জুলাই-আগস্টে শহীদ হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের অন্তত একজন যেন সরকারি চাকরি পান, সে দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।রবিবার (২৭ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে জামায়াতের ঢাকা মহানগর উত্তর আয়োজিত শহীদ পরিবারের গর্বিত সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময়সভায় তিনি এ দাবি জানান। সভার পর প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনীর অনুষ্ঠান হয়।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘মূলত ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর ফ্যাসিবাদের দোসর ও মাস্টারমাইন্ডদের দানবীয় হত্যাযজ্ঞে বাংলাদেশ পথ হারিয়েছিল।
সেদিন দেশপ্রেমিক মানুষকে প্রকাশ্যে রাজপথে পিটিয়ে হত্যার পর লাশের ওপর দানবীয় নৃত্য করা হয়েছিল। তাদের এই নারকীয়তায় গোটা বিশ্ববিবেকই স্তম্ভিত হয়ে পড়েছিল। এরা মানুষ ছিল না, বরং এরা ছিল বর্বর পশু। অন্ধ ক্ষমতালিপ্সা থেকেই তারা এ ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধে লিপ্ত হয়েছিল।জামায়াতের আমির বলেন, ‘এই নির্মমতার ধারাবাহিকতা ২০২৪ সালের ৫ অক্টোবর পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। মূলত ছাত্র-জনতার ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমেই এক নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি; ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে।’ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদদের গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন জামায়াতের আমির। পঙ্গুত্ববরণকারী আহতদের প্রতি গভীর সমবেদনাও জানান।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘আগস্ট বিপ্লবের শহীদরা জাতীয় বীর। দেশ ও জাতির জন্য তাদের এই আত্মত্যাগের কথা কোনোভাবেই মুছে ফেলা যাবে না। তাই রাষ্ট্রীয়ভাবে তাদের জন্য যথাযথ সম্মানের ব্যবস্থা করতে হবে। ২৮ অক্টোবর থেকে শুরু করে ৫ আগস্টের বিপ্লব পর্যন্ত সব শহীদের অবদানের কথা জাতীয় পাঠ্যপুস্তকের পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। নতুন প্রজন্মকে জানাতে হবে তাদের অবদান ও বীরত্বগাথা।দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব সুরক্ষার জন্য এর কোনো বিকল্প নেই। তাদের পরিবারকেও করতে হবে যথাযথ মূল্যায়ন। প্রতিটি শহীদ পরিবারের কমপক্ষে একজনের জন্য সরকারি চাকরির ব্যবস্থা করে রাষ্ট্রকে শহীদ পরিবারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে হবে। সব ক্ষেত্রেই তাদেরকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। তাহলে তারা আগামী দিনে দেশ ও জাতির জন্য যেকোনো ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকবে।’জামায়াতের পক্ষ থেকে শহীদ পরিবারের জন্য সম্ভাব্য সব কিছু করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমান।
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে আগস্ট বিপ্লবের পর শহীদ পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। আমরা তাদের প্রতি দয়া করিনি, বরং তারা দয়া করে আমাদের সময় দিয়েছেন। বিপ্লবীদের অনেকেই পঙ্গুত্ব ও অন্ধত্ব বরণ করেছেন। ফ্যাসিবাদীরা হত্যা, সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য চালিয়ে ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করার অপচেষ্টা করেছে। কিন্তু ক্ষমতা কখনো চিরস্থায়ী নয়, বরং তা আল্লাহর হাতে। আল্লাহ জালিমদের অবকাশ দেন, কিন্তু ছেড়ে দেন না। সে ধারাবাহিকতায় আওয়ামী ফ্যাসিবাদীদের অপমানজনকভাবে পতন হয়েছে। এদের বিচার আল্লাহ তায়ালা আখিরাতে করবেন। দুনিয়াতেও তাদের ছেড়ে দেওয়া যাবে না।’কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য এবং ঢাকা মহানগর উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিমের পরিচালনায় সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন সংগঠনের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ অব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দীন আহমদ, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুল প্রমুখ।