বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য হিস্সা বাংলাদেশের প্রাপ্য অধিকার, এটি কোনো করুণা বা দয়ার বিষয় নয়। উত্তরাঞ্চলের তিস্তাপাড়ের পানিবঞ্চিত মানুষ আজ সারা বিশ্বকে জানিয়ে দিতে চায় যে, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ৫৪টি অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য বণ্টন আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী নিশ্চিত করা উচিত।
গতকাল তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের ৪৮ ঘণ্টার ‘জাগো বাহে, তিস্তা বাঁচাই’ কর্মসূচির সমাপনী জনসমাবেশে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। রংপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা ও নীলফামারীর ১১টি পয়েন্টে একযোগে তাঁর বক্তব্য সম্প্রচারিত হয়। এ সমাবেশগুলোতে লাখ লাখ মানুষ অংশগ্রহণ করেন। এ সময় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ৫ আগস্ট পতিত আওয়ামী স্বৈরাচারী সরকার জোর করে ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রাখতে প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে যেসব চুক্তি সম্পাদন করেছে, সেগুলো পুনর্মূল্যায়ন করার আহ্বান জানান। তারেক রহমান বলেন, দুঃখের বিষয়, আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্সা আমাদের অধিকার হওয়া সত্ত্বেও, সেটি আদায়ের জন্য আজ আমাদের আন্দোলন করতে হচ্ছে। বাংলাদেশের মানুষ, বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের মানুষ, নিজেদের ন্যায্য দাবির জন্য রাজপথে নামতে বাধ্য হচ্ছে। তিনি বলেন, তিস্তা নদী রক্ষার লড়াই শুধু তিস্তাপাড়ের মানুষের লড়াই নয়, এটি গোটা বাংলাদেশের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই। উত্তরাঞ্চলকে মরুকরণ থেকে বাঁচাতে আমাদের লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।
তারেক রহমান বলেন, স্বৈরাচারী পতিত সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন বলেছিলেন, আমরা ভারতকে যা দিয়েছি ভারত কখনো ভুলবে না। আসলে তাই ৫ আগস্ট গণ অভ্যুত্থানে সেই স্বৈরাচারী সরকারের পতন হলে প্রতিবেশী দেশ তাকে মনে রেখে আশ্রয় দিয়েছে। আসলে আমাদের প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশের মানুষকে ভালোবাসে না তারা ভালোবাসে পতিত সরকার প্রধানকে।
তিস্তা চুক্তি ও মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে উত্তরের ৫ জেলায় টানা ৪৮ ঘণ্টার আন্দোলন কর্মসূচি সমাপনী দিনে তিস্তা রেলসেতু কাউনিয়া ও লালমনিরহাট প্রান্তে হাজার হাজার মানুষ তিস্তা নদীর হাঁটু পানিতে নেমে প্রতিবাদ জানান। এ সময় ভারতের পানি আগ্রাসন বন্ধ করা, মরুকরণ থেকে নদী রক্ষায় তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্সা প্রদান এবং বন্যা ভাঙন থেকে তিস্তাপাড়ের মানুষকে রক্ষায় মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবি সংবলিত প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করা হয়। তারা তিস্তা আমার মা, মরতে আমরা দেব না’ জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাইসহ নানা স্লোগান দিতে থাকে। এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় তিস্তা রেলসেতু লালমনিরহাট পয়েন্ট থেকে দিনের প্রথম কর্মসূচি পদযাত্রা শুরু হয়। পদযাত্রাটি কাউনিয়া উপজেলার বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে আবারও সেতু এলাকায় গিয়ে শেষ হয়।
বিএনপি ক্ষমতায় গেলে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবেলালমনিরহাট প্রতিনিধি জানান, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, স্বৈরাচার সরকার ভারতের কাছ থেকে তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্সা আদায় করতে পারেনি। যে কারণে উত্তর অঞ্চলের তিস্তা এলাকা মরুভূমি হতে যাচ্ছে। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে তিস্তার পানির হিস্সা আদায়ে জাতিসংঘের কাছে যাবে এবং তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবে। তারেক রহমান বলেন, দুই একজন উপদেষ্টা জাতীয় নির্বাচন নিয়ে একেক রকম বক্তব্য দিচ্ছেন। সে কারণে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে- যেন ফ্যাসিবাদ আবার যেন পুনঃ প্রতিষ্ঠিত না হয়। পাশাপাশি সরকার কোনো হঠকারী সিদ্ধান্ত যেন নিতে না পারে সে বিষয়েও আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, আন্তর্জাতিক আইন মতে তিস্তার পানি আমাদের অধিকার। প্রতিবেশী দেশের অপ্রতিবেশী আচরণের কারণে আজ আমরা আমাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত। আজ ৫০ বছর হলো ফারাক্কায় পানির অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি। ফলে তিস্তাসহ অনেক নদী এখন ধু ধু বালুচর এতে প্রতি বছর যেমন ৩/৪ বার বন্যা হয় তেমনি লাখো কোটি টাকা ক্ষতি হয়। তিনি আরও বলেন, ১৬ বছরে নদী কমিশনকে অকার্যকর করে রাখা হয়েছে প্রতিবেশী ভারতের স্বার্থে। তিনি বলেন, আমরাও প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখতে চাই তবে সেই সম্পর্ক হবে দেশের স্বার্থে। ভারত যদি আমাদের পানির ন্যায্য অধিকার না দেয় তাহলে দেশের সবাইকে সঙ্গে নিয়ে বিকল্প ব্যবস্থা করব এবং জাতিসংঘের কাছে যাবে।
তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে উত্তর অঞ্চলের লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলার তিস্তাপাড়ের ১১টি পয়েন্টে দুই দিনব্যাপী জনতার সমাবেশের কর্মসূচি পালন করে তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন। যার প্রধান সমন্বয়কারী ছিলেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু। এসব পয়েন্টের বিভিন্ন স্থানে উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন বীরবিক্রম, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, জাতীয় পার্টি (জেপি) সভাপতি মোস্তফা জামাল হায়দার, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ও ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু।