টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে পাকিস্তানকে ৫ উইকেটে হারিয়ে ১২ বছর পর দ্বিতীয়বার চ্যাম্পিয়ন হলো ইংল্যান্ড।
রোববার মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে টস হেরে আগে ব্যাট করে ৮ উইকেটে ১৩৭ রান তোলে পাকিস্তান। জবাবে ব্যাটিংয়ে নেমে বেন স্টোকসের ব্যাটে ভর করে ১ ওভার হাতে রেখেই জয় পায় ইংল্যান্ড।
টস হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা মোটেও ভাল হয়নি পাকিস্তানের। শুরুতেই রানআউটে ফিরতে যাচ্ছিলেন মোহাম্মদ রিজওয়ান। ক্রিস জর্ডান মিস করায় প্রাণ পেলেও সেটি কাজে লাগাতে পারেন নি পাকিস্তানের এই ওপেনার। রিজওয়ানের উইকেট উড়িয়ে ইংল্যান্ডকে প্রথম সাফল্যটা এনে দেন স্যাম কারান।
এই বোলারের অফ স্টাম্পের অনেক বাইরে পিচ করা বলে ব্যাট চালিয়ে ভুল করেন রিজওয়ান। ব্যস, ব্যাটের ভেতরের কানায় লেগে আঘাত হানে লেগ স্টাম্পে। ফেরার আগে ১৪ বলে ১৫ রান তুলেন রিজওয়ান। তখন দলের রান ৫ ওভার শেষে ২৯। তারপর প্রথম ৬ ওভার শেষে পাওয়ার প্লে’তে ৩৯ রান তুলতে সক্ষম হয় পাকিস্তান।
তারপর মোহাম্মদ হারিসও যেতে পারেন নি বেশিদূর। আক্রমণে এসেই তাকে ফেরান আদিল রশিদ। তখন খেলা চলছিল অষ্টম ওভারের। টাইমিং ভুলে লং-অনে বেন স্টোকসের হাতে বল দিয়ে সাজঘরের পথ ধরেন এই পাকিস্তানি ব্যাটসম্যান। তার আগে করেন ১২ বলে ৮।
তারপর অবশ্য কিছুটা লড়াইয়ে ফেরার চেষ্টা করেছে পাকিস্তান। অধিনায়ক বাবর আজমের সঙ্গে শান মাসুদের জুটিটা জমে উঠলেও, রান তোলার গতিটা কখনোই সন্তুষ্ট হওয়ার মতো ছিল না। ফলাফল প্রথম ১০ ওভার শেষে পাকিস্তান তুলে ২ উইকেটে ৬৮।
তারপর ফের পথ হারায় ২০০৯ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। পাকিস্তান শিবিরে আবারও আঘাত হানে আদিল রশিদ। ১২তম ওভারের প্রথম বলেই সাজঘরে ফিরেন ২৮ বলে ৩২ রান করা বাবর। আদিলের গুগলিতে ক্যাচ তুলে দেন বাবর।
টানা দুই ওভারে উইকেট হারিয়ে পথটাও হারিয়ে ফেলে পাকিস্তান। আদিলের পর বল হাতে ম্যাজিক দেখান বেন স্টোকস। তিনি তুলে নেন ইফতিখার আহমেদের উইকেট। স্টোকসের দ্রুতগতির লাফিয়ে উঠা বল খেলতে পারেন নি ইফতিখার। বল তার গ্লাভস ছুঁয়ে চলে যায় অধিনায়ক জস বাটলারের গ্লাভসে। ৬ বল খেলে কোন রান না করেই ফেরেন তিনি!
এরপর শাদাব খান-শান মাসুদ জুটি গড়ে স্বপ্ন দেখাচ্ছিলেন পাকিস্তানকে। কিন্তু বড় জুটি গড়তে পারেননি এই জুটি। দ্বিতীয় স্পেলে এসে স্যাম কারান ভাঙেন এই জুটি। তার বলে হাওয়ায় ভাসিয়ে মারতে গিয়ে মিড উইকেটে লিয়াম লিভিংস্টোনের হাতে ক্যাচ তুলে দেন মাসুদ। তার আগে করেন ২ চার ও ১ ছক্কায় ২৮ বলে ৩৮। ভাঙে ৩৬ রানের জুটি।
তারপর শাদাবও দ্রুত মাসুদের সঙ্গী হয়ে হতাশায় ভাসান মেলবোর্নের গ্যালারিতে হাজির পাকিস্তানি দর্শকদের। ক্রিস জর্ডানের বলে পুল করতে গিয়ে আউট হন শাদাব। তিনি করেন ১৪ বলে ২০ রান। তারপর কারান তুলে নেন মোহাম্মদ নাওয়াজের উইকেটও। ৭ বলে ৫ রান করে ফেরেন তিনি!
কারানের আগুনঝরা বোলিংয়ে পথ হারায় পাকিস্তান। তারপর আর ফেরা হয়নি। কারনি ৪ ওভারে মাত্র ১২ রান দিয়ে নেন ৩ উইকেট। রশিদ দুই উইকেট নিয়েছেন ২২ রানে। ২৭ রানে সমান উইকেট ক্রিস জর্ডানের!
ব্যাট করতে নেমে প্রথম ওভারেই ভাঙে সেমিফাইনালে ভারতকে উড়িয়ে দেওয়া ইংল্যান্ডের উদ্বোধনী জুটি। অ্যালেক্স হেলসকে বোল্ড করেন শাহিন শাহ আফ্রিদি। তার লেগ স্টাম্পে পড়ে সোজা আসা বল প্যাডে লেগে বল আঘাত হানে স্টাম্পে। ২ বলে ১ রানে আউট হন হেলস।
তারপর হারিস রউফ ম্যাচ জমিয়ে তোলার ইঙ্গিত দেন ফিল সল্টকে ফিরিয়ে। পুল করতে গিয়ে সল্ট ক্যাচ তুলে দেন ইফতিখার আহমেদের হাতে। তিনি ফেরেন ৯ বলে ১০ রানে।
এরপর অধিনায়ক জস বাটলারকেও ফেরান হারিস রউফ। তার লাফিয়ে উঠা বল ব্যাটের বাইরের কানা স্পর্শ করে চলে যায় মোহাম্মদ রিজওয়ানের গ্লাভসে। ফেরার আগে ১৭ বলে ২৬ রান করেন বাটলার। পাওয়ার প্লের প্রথম ৬ ওভারে ইংল্যান্ড তোলে ৩ উইকেট হারিয়ে ৪৯!
তারপর বেন স্টোকস আর মঈন আলির ব্যাট ইংল্যান্ডকে জয়ের পথে রাখে। জয়ের বন্দর থেকে সামান্য দূরে থাকতে মঈন আলী আউট হন ১৩ বলে ১৯ রান করে।
তবে শেষ পর্যন্ত ৪৯ বলে ৫৫ রান করে অপরাজিত থেকে ইংল্যান্ডকে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন করেই মাঠ ছাড়েন বেন স্টোকস।