জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেশে কোনো মানুষ ঠিকানাবিহীন থাকবে না বলে ফের দৃঢ়প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বুধবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর আওতায় চতুর্থ পর্যায়ে ৩৯ হাজার ৩৬৫টি গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবারকে ঘর হস্তান্তর অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তিনি আশ্রয়ণ প্রকল্পে যুক্ত হন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির জনক আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। তিনিই ভূমিহীন ও গৃহহীনদের আশ্রয় দিতে গুচ্ছগ্রাম করেন। দেশে কোনো ভূমিহীন ও গৃহহীন থাকবে না, আমরা সে লক্ষ্যেই কাজ করছি। আমি খুবই আনন্দিত চতুর্থ পর্যায়ে ৩৯ হাজার ৩৬৫ পরিবারকে ভূমি ও গৃহ দিতে পারছি। দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটাতে পারা অনেক আনন্দের।
সরকার প্রধান বলেন, ‘১৯৯১ সালে ঘূর্ণিঝড়ের সময় বিএনপি সরকার কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। যেহেতু আমাদের সংগঠন সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে আছে, তাই আমি প্রথমে ফোন পাই। ঘূর্ণিঝড়ে চট্টগ্রাম, বিশেষ করে দক্ষিণ উপকূলীয় অঞ্চল পুরোপুরি তছনছ হয়ে যায়। আওয়ামী লীগই প্রথম ছুটে গিয়েছিল মানুষের পাশে।’
তিনি বলেন, ‘সেই ঘূর্ণিঝড়ে লাখ লাখ মানুষ মারা যায়, আমরা নিজের চোখে দেখেছি। আমরা ত্রাণ বিতরণ করতে গিয়ে দেখি মানুষ ও পশু-পাখির লাশ একসঙ্গে ভাসছে। আমরা সেখানে বিভিন্ন অঞ্চলে ঘুরে ঘুরে মানুষের পাশে দাঁড়াই, তাদের সাহায্য করি এবং মরদেহ সৎকারের ব্যবস্থা করি।’
তখনকার তিন বাহিনীর প্রধানদের বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তখনকার সংসদে আমরা বিষয়টা তুলে ধরলাম। তখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন খালেদা জিয়া। তিনি তখন ঘুমিয়ে ছিলেন, জানেন না কিছু। তখনকার তিন বাহিনীর প্রধান গলফ খেলছিলেন। ঘূর্ণিঝড়ে যে এত বড় ক্ষতি হয়ে গেছে, তা-ও তারা জানতেন না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিমানবাহিনীর, নৌবাহিনীর সবকিছু চট্টগ্রামে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। সারা বাংলাদেশ তছনছ। একেবারে চট্টগ্রামসহ পুরো অঞ্চল। রাস্তাঘাট বন্ধ ছিল। তারপরও আমরা ছুটে গিয়েছিলাম, মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি। সে সময় অনেক মানুষ উদ্বাস্তু হয়ে কক্সবাজারে বস্তিতে থাকতো। আমরা তাদের পুনর্বাসন করেছি।’
বুধবার সাত জেলার (মাদারীপুর, গাজীপুর, নরসিংদী, রাজশাহী, জয়পুরহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও চুয়াডাঙ্গা) সব উপজেলাসহ সারাদেশের ১৫৯ উপজেলাকে ভূমিহীন-গৃহহীন মুক্ত ঘোষণা করেন সরকারপ্রধান। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে চতুর্থ দফায় এসব ঘর হস্তান্তর করেন তিনি।
এর আগে আরও দুই জেলার (পঞ্চগড় ও মাগুরা) সব উপজেলাসহ মোট ৫২ উপজেলাকে ভূমিহীন-গৃহহীন মুক্ত ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সেই হিসেবে দেশে এখন সর্বমোট ৯টি জেলা এবং ২১১টি উপজেলাকে ভূমিহীন ও গৃহহীন মুক্ত ঘোষণা করা হলো।
ভিডিও কনফারেন্স শেষে ভার্চুয়ালি ৩টি উপজেলায় উপকারভোগীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন প্রধানমন্ত্রী। উপজেলাগুলো হলো- গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের নয়াপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্প; সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলার নন্দিগাঁও ইউনিয়নের নওয়াগাঁও আশ্রয়ণ প্রকল্প এবং বরিশাল জেলার বানারিপাড়া উপজেলার বানারিপাড়া পৌরসভার উত্তরপাড় আশ্রয়ণ প্রকল্প।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া জানান, মুজিববর্ষ উপলক্ষে ২০২০ সাল থেকে এ বছর মার্চ পর্যন্ত সারা দেশে ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবার পুনর্বাসনের লক্ষ্যে দুই লাখ ৩৭ হাজার ৮৩১টি ঘর বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। এর ফলে সারা দেশে উপকারভোগীর সংখ্যা প্রায় ১৩ লাখ জন।
মুজিববর্ষ উপলক্ষে সরকারের হালনাগাদকৃত তথ্য অনুযায়ী, ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারের সংখ্যা দুই লাখ ৫৯ হাজার ২৩৭টি। এর মধ্যে প্রথম পর্যায়ে ২০২১ সালের ২৩ জানুয়ারি ৬৩ হাজার ৯৯৯টি, দ্বিতীয় পর্যায়ে ২০২১ সালের ২০ জুন ৫৩ হাজার ৩৩০টি, তৃতীয় পর্যায়ের প্রথম ধাপে ২০২২ সালের ২৬ এপ্রিল ৩২ হাজার ৯০৪টি, তৃতীয় পর্যায়ের দ্বিতীয় ধাপে ২০২২ সালের ২১ জুলাই ২৬ হাজার ২২৯টি ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে।
চতুর্থ পর্যায়ে ৩৯ হাজার ৬৬৫টি ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে। এতে করে চিহ্নিত ২ লাখ ৫৯ হাজার ২৩৭টি পরিবারের মধ্যে দুই লাখ ১৫ হাজার ৮২৭টি পরিবারকে ঘর হস্তান্তর সম্পন্ন হলো।
অবশিষ্ট ৪৩ হাজার ৪১০টি পরিবারের মধ্যে ২২ হাজার ১০টি পরিবার চিহ্নিত করে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে দুই শতাংশ জমিসহ একক গৃহ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বাকি ২১ হাজার ৪০৪টি পরিবার চিহ্নিত করে তাদের পুনর্বাসনের মাধ্যমে ‘দেশের কোনও মানুষ ভূমিহীন-গৃহহীন থাকবে না’ বলে দেওয়া প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হবে।