MYTV Live

চাপ কমাতে করণীয়

ব্যক্তিজীবন, সংসারের দায়িত্ব পালনে এবং অফিসে আমাদের প্রতিনিয়ত স্ট্রেস নিতে হয়। তাই স্ট্রেস দিন দিন আমাদের আধুনিক জীবনের অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠছে। কিন্তু যদি স্ট্রেস সামলাতে গিয়ে মনে হয় যে অতিরিক্ত চাপ নেওয়া হয়ে যাচ্ছে, তাহলে এটি মোটেও সুখকর নয়। কারণ এটি স্বাস্থ্যের জন্যও দীর্ঘ মেয়াদে ডেকে আনতে পারে ভয়াবহ ফল।

তবে ছোট্ট কয়েকটা অনুশীলন সাহায্য করতে পারে এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে।

১. গভীরে শ্বাস নেওয়া: কোনো সমস্যায় পড়লে আমাদের স্ট্রেস হরমোন নিঃসৃত হতে থাকে। আর এই হরমোন আমাদের অস্থির করে তোলে। ফলে এমন পরিস্থিতিতে আমরা দ্রুত শ্বাস নেই। এক্ষেত্রে গভীরভাবে ধীরে ধীরে শ্বাস নিতে হবে। গভীরভাবে শ্বাস নিলে আমাদের স্ট্রেস হরমোন নিঃসরণ বন্ধ হয়ে যায়, ফলে পেশি শিথিল হতে থাকে। মস্তিষ্ক একবারে অনেকখানি অক্সিজেন পায়।

তাই যখন স্ট্রেসড অনুভব করবেন, তখন অন্তত ২ মিনিট ধরে জোরে শ্বাস নিন, পেটের মধ্যে শ্বাস আটকে রাখুন, ছেড়ে দিন। এই শ্বাসপ্রশ্বাসের ওপর মনোযোগ আমাদের মনকে বিক্ষিপ্ত অবস্থা আর নেতিবাচকতা দূর করে কাজে মন দিতে সাহায্য করে।

২. ইতিবাচক দিকগুলোতে মনোযোগ দেওয়া: যেকোনো কঠিন পরিস্থিতিতে মাথায় খারাপ চিন্তা আসা স্বাভাবিক। তবে এই চিন্তার মধ্যে ডুবে গেলেই সমস্যা! কারণ, এটি অহেতুক উদ্বেগ বাড়িয়ে তোলে, আতঙ্কিত করে। নেতিবাচক চিন্তা মাথায় এলে সেটাকে ইতিবাচক কিছুতে বদলে ফেলতে চেষ্টা করতে হবে। এক দিন–দুই দিনের চেষ্টায় হয়তো সেটা সম্ভব না, তবে চেষ্টা করতে হবে।

কাজ শুরুর আগে কল্পনা করুন, কাজটি ভালোভাবে শেষ হচ্ছে, কাজটির জন্য আপনি প্রশংসিত হচ্ছেন। তারপর কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ুন। তাহলে মনে একটা ফুরফুরে আমেজ আসবে। আপনি অনুভব করতে পারবেন, আগের চেয়ে ভালোভাবে কাজটি করতে পারছেন।

৩. প্রাধান্য পাক রাতের ঘুম: রাতে ভালো ঘুম না হলে কাজ করতে যেমন স্ট্রেসড লাগে, তেমনি স্ট্রেসড থাকলে আমাদের রাতে ঘুম হয় না। এই চক্র ভাঙতে রাতে ঘুম আসতে দেরি হলে সন্ধ্যার পর থেকে চা বা কফিজাতীয় খাবার, ভারী খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।

এছাড়া মোবাইল-টিভি-ল্যাপটপের স্ক্রিনের নীল আলো আমাদের ঘুমের স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটায়। তাই রাতে ঘুমানোর অন্তত দুই ঘণ্টা আগে এসব ডিভাইস ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।

৪. ব্যায়ামের অভ্যাস করা: প্রেশার আর স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণে ব্যায়াম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ব্যায়াম করলে যে হরমোন নিঃসৃত হয়, তা মন ফুরফুরে করে, নতুন করে চিন্তায় সাহায্য করে। কাজের সময় প্রেশার নিতে না পারলে অফিসেই হালকা ব্যায়াম করা যেতে পারে। বাইরে গিয়েও ৫-১০ মিনিট হেঁটে এসে কাজে বসলে নতুন প্রেরণা পাওয়া যায়।

৫. মেডিটেশন: মেডিটেশন করলে মানসিক চাপ কমে। দীর্ঘদিন ধরে মেডিটেশন ঠান্ডা মাথায় ভাবতে সাহায্য করে। বাইরের স্ট্রেস তখন স্পর্শ করে কম। অনেকেই ভাবেন মেডিটেশন মানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা এক জায়গায় বসে থাকা। এটা মোটেও কার্যকর পদ্ধতি না।

প্রতিদিন ৫ থেকে ১০ মিনিটের জন্য দুই থেকে তিনবার এক জায়গায় চুপচাপ বসুন, কোনো কিছু না ভেবে নিজের নিশ্বাসের ওপর মনোনিবেশ করুন। চাইলে নিজের জীবনে প্রতিদিনের ভালো ভালো ব্যাপারগুলো নিয়েও ভাবতে পারেন। প্রতিদিন ঘুমানোর আগে দিনে ঘটে যাওয়া সব ভালো কিছুর জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করুন, কৃতজ্ঞ হোন। এতে মন শান্ত হবে।

৬. ইতিবাচক মানুষকে সঙ্গী বানানো: কর্মক্ষেত্রে যাঁরা চাপের মধ্যে রাখেন, তাঁদের সঙ্গ হয়তো পরিহার করতে পারবেন না। তবে এমন দু-একজন মানুষ খুঁজে বের করতে হবে, যাঁদের সঙ্গে মিশতে ভালো লাগে, যাঁরা আপনাকে বোঝেন। যখন চাপের মধ্যে থাকবেন, বন্ধু বা পরিবারের সঙ্গে বেশি বেশি সময় কাটান। নিজের সমস্যাগুলো খুলে বলুন। আপনার সমস্যা হয়তো দিন শেষে আপনাকেই সমাধান করতে হবে। কিন্তু সমস্যা ভাগ করে নিলে তা চাপমুক্ত থাকতে সাহায্য করবে।

Related Articles

Stay Connected

22,878FansLike
3,868FollowersFollow
21,200SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles