MYTV Live

মাদারীপুরের শিবচরে এক্সপ্রেসওয়েতে বাস দুর্ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন জমা

মাদারীপুরের শিবচরে এক্সপ্রেসওয়েতে বাস খাদে পড়ে ১৯ জন নিহতের ঘটনায় করা তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুনের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। সেখানে ওই দুর্ঘটনার পেছনে কয়েকটি কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। পাশাপাশি দুর্ঘটনা বন্ধে ১৪টি সুপারিশ করা হয়েছে।

বুধবার দুপুরে জেলা প্রশাসকের কাছেএ প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তদন্ত কমিটির প্রধান মাদারীপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পল্লব কুমার হাজরা।

তদন্ত প্রতিবেদনে জানানো হয়, ইমাদ পরিবহনের বাসটির ফিটনেস না থাকা, চালকের ভারী যান চালানোর লাইসেন্স না থাকা, বাসের বেপরোয়া গতি ও বৃষ্টিতে মহাসড়ক পিচ্ছিল থাকাকে দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে।

পল্লব কুমার জানান, দুর্ঘটনার পরের দিন থেকে তদন্ত কাজ শুরু হয়। গতকাল মঙ্গলবার রাতে তা শেষ হয়। এই সময়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন, স্থানীয়দের সাক্ষাতকার গ্রহণ, বাসটির নিহত চালক, হেলপার ও সুপারভাইজারের পরিবারের সদস্য ও বাসটির মালিকপক্ষের সাক্ষাতকারের ভিত্তিতে তদন্ত প্রতিবেদনটি তৈরী করা হয়েছে।

তিনি বলেন, হাইওয়ে এক্সপ্রেসওয়েতে গাড়ি খুব দ্রুতগতিতে চলাচল করে। সড়কে দুর্ঘটনা বন্ধে দ্রুতগতি সম্পন্ন গাড়ির যাত্রীদের সিটবেল্ট পরিধান নিশ্চিত, গতিসীমা নিয়ন্ত্রণ করতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নজরদারী, প্রতিটি গাড়িতে এবং মহাসড়কে জিপিএস ট্রাকার রাখা, সিসি ক্যামেরা স্থাপন ও অনলাইনে মনিটরিং করার ব্যবস্থা রাখাসহ ১৪টি সুপারিশ করে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে।

সুপারিশে বলা হয়েছে, চালক ও সংশ্লিষ্ট সবার লাইসেন্স এবং একটি গাড়ির সব বৈধ কাগজপত্র নিশ্চিত করে মহাসড়কে গাড়ি পরিচালনা নিশ্চিত করা। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বাস কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি।

এক্সপ্রেসওয়েতে চলাচলকারী দ্রুতগতিসম্পন্ন গাড়ির যাত্রীদের সিটবেল্ট পরিধান নিশ্চিতে উদ্যোগ নেওয়া।

গাড়ির ইন্টেরিয়র নরম বস্তু দিয়ে তৈরি করা এবং এক্সপ্রেসওয়ের উভয় পাশে গার্ড রেইল স্থাপন করা।

ভবিষ্যতে নির্মিতব্য এক্সপ্রেসওয়েতে একমুখী রাস্তায় কমপক্ষে তিন লেনের ব্যবস্থা রাখা জরুরি- অর্থাৎ উভয় মুখে কমপক্ষে ছয় লেনের ব্যবস্থা করা।

লম্বা সরলরৈখিক রাস্তায় হালকা রাম্বল স্ট্রিপের ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে।

মহাসড়কে চলাচলকারী গাড়ির সব হালনাগাদ তথ্য একটি সমন্বিত ডাটাবেইজে রেখে তাতে সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরসমূহের অবাধ প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা।

এক্সপ্রেসওয়েতে চলাচলকারী গাড়ির গতিসীমা নিয়ন্ত্রণে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কার্যক্রম বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে পর্যাপ্ত জনবল ও টহল গাড়িসহ আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার নিশ্চিত করা।

বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বাসের নিজস্ব চেকপয়েন্টে যাত্রীসংখ্যা চেক করার পাশাপাশি গাড়ির আগমনের সময় সংরক্ষণ ও তা সংশ্লিষ্ট দপ্তরসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করা।

দুর্ঘটনায় আঘাতের মাত্রা কম থাকলেও দ্রুত সেবা না পাওয়ায় মৃত্যু ও স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকায় এক্সপ্রেসওয়ের নির্দিষ্ট দূরত্বে ট্রমা সেন্টার ও হাসপাতালের ব্যবস্থা রাখা।

যাত্রীদের প্রয়োজনীয় তথ্য সংশ্লিষ্ট পরিবহনের তত্ত্বাবধানে সংরক্ষণ করা আবশ্যক, যাতে করে আহত ও নিহত যাত্রীদের চিহ্নিত করা সহজতর হয়।

দুর্ঘটনা কমানো এবং দুর্ঘটনা-পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ সহজতর করার লক্ষ্যে প্রতিটি গাড়িতে এবং মহাসড়কে জিপিএস ট্র্যাকার রাখা, সিসি ক্যামেরা স্থাপন ও অনলাইনে তা মনিটরিং করার ব্যবস্থা রাখা।

দিনের নির্দিষ্ট সময়ে, বিশেষ করে রাতে, ভোরে ও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় গাড়ির গতিসীমা অপেক্ষাকৃত কমিয়ে গাড়ির চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা।

এক্সপ্রেসওয়ের প্রতিটি গাড়ির গতিবেগ ডিজিটাল ডিসপ্লেতে প্রদর্শন করে চালকদের সচেতন করার উদ্যোগ নেওয়া।

উল্লেখ্য, গত ১৯ মার্চ সকাল সাড়ে ৬টার দিকে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার ইমাদ পরিবহনের একটি বাস দুর্ঘটনায় ২০ জন যাত্রী নিহত হন। এই ঘটনায় জেলা প্রশাসন চার সদদ্যের উপজেলার কুতুবপুরে খুলনা থেকে ঢাকাগামী একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দুই কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়।

Related Articles

Stay Connected

22,878FansLike
3,804FollowersFollow
20,900SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles