পর্যটকদের কাছে স্বর্গরাজ্য ইতালির উত্তরাঞ্চলীয় শহর ভেনিস। এর কারন ভেনিসজুড়ে জালের মতো ছড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য খাল। এসব খালের স্বচ্ছ পানিতে গন্ডোলায় চড়ে শহরজুড়ে ঘুরে বেড়াতে ভেনিসে ভিড় করেন অসংখ্য পর্যটক। গন্ডোলা একটি ঐতিহ্যবাহী সরু ও লম্বা ভেনিসিয়ান দাঁড়টানা নৌকা।
কিন্তু এখন বদলে গেছে সেই পুরোনো চিত্র। কারণ পানির অভাবে শুকিয়ে যাচ্ছে খালগুলো। ফলে শুকিয়ে যাওয়া খালের কাদায় আটকে আছে নৌকা। এরফলে পর্যটকদের কাছে আকর্ষণ হারাচ্ছে ভেনিস।
ভেনিসের খালগুলো শুকিয়ে যাওয়ার বড় কারণ এবার বৃষ্টি ও তুষারপাত কম হওয়া। এই পরিস্থিতির পেছনে উচ্চচাপ, পূর্ণচন্দ্র, সমুদ্রস্রোতসহ কিছু কারণ রয়েছে। এ বিষয়ে ভেনিস সিটি কাউন্সিলের স্রোতসংক্রান্ত বিভাগে প্রধান আলভিস পাপা জানান, খরার কারণে হ্রদ ও নদীতে পানি কমে গেছে। ভূমধ্যসাগরে উচ্চচাপসহ এমন একটি পরিস্থিতি বিরাজ করছে, যার প্রভাবে বৃষ্টি কম হচ্ছে। ভাটা প্রলম্বিত হচ্ছে।
গত সপ্তাহে ভেনিসের খালগুলোয় পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ১ দশমিক ৬ ফুট কম ছিল বলে জানান আলভিস পাপা। তিনি বলেন, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে ভারী বৃষ্টি হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। এরপর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসতে পারে।
প্রতিবছরই জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে খালে পানি কমে আসা ও স্রোত না থাকার সমস্যায় ভোগে ভেনিস। তবে গত ১৬ বছরের মধ্যে এবারের মতো এত প্রকট সমস্যায় পড়তে হয়নি ভেনিসবাসীকে।
পরিবেশবিদ এবং বিজ্ঞানীরা জানিয়েছে, আল্পসে এবার সাধারণের তুলনায় কম তুষারপাত হয়েছে। যা খরার শঙ্কা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। এছাড়া গ্রীষ্মের জরুরি অবস্থার পর আরও একটি খরার মধ্যে পড়তে যাচ্ছে ইতালি।
এদিকে পানির অভাবে পর্যটকবাহী নৌকার পাশাপাশি অসংখ্য ওয়াটার ট্যাক্সি ও ওয়াটার অ্যাম্বুলেন্স চলাচলেও বিঘ্ন ঘটছে। শহরটির জরুরি স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান পাওলো রোসি বলেন, ‘বেশির ভাগ জায়গায় আমরা অ্যাম্বুলেন্স সেবা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছি। হেঁটে রোগীদের চিকিৎসাকেন্দ্রে আনা-নেওয়া করতে হচ্ছে।’
সোমবার লেগাম্বিয়েন্টে পরিবেশবিষয়ক গ্রুপ এক বিবৃতিতে বলে, ইতালির দীর্ঘতম নদী পো, যা উত্তর-পশ্চিমে আল্পস থেকে অ্যাড্রিয়াটিক পর্যন্ত বয়ে চলেছে। বছরের এ সময়ে স্বাভাবিকের চেয়ে ৬১ শতাংশ কম জল রয়েছে সেখানে। অথচ পো নদীর ওপর নির্ভর করেই ইতালির এক তৃতীয়াংশ কৃষি পণ্য উৎপাদিত হয়।
এর আগে ৭০ বছরের মধ্যে গতবছর সবচেয়ে বেশি খরার সম্মুখীন হয় ইতালি। সেবছর জুলাইয়ে পো নদীর আশেপাশের অঞ্চলগুলোর জন্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়।