স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানিয়েছেন, কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সন্ত্রাসী কার্যক্রম প্রতিরোধ ও মাদক নিয়ন্ত্রণে ক্যাম্পের ভেতরে অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে মাদকের প্রবেশ রোধে নাফ নদীতে মাছ ধরার ট্রলারে নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
রবিবার দুপুরে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে বলপ্রয়োগে বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের সমন্বয়, ব্যবস্থাপনা ও আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির পঞ্চম সভা শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জাবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গারা দীর্ঘদিন আমাদের এখানে অবস্থান করার কারণে একটি অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অভ্যন্তরে আমরা মাঝে মধ্যেই সন্ত্রাসী কার্যক্রম লক্ষ্য করছি। বিনা কারণে রক্তপাতও দেখছি। মাঝে মধ্যে মিয়ানমার থেকে মাদকের আনাগোনাও লক্ষ্য করছি। এটার জন্য গোয়েন্দা তৎপরতা এবং অভ্যন্তরে গোয়েন্দা কার্যক্রম বন্ধের লক্ষ্যে তথ্যভিত্তিক অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
মন্ত্রী আরও বলেন, সেসব অভিযানে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, আনসার তো আছেই; যদি প্রয়োজন হয় সেখানে আমাদের সেনাবাহিনীর সদস্যরাও যুক্ত হবেন। ওখানে এপিবিএন কাজ করছে।
তিনি বলেন, প্রয়োজনে ও বাস্তবতার নিরিখে সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে সমন্বিতভাবে সেনাবাহিনী, বিজিবি, র্যাব, আনসার, পুলিশ, এপিবিএন- যৌথভাবে ক্যাম্পের ভেতরে ও বাইরে অভিযান পরিচালনা করবে।
সভায় নেওয়া অন্যান্য সিদ্ধান্ত তুলে ধরে আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘ক্যাম্পের ভেতরে বারবার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। সেগুলো কেন হচ্ছে আমরা তা খতিয়ে দেখছি। পাশাপাশি আরও সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য যা প্রয়োজন সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে।’
রোহিঙ্গা ক্যাম্পের চারপাশে নিরাপত্তা বেষ্টনী স্থাপন প্রায় শেষ দিকে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘টহল রাস্তাও কিছুটা বাকি আছে, শেষের দিকে। ওয়াচটাওয়ার সেখানে হবে। তারা যেন সার্বক্ষণিক নজরদারিতে থাকে সে ব্যবস্থা করছি।’
আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘ক্যাম্পের ভেতরে জন্মনিরোধের জন্য একটি এসওপি তৈরির কাজ চলছে। স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, ইসলামি ফাউন্ডেশন এ নিয়ে কাজ করছে। ঘরে ঘরে স্বেচ্ছাসেবকরা কাজ করছেন এবং সচেতন করছেন। মসজিদের ইমাম ও এনজিওরাও এ বিষয়ে উপদেশ দিচ্ছেন।’
‘নাফ নদী যেটা আমাদের মাদক আনা-নেওয়ার রুট সেখানে মাছ ধরার ট্রলারের নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করতে সিদ্ধান্ত হয়েছে। ক্যাম্পের ভেতরে এবং বাইরে মাদক চোরাচালান বন্ধে অভিযান যেটা ছিল সেটা আরও জোরদার করা হবে।’
যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গাদের নিতে আগ্রহ জানিয়েছে। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মন্ত্রী বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের নিতে যেসব দেশ আগ্রহ প্রকাশ করেছে সেগুলো আমরা যাচাই-বাছাই করছি। আজ সিদ্ধান্ত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্য কোনো দেশ যদি আগ্রহ প্রকাশ করে, তারা কী পরিমাণ নেবেন তা খতিয়ে দেখতে হবে। আমরা সেগুলোই খতিয়ে দেখছি। এখনও কোনো প্রস্তাব আমাদের কাছে আসেনি।’
‘পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এটা নিয়ে কাজ করছে। এ রকম যদি কেউ আগ্রহ প্রকাশ করেন, তাদের আমরা বলবো অধিক সংখ্যক নেওয়ার জন্য। অধিক সংখ্যক নিয়ে এ সমস্যা যাতে দ্রুত শেষ হয় সেটাই ভালো।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান, স্বরাষ্ট্রসচিব (সুরক্ষা সেবা বিভাগ) আব্দুল্লাহ আল মাসুদ চৌধুরী, পররাষ্ট্র সিনিয়র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব মো. কামরুল হাসানসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।