বিশ্ববাজারে দাম বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে দেশে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক অডিও বার্তায় প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা লক্ষ্য করছি প্রায় ৬ থেকে ৭ মাস ধরে তেলের মূল্যের ঊর্ধ্বগতি প্রচণ্ডভাবে। যে তেল আমরা ৭০ থেকে ৭১ ডলারের কিনতাম সেটা এখন ১৭১ ডলার হয়ে গেছে। এবং সেটা সব সময় বাড়তির দিকেই যাচ্ছে। আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি যে আমরা তেলের দামে অ্যাডজাস্টমেন্টে যাব। কিন্তু আমাদের নিজস্ব অর্থে আমরা এই ভর্তুকি দিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু তারপরও আমাদের মনে হয়, আমাদের একটা সময়ে প্রাইস অ্যাডজাস্টমেন্টে (মূল্য সমন্বয়) যেতে হবে ।’
পরিবর্তিত এই পরিস্থিতির বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, বর্তমান সংকট সাময়িক। তিনি গ্যাস ব্যবহারে মিতব্যয়ী হতে জনগণের কাছে আহ্বান জানান। প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তেলের দামের ঊর্ধ্বগতির কারণে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। তেলের দাম তারা সমন্বয় করেছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের কথাই যদি বলি, তাদের প্রায় ৩৫ থেকে ৫০ টাকা ডিফারেন্স লিটারপ্রতি বিভিন্ন তেলের ক্ষেত্রে।
দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা বাড়ার পর লোডশেডিং মোটামুটি বিদায় নিয়েছিল। শহরে বিদ্যুৎ–বিভ্রাট হতো না বললেই চলে। এখন সেই লোডশেডিং আবার ফিরেছে। রাজধানীসহ সারা দেশে কিছু দিন ধরে দিনে কয়েকবার বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে।
অডিও বার্তায় বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের গ্যাস দিয়ে আমাদের ৬৪ শতাংশ বিদ্যুৎকেন্দ্র চলে। আমাদের যে নিজস্ব প্রাকৃতিক গ্যাস আমরা দিন দিন বাড়াচ্ছি, আবার দিন দিন কমছেও। যে খনিগুলোর কাছ থেকে আমরা পাচ্ছি, সেটা খুব স্বল্প পরিমাণে। আমরা ১০ বছর আগে থেকে বলে আসছি যে ধীরে ধীরে গ্যাসের মজুত কিন্তু কমতে থাকবে।’
তিনি বলেন, ‘ইউরোপের অধিকাংশ দেশ গ্যাস নেয় রাশিয়া থেকে। সেটা তারা এখন বন্ধ করে দিচ্ছে বলেই সব দেশ এই গ্যাসের ওপর (স্পট মার্কেট) প্রচণ্ডভাবে নির্ভরশীল হয়ে গেছে। এ কারণে যেটা চার ডলারের গ্যাস সেটা ৩০ ডলার হয়ে গেছে স্পট মার্কেটে। সেটা কিনতে আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। অর্থের জোগান দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। সরকারি ভর্তুকি দিয়েও এটা সম্ভব হবে না, এই পরিমাণ অর্থ জোগান দেওয়া।
জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, আবার আমরা যদি শুধু দাম বাড়াতেই থাকি তাহলে সাধারণ মানুষের ওপর প্রচণ্ডভাবে চাপ তৈরি হবে। আমি আগে থেকেই বলে আসছি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমন কিছু করবেন না, যাতে সাধারণ মানুষের ওপর বোঝা হয়ে থাকে। এর কারণে আমরা গ্যাসে সামান্য পরিমাণ মূল্য সংযোজন করেছি। এখনও আমরা তেলে করিনি। আমি আশা করব সকলেই বিষয়টি বুঝতে পারবেন আর ধৈর্য ধরবেন। এটা খুব সাময়িক। আমাদের প্রচুর পাওয়ার প্ল্যান্ট আছে। কিন্তু গ্যাসের কারণে সেগুলোতে আমরা পাওয়ার জেনারেশন কমিয়ে দিয়েছি।
গ্যাস ব্যবহারের ক্ষেত্রে শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী। সার উৎপাদন যাতে ব্যাহত না হয় তার জন্যই এ ব্যবস্থা বলে জানান তিনি।