নামাজ ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত এবং মুমিনের জীবনের আবশ্যিক অংশ। এটি আল্লাহ ও বান্দার মধ্যে সরাসরি সংযোগ স্থাপনের মাধ্যম, যা দৈনিক পাঁচবার পালন করা ফরজ। নামাজ শুধু একটি আনুষ্ঠানিক ইবাদত নয়; এটি আত্মশুদ্ধি, আল্লাহর স্মরণ ও জীবনের সঠিক দিকনির্দেশনা লাভের এক অনন্য পন্থা।নামাজ আমাদের অন্তরের প্রশান্তি, চিন্তার স্থিরতা এবং কর্মে বরকত আনে। এটি মুসলিম জীবনে শৃঙ্খলা, ধৈর্য ও আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের শিক্ষা দেয়। একজন মুমিনের জন্য নামাজ হলো দুনিয়া ও আখিরাতের সফলতার চাবিকাঠি।
আল্লাহ তাআলা নবীজিকে দিনরাতে উম্মতের জন্য পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করে দিলেন। নবীজি আল্লাহর পক্ষ থেকে নামাজের এ হাদিয়া নিয়ে ফেরত আসছিলেন; এর মধ্যে দেখা হযরত মূসা আ.-এর সাথে। হযরত মূসা আ. জিজ্ঞাসা করলেন, আল্লাহ আপনার উম্মতের জন্য কী দিয়েছেন? নবীজি বললেন, পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজ। হযরত মূসা বললেন, আপনার উম্মত রাত দিনে পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে পারবে না। আপনার আগে আমি উম্মতদের মধ্যে ছিলাম দুনিয়ায়। আপনি আল্লাহর কাছে গিয়ে নামাজ আরও কমিয়ে আনেন। নবীজি সে মতে আল্লাহর কাছে গিয়ে কম করে দেওয়ার দরখাস্ত করলেন। আল্লাহ পাঁচ ওয়াক্ত কমিয়ে দিলেন। এভাবে কয়েকবার আল্লাহর কাছে ফিরে গিয়ে দরখাস্ত করতে করতে উম্মতের জন্য পাঁচ ওয়াক্তে কমিয়ে আনেন নবীজি। শেষবার আল্লাহ বলেন, মুহাম্মদ! এই হলো দিন-রাতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ।
প্রত্যেক নামাজের বিনিময়ে দশ নামাজের সাওয়াব। এভাবে বান্দা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজের সওয়াব পাবে। কেউ কোনো ভালো কাজের ইচ্ছা করবে কিন্তু করতে পারবে না, তার জন্যও নেকি রয়েছে; এক নেকি। আর যদি ভালো কাজটি করে তাহলে তার জন্য দশ নেকী। আর কেউ কোনো মন্দ কাজের ইচ্ছা করলে কোনো গুনাহ লেখা হবে না। তবে তা করে বসলে একটি গুনাহ লেখা হবে।
নবীজি এ সওগাত নিয়ে ফেরত আসছিলেন। হযরত মূসার সাথে দেখা হলো। মূসা আ. এবার শুনে বললেন, আপনি যান, আরো কমিয়ে আনুন। আপনার উম্মত পারবে না। বনী ইসরাঈলের বিষয়ে আমার অভিজ্ঞতা আছে। নবীজি বললেন, আমার আর কিছু বলতে লজ্জা হচ্ছে! বুখারি, হাদিস: ৩৮৮৭; মুসলিম, হাদিস: ১৬২, ১৬৪ নবীজিকে যখন বুরাকে তোলা হচ্ছিল তখন বুরাক ঔদ্ধত্য দেখাল। তখন জিবরাঈল আ. বললেন, মুহাম্মাদের ক্ষেত্রে এরকম করছিস! তোর উপর তো এর চেয়ে শ্রেষ্ঠ কেউ কোনোদিন চড়েনি। এ শুনে বুরাক ঘর্মাক্ত হয়ে গেল। তিরমিজি, হাদিস : ৩১৩১নামাজ মুমিনের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ, যা তাকে আল্লাহর নৈকট্য লাভে সহায়তা করে এবং তার জীবনকে সুশৃঙ্খল ও অর্থবহ করে তোলে। এটি শুধু ইবাদতের মাধ্যম নয়; বরং আত্মশুদ্ধি, গুনাহ থেকে মুক্তি এবং আল্লাহর অনুগ্রহ লাভের এক বিশেষ পন্থা। নিয়মিত নামাজ আদায় একজন মুসলিমের অন্তরে শান্তি আনে, তার চরিত্রকে উন্নত করে এবং তাকে দুনিয়া ও আখিরাতের সফলতার পথে পরিচালিত করে। তাই নামাজের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া এবং সময়মতো তা আদায় করা প্রত্যেক মুমিনের কর্তব্য।