পায়রা সমুদ্রবন্দরকে বিশ্বমানের করতে ১১,০৭২ কোটি টাকার বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৃহস্পতিবার সকালে প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে এসব উন্নয়ন প্রকল্পগুলো ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করেন।
উন্নয়নকাজের মধ্যে রয়েছে বন্দরের ক্যাপিটাল ড্রেজিং, আটটি জাহাজের উদ্বোধন, প্রথম টার্মিনাল এবং ছয় লেনের সংযোগ সড়ক ও একটি সেতু নির্মাণ। সমুদ্রবন্দরের রাবনাবাদ চ্যানেলের ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ে একটি ৭৫ কিলোমিটার দীর্ঘ, ১০০-১২৫ মিটার চওড়া এবং ১০.৫ মিটার গভীর চ্যানেল তৈরি হবে, যা বন্দরে ৪০ হাজার টন কার্গো বা তিন হাজারটি কনটেইনার বোঝাই জাহাজ ডক করার সক্ষমতা তৈরি করবে।
পায়রা সমুদ্রবন্দরের জন্য ২০৯ কোটি ৭৪ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত জাহাজ ও নৌযানগুলো বন্দর কর্তৃপক্ষকে বিদেশি জাহাজের আগমন ও প্রস্থান পর্যবেক্ষণ এবং চ্যানেল রক্ষণাবেক্ষণে সহায়তা করবে। আজ দুটি পাইলট ভেসেল, দুটি হেভি ডিউটি স্পিডবোট, একটি বয় লেইং ভেসেল, একটি সার্ভে বোট এবং দুটি টাগবোটসহ আটটি জাহাজের উদ্বোধন করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেকেই প্রশ্ন তুলতে পারেন রিজার্ভের টাকা গেল কোথায়? যারা এই প্রশ্নটা করেন তাদের বলছি, রিজার্ভের টাকা গেল পায়রা বন্দরে। রিজার্ভের টাকা গেছে দেশের জনগণের জন্য খাদ্য কেনায়, সার কেনায়। রিজার্ভের টাকা জনগণের কল্যাণে এবং আমদানিতে ব্যয় হয়েছে। কেউ এই অর্থ আত্মসাৎ বা অপব্যবহার করেনি।
তিনি বলেন, বিদেশি অর্থায়নে অনেক ঝক্কি ঝামেলা পোহাতে হয়। সে কারণে আমাদের রিজার্ভের টাকা দিয়ে একটা ফান্ড তৈরি করি। সেই ফান্ডের নামও আমি দিয়েছিলাম- বাংলাদেশ ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট ফান্ড অর্থাৎ বাংলাদেশ অবকাঠামো উন্নয়ন তহবিল। সেটার অর্থেই বন্দরে কাজ শুরু করি।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, নিজেদের রির্জাভের টাকা ভবিষ্যতে আমাদের উন্নয়নের ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে পারি। বন্দরকে আমরা লোন দিয়েছি, খুব অল্প সুদে, ঘরের টাকা ঘরেই থাকবে, এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাবে। এটা হচ্ছে সবচেয়ে বড় কথা।
পায়রা বন্দর করতেও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছে দাবি করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পায়রা বন্দর তৈরি করার বিষয়টি যখন বলি তখন অনেকেই বাধা দিয়েছে। বলেছে এখানে বন্দর হওয়া সম্ভব নয়। কারণ এখানে অনেক সিল্ট আছে। বিশেষ করে আমাদের রাবনাবাদ চ্যানেল, এখানে এত বেশি সিল্ট যে পলি অপসারণ করা বা পরিবহন যোগাযোগের এত বেশি সুযোগ করা যাবে না।
সাবেক নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শাজাহান খানকে বললাম, ভাই আমি এখানে একটা বন্দর করতে চাই। বললেন, আমরা করতে পারবো। নিজে গেলেন, দেখলেন। অনেক বাধা অতিক্রম করে ২০১৬ সালে অপারেশনাল কাজ শুরু করি। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর থেকে নিয়মিত কয়লাসহ অনেক বাণিজ্যিক জাহাজ আসতে শুরু করে। পায়রা নামটা আমারই দেওয়া। এখানে আমরা কয়লাভিত্তিক একটা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ শুরু করি। বিদ্যুৎকেন্দ্রের কয়লার পরিবহন দিয়ে বন্দরের কাজ শুরু হয়।
ভবিষ্যতে ঢাকা থেকে পায়রা বন্দর পর্যন্ত রেলপথ করার পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।