ঢাকা , শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪ , ১৪ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কাজ শুরু ফ্রিজ, এসি ও টিভিতে সেরা ব্র্যান্ড হওয়ার গৌরব অর্জন করলো ওয়ালটন ফেনী নদীতে বালু উত্তোলন বন্ধে টাস্কফোর্সের অভিযান গাছের সঙ্গে শিকল পরা অবস্থায় ঝুলছিল কৃষকের মরদেহ ছাত্রলীগ নেতা সজল কারাগারে, আদালত চত্বরে ডিম নিক্ষেপ অজ্ঞাত কারণে ইতালির নারী সাংবাদিক গ্রেপ্তার সৌদিতে এক বছরে বৃষ্টিপাত বেড়েছে ৫৩ শতাংশ মানুষের বিলুপ্তি ঘটাতে পারে এআই ‘৫ তারিখের গণঅভ্যুত্থান না হলে আমি ওসি হতে পারতাম না’ সাদপন্থি নেতা জিয়া বিন কাসেম গ্রেপ্তার ৫ মাসে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ৩ বিলিয়ন ডলার: গভর্নর সংস্কার করবে নির্বাচিত সরকার, ১৩ বছর পর দেশে ফিরে কায়কোবাদ আফগান-পাকিস্তান সীমান্তে সংঘর্ষ, ১৯ পাক সেনা নিহত স্বাগতাকে লিগ্যাল নোটিশ! গাজায় চিকিৎসা ব্যবস্থার ওপর হামলা ফিলিস্তিনিদের জন্য মৃত্যুদণ্ডের সামিল: ডব্লিউএইচও ইউপি সদস্যকে গণধর্ষণের পর মুখে বিষ ঢেলে হত্যা ইসরায়েলি হামলায় বন্ধ উত্তর গাজার শেষ হাসপাতালটিও দখলকারীরা যত প্রভাবশালীই হোক, ব্যবস্থা নেওয়া হবে : রিজওয়ানা হাসান মরক্কোতে নৌকাডুবি, ৬৯ জনের মৃত্যু সরকার একক তথ্যভাণ্ডার তৈরির উদ্যোগ নিচ্ছে : অর্থ উপদেষ্টা

কুষ্টিয়ার আশ্রমে লালন দর্শনে ‘খেলাফত’ পেলেন ফরাসি নারী দেবোরাহ

  • আপলোড সময় : ২৭-১২-২০২৪ ১১:৩০:৫১ পূর্বাহ্ন
  • আপডেট সময় : ২৭-১২-২০২৪ ১১:৩০:৫১ পূর্বাহ্ন
কুষ্টিয়ার আশ্রমে লালন দর্শনে ‘খেলাফত’ পেলেন ফরাসি নারী দেবোরাহ
দীর্ঘ ৮ বছরের সাধনায় লালন দর্শনের দীক্ষায় উপযুক্ত হওয়ায় ফকির গুরু নহির শাহর নির্দেশে খেলাফত গ্রহণ করেছেন দেবোরাহ জান্নাত ও তার স্বামী রাজন ফকির।তাদের পরিভাষায়, ইহজাগতিক লোভ, লালসা, মায়া-মমতা ও মোহ ত্যাগ করে জীবিত থেকেই গ্রহণ করলেন মরণের স্বাদ। লালন দর্শনের দীক্ষায় অসংখ্য সাধু-ফকির খেলকা বা খেলাফত গ্রহণ করলেও দেশের ইতিহাসে দেবোরাহ জান্নাতই প্রথম, যিনি বিদেশি নাগরিক হিসেবে খেলকা বা খেলাফতপ্রাপ্ত হলেন।তাদের খেলাফত গ্রহণ উপলক্ষে কুষ্টিয়া দৌলতপুর উপজেলার প্রাগপুর দীঘিরপাড় এলাকায় হেম আশ্রমে সাধুসঙ্গ অনুষ্ঠানে আগমন ঘটেছিল হাজারো সাধুগুরু বাউল এবং লালন অনুসারীদের। দেশের নানা প্রান্ত থেকে লালন ভক্ত, বাউল, সাধুগণ হেম আশ্রমে জড়ো হন। 

মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় নিজেদের দীনহীন করে শুধুমাত্র সাদা কাফনের কয়েক টুকরো কাপড় পরিধান করে দেবোরাহ ও তার স্বামী রাজন হেম আশ্রমে অনুষ্ঠানিকভাবে খেলাফত গ্রহণ করেন। এ সময় উপস্থিত পরিবারের সদস্য, বাউল সাধু ও দর্শকদের কান্নায় সেখানকার পরিবেশ ভারী হয়ে উঠে। চোখ বেঁধে সাতপাক ঘুরিয়ে দীনহীন করে তাদের গুরু দীক্ষায় দীক্ষিত করা হয়। পরানো হয় শুভ্র ভূষণ। দেবোরাহ জান্নাত তার অভিব্যক্তিতে বলেন, “দীর্ঘদিনের লালন দর্শনের জ্ঞান সাধনায় চলার পথে কারো কাছে অপরাধ করে থাকলে, কাউকে কষ্ট দিয়ে থাকলে সকলে দয়া করে নিজ গুণে ক্ষমা করে দেওয়ার অনুরোধ করছি।বাংলাদেশে আছি মনে করবেন আমি আপনাদের। আমার আর কোনো ঠিকানা নাই, কোনো ভবিষ্যত নাই।” অনুষ্ঠানে আগত সাধু হৃদয় ফকির বলেন, “সাধুগুরু ফকির নহির শাহ্ এর সান্নিধ্যে দীর্ঘদিনের লালন দর্শন সাধনায় দেবোরাহ জান্নাত ও তার স্বামী রাজন খেলাফত-খিলকা অর্জন করলেন। ইহজাগতিক লোভ, লালসা, মায়া-মমতা ও মোহ ত্যাগ করে দু’জনের খেলাফত প্রাপ্তির মাধ্যমে লালন দর্শনের আরও বিস্তৃতি ঘটবে।”

খিলাফত গ্রহণের বিষয়ে গুরু ফকির নহির শাহ্ বলেন, “লালন সাধনায় একজন ভক্তকে চারটি স্তর পার করতে হয়। সিদ্ধ হওয়া তথা পরিপূর্ণ আদর্শের অধিকারী হলেই কেবল একজন ভক্তকে খেলাফত প্রদান করা হয়। যারা খেলকা গ্রহণ করেন তাদের সকল প্রকার অনৈতিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত না হওয়ার জন্য শপথ পাঠ করানো হয়।”অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিশিষ্ট লালন গবেষক সাইমন জাকারিয়া বলেন, “লালন দর্শনের করণ-কারণ সাধনার যে দীক্ষাগুলো আছে তা তিনি সুন্দরভাবে অর্জন করতে পেরেছেন বলেই সাধুগুরু তাকে খেলাফত দিয়েছেন। দেশের ইতিহাসে বিদেশি হিসেবে তিনিই প্রথম, যিনি লালনপন্থায় দীক্ষা নিয়ে খেলাফত অর্জন করেছেন।”ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের মেয়ে দেবোরাহ কিউকারম্যান ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশে আসেন। তার একমাত্র লক্ষ্য ফকির লালন শাহের আখড়া বাড়ি। লালনের দর্শনে মুগ্ধ দেবোরাহ আর বাড়ি ফেরেননি। লালন দর্শনে দীক্ষা নেওয়ার জন্য শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন সাধুগুরু ফকির নহির শাহ আশ্রমে। জায়গাটি ‘হেম আশ্রম’ নামেই পরিচিত। এখানে ঘরও বেঁধেছেন দেবোরাহ। ২০১৭ সালে লালনের তিরোধান দিবসে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার রাজন ফকিরকে বিয়ে করেন দেবোরাহ। দেবোরাহ কিউকারম্যান হয়েছেন দেবোরাহ জান্নাত। সাধুসঙ্গই তার দৈনন্দিন রুটিন। মাঝে মধ্যে মাতৃভূমি ও পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে প্যারিসে যান দেবোরাহ। 

প্যারিসের ফ্রান্সিস ও লিন্ডা কুকিয়েরমানের মেয়ে তিনি। দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে সবার বড় দেবোরাহ। ২০০৭ সালে লন্ডন কিংস্টোন ইউনিভার্সিটি থেকে নৃতত্ত্বে স্নাতক পাশ করেন তিনি। দেশে থাকাকালীন ফরাসি থেকে ইংরেজিতে অনুবাদের কাজও করতেন। দর্শনে এমএ করে ফ্রান্সে একসময় যোগের শিক্ষকতাও করেছেন তিনি। সাধুসঙ্গ নিয়ে ব্যক্তিগত কৌতুহল ও পিএইচডি গবেষণার জন্য তিনি বাংলাদেশে এসেছিলেন। বিদেশি এই নারীর সাবলীল বাংলায় কথা বলা ও লেখায় মুগ্ধ হবেন যে কেউ। বাঙালি নারীদের মতো চলাফেরাও রপ্ত করেছেন। জানা যায়, পঁয়ত্রিশোর্ধ্ব দেবোরাহ একসময় সিনেমাতে কাজ করতেন। যোগ সাধনার প্রতি একটা টান ছিল তার। একসময় যোগের প্রতি তার টান-টা এতই বেশি হয়ে যায় তখন চাকরি ত্যাগ করে যোগেই মনোযোগী হয়েছিলেন। ভারতের একটা আশ্রমে ছিলেন কিছুদিন, যেখানে ধ্যান সাধনা শেখানো হয়। গবেষণা করতে ও নিজের সাধনায় আরও গভীরে যেতে পথ খুঁজতে খুঁজতে চলে আসেন প্রাগপুরের এই দীঘিরপাড়ে হেমাশ্রমে। 

কমেন্ট বক্স