পদ্মা সেতু উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে এর বিরোধীরা উদ্বোধন অনুষ্ঠান বানচাল করতে বিভিন্ন ধরনের ঘটনা ঘটাতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বুধবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শাপলা হলে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ)-এর ৩৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে তিনি এ আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণের মতো বড় একটা চ্যালেঞ্জ নিয়ে পুরোপুরি নিজস্ব অর্থায়নে সব কাজ আমরা শেষ করেছি। কিন্তুু যারা সেতু নির্মাণের বিরোধিতা করেছিল তাদের একটা উদ্দেশ্য রয়েছে।
যার কিছু কিছু তথ্যও আমরা পেয়েছি। আমরা জানতে পেরেছি, এমন কিছু ঘটানো হবে যাতে ২৫ জুন আমরা উদ্বোধনী অনুষ্ঠান করতে না পারি। বিরোধিতাকারীরা কী করবে তা কিন্তু আমরা জানি না।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে আপনারা দেখেছেন রেলে আগুন, লঞ্চে আগুন. ফেরীতে আগুন এমনকি সীতাকুণ্ডের আগুনও একটা জায়গা থেকে লাগতে পারত; কিন্তু বিক্ষিপ্তভাবে কয়েকটা জায়গায় আগুন লাগে কীভাবে। আর রেলের আগুনের বিষয়ে একটি ভিডিও পাওয়া গিয়েছে যেখানে দেখা গেছে রেলের চাকার নিকটে আগুন জ্বলছে, সেটা কী করে সম্ভব সে প্রশ্নও তোলেন তিনি।
সরকারপ্রধান বলেন, ‘পদ্মা সেতু নিয়ে একটা মিথ্যা অপবাদ আমাদের দিয়েছিল। দুর্ভাগ্য, আমাদের একজন স্বনামধন্য মানুষ, যাকে আমি সবচেয়ে বেশি সুযোগ-সুবিধা দিয়েছিলাম। সেই ড. ইউনুস বেইমানি করেছে। তিনি এমডি পদে থাকতে না পেরে যুক্তরাষ্ট্রের তিন লাখ ডলার ডোনেশন দিয়েছিল। হিলারি আমাকে নিজে ফোনও করেন। আমার কাছে ধর্না দেন। তাকে আমি আইনের কথা বলেছি। বিশ্ব ব্যাংকের কাছে বার বার মেইল পাঠায়, দুর্নীতি হয়েছে বলা হয়। আমি বলেছিলাম-দুর্নীতির প্রমাণ দিতে হবে।’
‘আমরা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলাম যে, এটা প্রমাণ করতে হবে। পরে এটা ভুয়া প্রমাণ হয়েছে। কিন্তু ইউনুসের প্ররোচনায় বিশ্ব ব্যাংক অর্থায়ন থেকে সরে দাঁড়ায়। আমরা বলেছিলাম, নিজের টাকায় পদ্মা সেতু করবো, করেছি।’
অনুষ্ঠানে উপস্থিত তিন বাহিনী প্রধান, পুলিশ, র্যাব, বিজিবি এবং আনসার ও ভিডিপি’র প্রধানদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সবাইকে কিন্তু সতর্ক থাকতে হবে। সব বিষয়ই একটু রহস্যজনক। এ জন্য সবাইকে বলব- একটু সতর্ক থাকতে হবে এবং আমাদের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার দিকেও সবাইকে নজর দিতে হবে। সেগুলোর নিরাপত্তা দিতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার নিরাপত্তার কাজে যারা নিয়োজিত, তাদের জীবনের নিরাপত্তা নিয়েও শঙ্কার কথা জানান।
তিনি বলেন, ‘আমি নিজেও তো গুলি ও বোমার মুখে পড়েছি। আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়েছে। হয়তো আল্লাহ আমাকে দিয়ে কোনো কাজ করাবেন, এজন্য বাঁচিয়ে রেখেছেন। দেশ অভিশাপমুক্ত যাতে হয়, সেই ব্যবস্থাটাই নিয়েছিলাম। যার কারণে বাংলাদেশে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে।’
এসময় এসএসএফ’র প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশে যারা বিদেশি অতিথি এসেছেন, তারা প্রত্যেকে (এসএসফ’র) ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। এটা ধরে রাখতে হবে। আমার পরিবারের মতো যারা আমার সঙ্গে কাজ করেন, তাদের জন্য দোয়া করি।
শেখ হাসিনা বলেন, সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীতে নারী সদস্য নিয়োগ আমরা শুরু করি। পুলিশে নারী সদস্য নিয়োগ জাতির পিতাই শুরু করেছেন।
এসএসএফকে আধুনিকায়ন করা হয়েছে উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, অন্যান্য বাহিনীকেও আধুনিক করার পদক্ষেপ নিয়েছি। প্রত্যেকটি বাহিনী জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস দমনে দায়িত্ব পালন করেছে। যার কারণে এগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি। প্রত্যেককেই এ ব্যাপারে সজাগ ও সচেতন থাকতে হবে। প্রযুক্তি যেমন উন্নয়নের দ্বার উন্মোচন করেছে, তেমনি যারা সন্ত্রাস ও অপকর্মে জড়িত তাদেরও সুযোগ করে দেয়।
অনুষ্ঠানে এসএসফ’র মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. শফিকুর রহমানসহ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তাগণ, তিন বাহিনী প্রধান, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও এসএসএফ’র কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।