মাইক্রোক্রেডিটের (ক্ষুদ্রঋণ) নামে সারাদেশে অনিবন্ধিত সুদের ব্যবসা পরিচালনাকারী (সমবায় সমিতি ও এনজিওর) প্রতিষ্ঠানের তালিকা প্রণয়ন করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
একইসঙ্গে, তালিকা করতে গিয়ে যদি ওই সব প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোনো অনিয়ম ধরা পড়ে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে তাদের কার্যক্রমও বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
সেইসঙ্গে অননুমোদিত আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ক্ষুদ্রঋণদানকারী প্রতিষ্ঠানের কার্যকক্রমের বিষয়ে তদন্ত করতে একটি বিশেষ কমিটি গঠনের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতি নির্দেশনা দিয়েছেন হাইকোর্ট।
এছাড়া ঋণদানকারী স্থানীয় সুদকারবারিদের তালিকা দিতে মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আদালতের আদেশ প্রতিপালন করে আগামী ৪৫ দিনের মধ্যে এসব বিষয়ে অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করতে সংশ্লিষ্টদের বলেছেন আদালত। সেই সঙ্গে পরবর্তী আদেশের জন্য ৩০ নভেম্বর দিন ধার্য করেছেন।
এছাড়াও লাইসেন্স এবং অনুমোদন ছাড়া ক্ষুদ্রঋণদানকারী বেসরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ ও তদারকিতে বিবাদীদের নীরবতা কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে হাইকোর্ট। অর্থসচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির এক্সিকিউটিভ ভাইস চেয়ারম্যান ও সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
সোমবার বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমান ও বিচারপতি জাকির হোসেনের ভার্চুয়াল বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নূর উস সাদিক।
সুদ কারবারিদের তালিকা প্রণয়নের নির্দেশনা চেয়ে হওয়া রিটের শুনানিতে প্রতারিত মানুষের অবস্থা তুলে ধরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অর্থ আত্মসাৎ নিয়ে গত ২০ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের একই ভার্চুয়াল বেঞ্চে শুনানি হয়। পরে এ বিষয়ে আদেশের জন্য ২৭ সেপ্টেম্বর দিন ঠিক করেন আদালত।
এর আগে গত ৭ সেপ্টেম্বর সারা দেশের গ্রাম পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়া অনিবন্ধিত সুদের কারবার বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন দাখিল করা হয়। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন রিট আবেদনটি দাখিল করেন।
আবেদনে অর্থসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, আইনসচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, পুলিশের মহাপরিদর্শক, ৬৪ জেলার জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ ১৩৬ ব্যক্তিকে বিবাদী করা হয়েছে।
আইনজীবী সুমন বলেন, দেশজুড়ে সমবায় সমিতির নামে সুদের কারবার চলছে। আবার কেউ কেউ ব্যক্তিগতভাবে ঋণ দেওয়ার নামে উচ্চহারে সুদের কারবার চালিয়ে যাচ্ছেন। সাধারণ মানুষ এসব সুদের কারবারির কাছে জিম্মি। তাদের সাপ্তাহিক ও মাসিক ভিত্তিতে আদায় করা সুদের পরিমাণও আকাশছোঁয়া। ১০ হাজার টাকায় প্রতি সপ্তাহের সুদ ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, কারো ক্ষেত্রে এক হাজার টাকা, মাসে সুদ হিসেবে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করেন তারা। অথচ তাদের এই কারবারে সরকারের কোনো অনুমোদন নেই, সমিতির নামের কোনো নিবন্ধন নেই।
ব্যারিস্টার সুমন আরো বলেন, অনিবন্ধিতভাবে গজিয়ে ওঠা এসব সমবায় সমিতি ও সুদের কারবারি থেকে ঋণ নিয়ে সুদের বোঝা টানতে টানতে নিঃস্ব হয়ে পড়ছে মানুষ। প্রশাসনের চোখের সামনেই এই সুদের কারবার চলছে। এই অনিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের নামে সুদের কারবার বন্ধ হওয়া দরকার।