দুই মেয়াদে টানা ১০ বছর রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন শেষে বঙ্গভবন থেকে আনুষ্ঠানিক বিদায় নিলেন মো. আবদুল হামিদ।
সোমবার দুপুরে বঙ্গভবনের নানা আনুষ্ঠানিকতা শেষে নিকুঞ্জের প্রেসিডেন্ট লজের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন আবদুল হামিদ। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী রাশিদা খানম।
এক বর্ণাঢ্য মোটর শোভাযাত্রার মাধ্যমে বঙ্গভবন থেকে আবদুল হামিদকে বিদায় জানানো হয়। এর আগে ক্রেডেনশিয়াল গ্রাউন্ডে প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্টের (পিজিআর) একটি সুসজ্জিত অশ্বারোহী দল বিদায়ী রাষ্ট্রপতিকে ‘গার্ড অব অনার’ প্রদান করে।
এ সময় বঙ্গভবনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বঙ্গভবন গেটে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ান। মাঝখান দিয়ে খোলা জিপে ছিলেন সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে তাঁকে বিদায় জানানো হয়। সেখান থেকে তাঁকে মোটর শোভাযাত্রায় নিকুঞ্জের বাসভবনে নিয়ে যাওয়া হয়।
বিদায় মুহূর্তে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন আবদুল হামিদ। তিনি বলেন, আপনারা শুনেছেন, অনেক সময় বলেছি, আমি বন্দি জীবনে আছি। এর থেকে আমি মুক্তি পাচ্ছি। এখন সাধারণ নাগরিক হিসেবে স্বাচ্ছন্দ্যে চলাফেরা করতে পারবো। এটাই আমার সবচেয়ে বড় আনন্দ।
মো. আবদুল হামিদ বলেন, ‘আর প্রত্যক্ষ রাজনীতি নয়; মানুষের সম্মানহানি হয় এমন কিছু করব না।’
রাজনীতিবিদদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘প্রতিটি মানুষকে ভালোবেসে রাজনীতি করতে পারলেই রাজনীতি পরিচ্ছন্ন থাকবে।’
এসময় বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে সদ্য বিদায়ী রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘দেখুন আমি সারাজীবন মানুষের জন্য রাজনীতি করেছি। মানুষের বাইরে আমার কোনো চিন্তা ছিল না এবং কোনোদিন থাকবেও না। সব রাজনীতিবিদদের এই কথাই বলব যে, এদেশের মাটি ও মানুষকে ভালোবেসে তারা যেন রাজনীতি করেন। তাহলে রাজনীতি আরও অনেক সুন্দর হবে। দলমত নির্বিশেষে সবার কাছে এই কথা বলব।’
বাংলাদেশের ৫২ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো রাষ্ট্রপতির বিদায়ের দিনে এমন সংবর্ধনাপূর্ণ আয়োজন হয়েছে। এর আগে কোনো রাষ্ট্রপতিকে নিজেদের আয়োজনে বিদায় জানানোর সুযোগ হয়নি বঙ্গভবনের। যে কারণে এ বিদায়টি উৎসবে পরিণত হয়েছে।
মো. আবদুল হামিদ পাঁচ বছর আগে ২০১৮ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে দেশের ২১তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন।
এর আগে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় ২০১৩ সালের ১৪ মার্চ প্রথমবারের মতো রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নেন তিনি। জিল্লুর রহমানের মৃত্যুর পর ২০১৩ সালের ২০ মার্চ তিনি ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হন।
পরে আবদুল হামিদ ২০১৩ সালের ২২ এপ্রিল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন।