দেশে প্রথমবারের মতো পালিত হচ্ছে জাতীয় বীমা দিবস-২০২৩। বুধবার সকাল ১০টায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আনুষ্ঠানিকভাবে বীমা দিবসের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বক্তব্য শেষে জাতীয় বিমা দিবস- ২০২৩ এর উদ্বোধন করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জীবন-জীবিকার জন্য আমার বাবা (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান) ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে দায়িত্ব নেন। সেই কোম্পানির মালিক আমার বাবার বন্ধু ছিলেন। তিনি তাকে দায়িত্ব নিতে বলেন। সে কারণে তিনি ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে কাজ করতেন। তবে এটা বেশি দিন টেকেনি। কারণ ১৯৬২ সালে আবার বাবাকে গ্রেপ্তার করা হয়। বাবার ইন্স্যুরেন্সে চাকরি করার সময়টা আমাদের জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, কারণ, বাবা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে চাকরি করেছেন, গাড়ি পেয়েছেন, আমরাও বেশ ভালোভাবে আছি, এই সময়টা বাবা আমাদের সঙ্গে ছিলেন। ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির সঙ্গে আমাদের একটা আত্মার যোগাযোগ আছে।
শেখ হাসিনা বলেন, বীমা খাতকে গতিশীল করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বীমা আইন-নীতিমালা নিয়ে কাজ চলছে। আওয়ামী লীগের লক্ষ্য একটাই- বাংলাদেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নেওয়া। এ সময় তিনি আরো বলেন, দেশের স্বাধীনতার ইতিহাসের সঙ্গে বীমা কম্পানির যোগসূত্র রয়েছে। ইন্সুরেন্স কম্পানিতে বসেই ৬ দফা প্রণয়ন হয়েছিল। বীমা কোম্পানি মানে ইনস্যুরেন্সের কোম্পানির সঙ্গে আমাদের পরিবারের সঙ্গে একটা আত্মার সম্পর্ক রয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
অগ্নিঝরা মার্চ নিয়েও তার স্মৃতির কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশকে একটি সমৃদ্ধ ও উন্নত দেশে পরিণত করার ক্ষেত্রে বীমা খাতকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। বীমা কোম্পানিসমূহকে গ্রাহকের আস্থা অর্জনের লক্ষ্যে সেবার মান উন্নয়নসহ বীমার টাকা দ্রুত পরিশোধের ব্যবস্থা করতে হবে।
‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ দেশের মানুষকে পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত একটি স্বনির্ভর জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে আজীবন অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। তার স্বপ্ন ছিল অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের মাধ্যমে দেশের মানুষের কল্যাণ ও সমৃদ্ধি সুনিশ্চিত করা। সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের মাধ্যমে একটি উন্নত অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে আওয়ামী লীগ সরকার বদ্ধপরিকর।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এক সময় শুধু গার্মেন্টেসে হঠাৎ হঠাৎ আগুন লাগত। অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা নিয়ে আমরা এখন যথেষ্ট সচেতন। একবার আমার নজর পড়লো, কোনো কোনো গার্মেন্টেসে কিছু দিন পর পর আগুন লাগে, আর ইন্সুরেন্সের টাকা চায়। একবার খুব মোটা অংকের টাকা চাইলো। তখন আমি ইন্সুরেন্স কোম্পানিকে বললাম, আপনারা কোনো টাকা দেবেন না। আমি এটা তদন্ত করবো। তদন্তে দেখা গেলো- কারখানার এক মেয়ে শ্রমিককে দিয়ে যেখানে কিছুই নাই, সেখানে একটু আগুন দিয়ে মোটা অংকের টাকা দাবি করে বসে আছে। ওই নারীকে যখন ধরা হলো, সে স্বীকার করলো যে, তাকে দিয়ে এটা করানো হয়েছে।
তিনি বলেন, ঘন ঘন একটা জায়গায় আগুন লাগবে কেন? ইন্সুরেন্সের দাবিদার হয়, টাকা পায় এজন্য? আমি মনে করি, বিমা কর্তৃপক্ষ এবং কোম্পানিগুলোর এ ব্যাপারে সতর্ক থাকা দরকার। আসলেই কত ক্ষতি হলো- সেটার তদন্ত করতে হবে। যথাযথ তদন্ত না করে, কারো চাপে পড়ে টাকা দেবেন না।
শেখ হাসিনা বলেন, আগুন লাগলো একটা ফ্ল্যাটে, যেটার ইন্সুরেন্স ছিল না। পাশের ফ্ল্যাটেও ক্ষতি হলো, যেটা ইন্সুরেন্স আছে। কিন্তু সেটা দিয়ে মোটা অংকের টাকা বের করে নিয়ে গেলো। একটা ফ্ল্যাটে ৪০ কোটি টাকার কী সম্পদ থাকতে পারে যে, ইন্সুরেন্স কোম্পানিকে দিতে হবে? এই টাকাটা কীভাবে গেলো? সাধারণ বিমা থেকে গেছে? অথচ যার ঘরটা বেশি পুড়লো, তার বিমাও নাই, টাকাও পেলো না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি বা এমপি মন্ত্রী অনেকে যাবে। তদবির করবে। কিন্তু আপনাকে দেখতে হবে তার ক্ষতি কী পরিমাণ! যারা তদন্ত করতে আসে তারাও নিশ্চয় ভাগ পায়! না হলে ক্ষতি নিরূপণ ছাড়াই প্রতিবেদন কীভাবে দেয়? ইন্সুরেন্স কোম্পানির বদনাম হোক, আমি চাই না। কারণ আমিও এই পরিবারের একজন।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ, আইডিআরএ’র চেয়ারম্যান জয়নুল বারী এবং বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএ) সভাপতি শেখ কবির হোসেন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে বিমা খাতের ওপর একটি ভিডিও প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
১৯৬০ সালের ১ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তৎকালীন আলফা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে কাজ শুরু করেন। তারপর থেকেই তাঁর সরকার প্রতি বছর ১ মার্চকে জাতীয় বিমা দিবস হিসেবে পালন করে আসছে।
স্বাধীনতার মহান স্থপতি, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মরণে সরকার গত বছর ‘জাতীয় বিমা দিবস’কে ‘বি’ ক্যাটাগরি থেকে ‘এ’ ক্যাটাগরিতে উন্নীত করে।