মায়ের জিম্মায় থাকবে জাপানি দুই শিশু জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনা। একই সঙ্গে মেয়েদের নিয়ে জাপান যেতে পারবেন তাদের মা নাকানো এরিকো। এছাড়া এই দুই শিশুর বাবা ইমরান শরীফ যে মামলা করেছিলেন তা খারিজ করে দেন আদালত।
নাবালিকা দুই শিশু কোথায় থাকলে কল্যাণ হবে সে দিক বিবেচনায় রেখে এ রায় দেওয়া হয়। ২৯ জানুয়ারি, রায় ঘোষণা করেন ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত সহকারী জজ ও পারিবারিক আদালতের বিচারক দুরদানা রহমান।
এর আগে গত ২২ জানুয়ারি উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে আদালত রায়ের তারিখ ধার্য করেন। ওই দিন মা এরিকোর পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। আর বাবা ইমরানের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট নাসিমা আক্তার।
উভয় পক্ষই ওইদিন আদালতে দুই সন্তানের অভিভাবকত্ব দাবি করে যুক্তিতর্ক তুলে ধরেন। জাপানি মা এরিকোর পক্ষে তাঁর আইনজীবী বলেন, দুই সন্তানের বাবা ইমরান শরীফ জাপানে বসবাস করেন। তিনি এরিকোকে ভালোবেসে বিয়ে করেন। ১০ বছর সংসার করেন। দুজনের মধ্যে মনোমালিন্য হওয়ায় একপর্যায়ে ডিভোর্স হয়। এরপর ইমরান শরীফ জাপানে পারিবারিক আদালতে মামলা করেন। তিনি এক মেয়েকে বাংলাদেশে নিয়ে আসতে চান। সেখানকার পারিবারিক আদালত তাঁকে অনুমতি দেননি। এরপর একদিন বাচ্চারা স্কুল থেকে ফেরার সময় তিনি দুই সন্তানকে অপহরণ করেন। তাদের নিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন।
এরিকোর আইনজীবী আরও বলেন, শিশুদের মঙ্গলের জন্য আদালত আদেশ দেবেন। মায়ের কাছে শিশুরা যেভাবে থাকবেন, পিতা সেভাবে রাখতে পারবেন না। দুই মেয়ে টোকিওর স্কুলে পড়াশোনা করে। তারা সেখানে বড় হয়েছে। এ দেশে তাদের পড়াশোনার পরিবেশ সৃষ্টি হবে না।
অন্যদিকে ইমরান শরীফের আইনজীবী বলেন, জাপানে যখন বিয়ে হয়, এরিকো আর্থিকভাবে সচ্ছল নয়। কাজেই আর্থিক অনটনের কারণে তিনি সন্তানদের লেখাপড়া করাতে পারবেন না। এরিকো মাদকাসক্ত বলেও আদালতকে বলেন তিনি।
ইমরানের আইনজীবী বলেন, জাপানের প্রথা অনুযায়ী যদি মা অথবা বাবা জাপানি না হয়ে ভিনদেশি হন, তাঁদের সন্তানদের উচ্চতর শিক্ষা এবং ভালো কর্মসংস্থান থেকে দূরে রাখা হয়। সেখানে এই দুই শিশুর উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ বলে কিছু হবে না। কাজেই বাবার কাছে তাঁরা নিরাপদ থাকবে বলে দাবি করেন আইনজীবী।
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে দুই মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে ইমরান জাপান থেকে দেশে আসেন। এরপর মেয়েদের অভিভাবক দাবি করে ঢাকার পারিবারিক আদালতে মামলা করেন। একই বছরের ১৮ জুলাই বাংলাদেশে আসেন এরিকো। তাদের ফিরে পেতে ১৯ আগস্ট হাইকোর্টে রিট করেন তিনি। পরে আদালতের নির্দেশে শিশু দুটিকে তেজগাঁওয়ে পুলিশের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে রাখা হয় কিছুদিন। সব পক্ষের শুনানির পর ৩১ আগস্ট হাইকোর্ট গুলশানের ফ্ল্যাটে মায়ের হেফাজতে শিশুদের রাখার আদেশ দেন। কিন্তু এ দেশেই সন্তানদের নিয়ে থাকতে হবে বলে শর্ত দেন।
ইমরান শরীফ আদালতকে জানান, স্ত্রীর সঙ্গে ডিভোর্স হয়ে যাওয়ায় তিনি মেয়েদের নিয়ে বাংলাদেশে আসেন। তিনি বাংলাদেশের নাগরিক। বাংলাদেশেই বসবাস করবেন। তাঁর সন্তানদের অভিভাবক হিসেবে তিনি এই মামলা করেছেন। যেহেতু মা ভিনদেশি, তাই নিজেকে একমাত্র অভিভাবক দাবি করেন।
এর আগে দুই সন্তান নিয়ে জাপানে পালানোর চেষ্টার অভিযোগে নাকানো এরিকোর বিরুদ্ধে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা হয় গত ২৯ ডিসেম্বর। ইমরান শরীফ এই মামলা দায়ের করেন। আদালত এই মামলার তদন্ত করার জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দেন।