বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবের জীবনাদর্শ অনুসরণ করে নারীদের অতিরিক্ত চাওয়া-পাওয়া ও বিলাসিতা ছেড়ে মানুষের কল্যাণে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সোমবার বঙ্গমাতার ৯২তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন ও ‘বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব’ পদক প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, রাষ্ট্র চালিয়েছেন আমার বাবা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কিন্তু অনেক বিষয়ে আমার মা তার পাশে থেকে সাহস যুগিয়েছেন, সহযোগিতা করেছেন।
‘আমার বাবার সৌভাগ্য যে, তিনি এমন একটা জীবনসঙ্গী পেয়েছিলেন বলেই এত সফলতা পেয়েছেন। দেশ স্বাধীন করতে পেরেছেন।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমার মা কখনোই এটা লাগবে, ওটা লাগবে বলেননি। এটা না হলে ঘর ছেড়ে চলে যাবো বলেও হুমকি দেননি। যখন যে অবস্থায় ছিলেন, মানিয়ে নিয়েছেন। সবাই আমার মায়ের জন্য দোয়া করবেন।
দেশের নারীসমাজের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার দেশের নারীসমাজ যেন আমার মায়ের আদর্শ ধারণ করে চলে। চাওয়া পাওয়া ও বিলাসিতাই জীবন নয়, ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত হয়ে মানুষের কল্যাণে কাজ করতে হবে।
অনুষ্ঠানে যে পাঁচ বিশিষ্ট নারী ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব পদক-২০২২’ পেয়েছেন তাঁরা হলেন- ‘রাজনীতি’র ক্ষেত্রে সৈয়দা জেবুন্নেছা হক (সিলেট), অর্থনীতিতে সেলিমা আহমাদ এমপি (কুমিল্লা), শিক্ষায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপচার্য অধ্যাপক নাসরীন আহমাদ, সমাজসেবা ক্ষেত্রে মোছা. আছিয়া আলম (কিশোরগঞ্জ) এবং স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ ক্ষেত্রে গোপালগঞ্জ জেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা আশালতা বৈদ্য (মুক্তিযুদ্ধকালীন কমান্ডার)।
বঙ্গমাতার অবদানকে চিরস্মরণীয় করার লক্ষে প্রতি-বছর আটটি ক্ষেত্রে নারীদের অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ‘ক’ শ্রেণীভুক্ত সর্বোচ্চ জাতীয় পদক ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব’ পদক ২০২১ সাল থেকে প্রদান করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেছা ইন্দিরা পদক প্রাপ্তদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন। পুরস্কার হিসেবে ১৮ ক্যারেট স্বর্ণের ৪০ গ্রাম ওজনের পদক, সম্মাননাপত্র এবং ৪ লাখ টাকার চেক প্রদান করা হয়। মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর লেখা ‘শেখ ফজিলাতুন নেছা আমার মা’ শীর্ষক একটি গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন। তিনি ঢাকায় কর্মজীবী নারীদের জন্য ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব’ অত্যাধুনিক ১০ তলা হোস্টেলও উদ্বোধন করেন।
বঙ্গমাতার ৯২তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠান থেকে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ২৫০০ অসচ্ছল নারীর মাঝে ৫০ লাখ টাকার আর্থিক সহায়তা বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন।
জেলা প্রশাসন গোপালগঞ্জ অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে এই কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক শুরু করলেও সারাদেশেই এই কর্মসূচি পালিত হয়। প্রত্যেক নারী পাচ্ছেন ২০০০ টাকা। মোট অর্থের মধ্যে ১৩ লাখ টাকা বন্যা কবলিত জেলা সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও নেত্রকোনার নারীদের মধ্যে বিতরণ করা হচ্ছে।
এছাড়া অনুষ্ঠানে সারাদেশে দুস্থ নারীদের মধ্যে মোট সাড়ে চার হাজার সেলাই মেশিন বিতরণ করা হয়।
অনুষ্ঠানে বঙ্গমাতার জীবনী ভিত্তিক প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন করা হয়। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় নির্মিত অত্যাধুনিক কর্মজীবী মহিলা হোস্টেলের বিষয়েও একটি তথ্য চিত্র অনুষ্ঠানে প্রদর্শন করা হয়। পরে জাতির পিতা, বঙ্গমাতা এবং ‘৭৫ এর ১৫ আগস্টের শহিদদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাতও অনুষ্ঠিত হয়।