বর্তমানে দেশে চালের ঘাটতি রয়েছে আট লাখ টন। এই ঘাটতি মেটাতে ও দাম সহনীয় রাখতে চালের আমদানি শুল্ক পুরোপুরি তুলে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ লক্ষ্যে ট্যারিফ কমিশন শুল্ক প্রত্যাহারের একটি প্রস্তাবনা তৈরি করেছে। এই প্রস্তাবনাটি এখন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, এনবিআরকে দেওয়া হয়েছে বিবেচনার জন্য।সরকার চালের শুল্ক কমিয়ে বাজার সহনীয় রাখতে চাইলেও উল্টো কথা বলছেন ব্যবসায়ীরা। তাঁরা বলছেন, বেসরকারি পর্যায়ে চাল আমদানিতে শুল্ক কমালেও এতে বাজারে খুব একটা প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন না তাঁরা।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও এনবিআর সূত্রে জানা যায়, দেশে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গত ২০ অক্টোবর চাল আমদানিতে শুল্ক-কর কমিয়ে দেয় সরকার। ৬২.৫ শতাংশ শুল্ক থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়।
এরপর বিশ্ববাজারে চালের দাম আরো বাড়লে আমদানি শুল্ক পুরোপুরি প্রত্যাহারের সুপারিশ করে ট্যারিফ কমিশন।বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে আরো জানা গেছে, গতকাল মঙ্গলবার চালের আন্তর্জাতিক বাজার বিশ্লেষণ করে আমদানি বাড়াতে শূন্য শুল্ক করার জন্য এনবিআরকে চিঠি দিয়েছে বিটিসি। বিটিসির বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, সরকার চালের সম্ভাব্য ঘাটতি বিবেচনায় গত ২০ অক্টোবর শুল্ক-কর ২৫ শতাংশে নামিয়ে আনে। তবে ওই হ্রাসকৃত শুল্কে থাইল্যান্ড থেকে চাল আমদানি করলে প্রতি কেজির দাম দাঁড়াবে ৯২-৯৫ টাকা।আর পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে আমদানি করলে স্থানীয় বাজারে দাম দাঁড়াবে ৭৫-৭৮ টাকা। এই দামে চাল আমদানি করলে তা স্থানীয় বাজারের দামের চেয়েও বেশি পড়বে। এ অবস্থায় আমদানি আরো সহজ করতে এবং আমদানিকারকদের উৎসাহিত করতে চালের শুল্ক শতভাগ তুলে নেওয়া জরুরি বলে মনে করছে বিটিসি।ওই চিঠিতে আরো বলা হয়েছে, সম্প্রতি বন্যায় চালের উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় স্থানীয় বাজারে সরবরাহ বৃদ্ধি ও মূল্য স্থিতিশীল করতে সুনির্দিষ্ট মেয়াদে চাল আমদানিতে বর্তমানে প্রযোজ্য শুল্ক প্রত্যাহার দরকার।
কৃষি বিভাগের তথ্য দিয়ে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগস্ট-অক্টোবরে অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে দুই দফা বন্যায় মোট আট লাখ ৩৯ হাজার টন চালের উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে।এর প্রভাবে দেশের বাজারে চালের দাম বেড়ে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় সরু চাল ৯.৯ শতাংশ, মাঝারি সরু চাল ৯.৩৫ শতাংশ এবং মোটা চাল ৭ শতাংশ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।চিঠিতে বলা হয়েছে, প্রতি কেজি চালের দাম গত এক বছরে ৭-৯ শতাংশ বেড়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে অতিবৃষ্টি আর উজানের ঢলের কারণে গত ১৬ আগস্ট থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত দুই মাসে আট লাখ ৩৯ হাজার টন চালের উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে।ভারত থেকে চাল আমদানি করলে প্রতি কেজি চালের দাম পড়বে ৭৫-৭৮ টাকা। তবে শুল্ক ও অন্য খরচসহ স্থানীয় বাজারে চালের দাম পড়বে ৯২-৯৫ টাকা।
এ ছাড়া এফওবি (পণ্য জাহাজীকরণ পর্যন্ত) মূল্যের সঙ্গে ২৫ শতাংশ শুল্ক, পরিবহন খরচ, বীমা, আমদানিকারক, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীর মুনাফা, স্থানীয় পরিবহন খরচ, আর্থিক ব্যয় ও অন্য খরচ যোগ করা হলে আমদানীকৃত চালের যে মূল্য দাঁড়াবে; স্থানীয় মূল্যের অপেক্ষা অনেক বেশি হবে।এই পরিপ্রেক্ষিতে ট্যারিফ কমিশনের সুপারিশ হলো; স্থানীয় বাজারে চালের সরবরাহ এবং মূল্য স্থিতিশীল করার জন্য সুনির্দিষ্ট মেয়াদে চাল আমদানিতে শুল্ক সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহার করা।