বাংলাদেশ চলচ্চিত্রজগতের নায়করাজ রাজ্জাকের ৮০তম জন্মবার্ষিকী আজ। ১৯৪২ সালের ২৩ জানুয়ারি কলকাতায় জন্ম হয় তাঁর। ১৯৬৪ সালে তিনি সপরিবারে চলে আসেন ঢাকায়। জহির রায়হানের ‘বেহুলা’ সিনেমা দিয়ে নায়ক হিসেবে অভিষেক হয় তাঁর। ২০১৭ সালের ২১ আগস্ট ৭৫ বছর বয়সে দীর্ঘ এক বর্ণিল ক্যারিয়ারের সমাপ্তি ঘটে।
পারিবারিক আয়োজন: বেঁচে থাকতে নায়করাজের জন্মদিনে থাকত নানা আয়োজন। ভক্ত, সহকর্মী আর পরিবার-পরিজনদের ভালোবাসায় সিক্ত হতেন নায়ক। গুলশানের বাড়িটা দিনময় থাকত লোকজনের আনাগোনায় মুখর। এখন নায়করাজ নেই। অদ্ভুত এক নীরবতায় ছেয়ে আছে বাড়িটা। নায়করাজের শূন্যতায় মনটা কেমন বিষাদে ছেয়ে থাকে সবার।
আজ নায়করাজের জন্মদিনে তাঁর পরিবারের লোকজন সকাল সকাল যান বনানী কবরস্থানে। সেখানে রাজ্জাকের আত্মার শান্তি কামনায় দোয়া পাঠ শেষে ফিরেন বাসায়। নায়করাজ গুলশানের আজাদ মসজিদে নামাজ পড়তেন। বাদ জোহর সেখানে থাকে খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা। বাদ আসর বাসায় আয়োজন করা হয়েছে মিলাদ মাহফিলের। আজ জন্মদিনে তাঁকে স্মরণ করবে দেশের সিনেমাজগৎ। বিকেলে এফডিসিতে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির অফিসে আয়োজন করা হয়েছে দোয়া মাহফিলের।
সুচন্দা: আমার নায়িকাজীবনের শুরুর দিকের নায়ক ছিলেন রাজ্জাক। ‘বেহুলা’ সিনেমায় তাঁর সঙ্গে প্রথম অভিনয়। সহশিল্পী হিসেবে বোঝাপড়াটা প্রথম সিনেমাতেই তৈরি হয়েছিল আমাদের। আমাদের প্রথম সিনেমাটি দর্শক এতটাই গ্রহণ করেছিল যে হল থেকে নামানোই মুশকিল হয়েছিল। ‘বেহুলা’ দিয়েই বাংলা সিনেমার জোয়ার সৃষ্টি হয়েছিল। এরপর ‘মনের মতো বউ’, ‘জীবন থেকে নেওয়া’, ‘অশ্রু দিয়ে লেখা’, ‘প্রতিশোধ’সহ অনেক সিনেমায় কাজ করেছি আমরা।
সহশিল্পী হিসেবে তিনি আমাকে শ্রদ্ধা করতেন, আবার জহির রায়হান তাঁকে সিনেমায় এনেছেন—দুইয়ে মিলে আমাদের সম্পর্কটা ছিল পারিবারিক। তাঁর পরিবারের সঙ্গেও আমার ভালো সম্পর্ক। তাঁরা এখনো আমার খোঁজখবর নেন। আমিও তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করি। তাঁর মৃত্যুতে সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির যে ক্ষতি হয়েছে, সেটি অপূরণীয়। তাঁর মতো কিংবদন্তিরা বেঁচে থাকেন আজীবন।
খালিদ হোসেন সম্রাট: আব্বা চলে গেছেন পাঁচ বছর হলো। কিন্তু সারা দেশের মানুষ আব্বাকে এখনো এত ভালোবাসেন, শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন, সেটা প্রতিনিয়তই আমি টের পাই। আমার সঙ্গে দেখা হলে অনেকেই আব্বাকে নিয়ে গল্প করেন। তাঁর সন্তান হিসেবে আমি গর্ববোধ করি।আমার সন্তানরা ছিল আব্বার বন্ধু। বাসায় ওদের নিয়েই মেতে থাকতেন আব্বা। ওদের কিছু হলে খুব মন খারাপ করতেন। আব্বার জন্য তো ওদের শাসন করতেও ভয় পেতাম। আবার কখনো যদি ওদের বকা দিয়েছি তো, আব্বা ঠিক ওদের জন্য গিফট নিয়ে হাজির। এই যে আজ আব্বার জন্মদিন, এই দিনটাতে তো সকাল থেকেই ওদের নিয়ে সময় কাটাতে চাইতেন আব্বা। খুব মিস করি আব্বাকে আমরা সবাই। বিশেষ করে আমার মা যেন তাঁর দীর্ঘদিনের বন্ধুকে হারিয়ে মনের গহিনে এক শোক নিয়ে বেঁচে আছেন। আল্লাহ আমার আব্বাকে বেহেশত নসিব করুন।