট্রপতি কমলা হ্যারিস, চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, সাসেক্সেরে ডিউক অ্যান্ড ডাচেস প্রিন্স হ্যারি ও মেঘান, প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেইসঙ্গে তালিকায় রাখা হয়েছে, সিরাম ইনস্টিটিউটের সিইও আদর পুনাওয়ালার নাম।
তালিকায় যাদের নাম রয়েছে, তাদের সম্পর্কে বিবরণও দেওয়া হয়েছে।
টাইম ম্যাগাজিনে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতাকে নিয়ে লেখা হয়েছে, হাওয়াই চটি পায়ে সাদা শাড়ি পরা মমতা আপসহীন নেত্রী হিসেবে এক পরিচিত মুখ। কন্যাশ্রী প্রকল্পের জন্য এর আগেও তিনি পেয়েছিলেন আন্তর্জাতিক সম্মান। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে লড়াইয়েও প্রথম সারিতে তিনি। তিনি শুধু দলের নেত্রী নন, তিনিই একটি দল।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদী সম্পর্কে লেখা হয়েছে, স্বাধীন ভারতের ৭৪ বছরের ইতিহাসে তিন নেতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । তারা হলেন, জওহরলাল নেহরু, ইন্দিরা গান্ধী এবং নরেন্দ্র মোদি। এই তালিকায় তিন নম্বরে মোদী। নেহরু ও ইন্দিরার পর আর কেউ এভাবে দেশের রাজনীতিতে এতটা আধিপত্য বিস্তার করতে পারেননি।
তবে মোদী সম্পর্কে বিবরণ লিখতে গিয়ে সিএনএনের প্রখ্যাত সাংবাদিক ফরিদ জাকারিয়া অভিযোগ করে লিখেন যে, মোদি দেশ ধর্মনিরপেক্ষতার পথ থেকে সরিয়ে হিন্দু জাতীয়তাবাদের পথে নিয়ে গিয়েছেন। গত বছরও মোদি এই তালিকায় ছিলেন।
টাইমের প্রোফাইলে আদর পুনাওয়ালা সম্পর্কে লেখা হয়েছে, কোভিড ১৯ অতিমারীর শুরু থেকে বিশ্বের সর্ববৃহৎ ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারী সংস্থার কর্ণধার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেন। অতিমারী এখনও শেষ হয়নি। কাজেই পুনাওয়ালার কাজ এখনও বাকি।
বারাদারের পরিচিতিতে বলা হয়েছে, তালেবানের প্রতিষ্ঠাতাদের একজন তিনি। এ ছাড়া তালেবানের প্রভাবশালী সামরিক নেতাও তিনি। টাইমের জন্য বারাদারের এ পরিচিতিমূলক লেখা লেখেন পাকিস্তানি সাংবাদিক আহমেদ রশিদ।
টাইম বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তালেবানের সমঝোতায় মুখ্য ভূমিকায় ছিলেন বারাদার। আর এ সমঝোতার ওপর ভিত্তি করেই আফগানিস্তানের ক্ষমতার মসনদ দখল করতে পেরেছে তালেবান। বলা হয়ে থাকে, তালেবানের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো নিয়ে থাকেন বারাদার। আফগানিস্তানের সাবেক সরকারি কর্মীদের জন্য যে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হয়েছে, সেই সিদ্ধান্তও তিনি নেন। কাবুলে তালেবানের প্রবেশের সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ এড়াতে তাঁর ভূমিকা ছিল অগ্রগণ্য। এ ছাড়া প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান ও চীনের সঙ্গে তালেবানের যোগাযোগ ও সফরেও তিনি ছিলেন মুখ্য ভূমিকায়। আফগানিস্তানের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে যাঁরা কাজ করবেন, তাঁদের অন্যতম হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে বারদারকে।
তবে একটি প্রশ্ন তাঁকে নিয়ে থাকছে, তা হলো আফগানিস্তান থেকে মার্কিনদের বিদায়ে যিনি কাজ করেছেন, তিনি তালেবানের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাজ করতে পারবেন কি না।
১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তালেবান যখন ক্ষমতায় ছিল, তখন এ সরকারে উপপ্রতিরক্ষামন্ত্রী ছিলেন বারাদার। ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে হামলা চালালে দেশ ছেড়ে পালান তিনি। এরপর ২০১০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন বারাদার।