২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেইনে সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু করে রাশিয়া। সেই যুদ্ধেরই তিন বছর পূর্ণ হচ্ছে।যুদ্ধের তিন বছরে যেভাবে বদলে গেছে ইউক্রেইন ইউক্রেইনে দোনেৎস্ক অঞ্চলের বাখমুথ শহরে রাশিয়ার হামলায় বিধ্বস্ত একটি ভবনের ধ্বংসস্তুপের ওপর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন এক রাশিয়া পূর্ণমাত্রায় আগ্রাসন শুরুর পর তিন বছরে ইউক্রেইন বদলে গেছে। দেশটির বেশ কিছু অংশ রাশিয়া দখলে চলে গেছে, হাজার হাজার মানুষ নিহত বা আহত হয়েছে এবং লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেইন যুদ্ধ দ্রুত অবসানের জন্য তাগাদা দিচ্ছেন। চলতি সপ্তাহের শুরুতে সৌদি আরবে মার্কিন ও রাশিয়ান কর্মকর্তাদের মধ্যে শান্তি আলোচনার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।কিন্তু সেখানে কিইভের কোনও প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন না। এ কারণে হতবাক ইউক্রেইন ও তার ইউরোপীয় মিত্ররা। তারা যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নীতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে।
২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেইনে পুরোদস্তুর যুদ্ধ শুরু করে রাশিয়া। সেই যুদ্ধেরই আজ তিন বছর পূর্ণ হচ্ছে। এ যুদ্ধে ইউক্রেইন যেমন পূর্বাঞ্চলের দোনেৎস্ক এবং বাখমুথের চারপাশে ক্ষতির শিকার হয়েছে, তেমনি উত্তরপূর্বাঞ্চলের খারকিভ ও খেরসন অঞ্চলের অনেক জায়গায় জয়ও পেয়েছে।আবার পশ্চিমা মিত্রদের কাছ থেকে ইউক্রেইন এ যুদ্ধে সহায়তাও যেমন পেয়েছে, তেমনি সহায়তায় হুমকিরও সম্মুখীন হয়েছে। সব মিলিয়ে তিন বছরের এই ইউক্রেইন যুদ্ধের সার্বিক চিত্র তুলে ধরেছে সিএনএন রাশিয়ার আগ্রাসনের তিন বছরে ইউক্রেইন বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ‘ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার’- এর তথ্য বিশ্লেষণ করে সিএনএন জানিয়েছে, ২০২২ সালের আগ্রাসনের পর থেকে দেশটি প্রায় ১১ শতাংশ এলাকার নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে।
২০১৪ সালে রাশিয়া অবৈধভাবে ইউক্রেইনের ক্রাইমিয়া উপদ্বীপ দখল করে নিয়েছিল। আর রাশিয়া-সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীরা দখল করেছিল দনবাসের কিছু অংশ। দুটো অঞ্চলই আজ রাশিয়ার দখলে।রাশিয়া ইউক্রেইনে পুরোদস্তুর যুদ্ধ শুরু করার পর উত্তরের বিশাল এলাকা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। তখন থেকে ইউক্রেইন ওই অঞ্চলগুলো পুনরুদ্ধার করেছে এবং দক্ষিণ এবং দক্ষিণপূর্বে রাশিয়া লড়াই জারি রেখেছে।তাছাড়া, তিন বছরের এ যুদ্ধে ২০২৫ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত হিসাবে রাশিয়ার দখলে বর্তমানে রয়েছে ইউক্রেইনের ১৮ শতাংশ।২০২২ সালে পূর্ণমাত্রায় হামলা শুরু করার সময় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ভেবেছিলেন, কয়েক দিনের মধ্যেই পুরো ইউক্রেইন তিনি দখল করে নিতে পারবেন। কিন্তু পরে দেখা গেল ইউক্রেইনে রাশিয়ার দীর্ঘ এই তিন বছরের তুমুল লড়াই।
ইউক্রেইনে সহায়তার সবচেয়ে বড় উৎসে হুমকি:গত তিন বছর ধরে পশ্চিমা সহায়তার ওপর নির্ভর করে ইউক্রেইন রাশিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রই ছিল দেশটির সবচেয়ে বড় সাহায্যদাতা, যা সামরিক, মানবিক ও অর্থনৈতিক খাতে প্রায় ৯৫ বিলিয়ন ডলার দিয়েছে। তবে ট্রাম্প প্রশাসনের আমলে এই সহায়তা বিপন্ন হওয়ার হুমকি আছে।ইউক্রেইন যুদ্ধ দ্রুত শেষ করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া ট্রাম্প ২০২৪ সালের নির্বাচনী প্রচারণার সময় ইউক্রেইনে মার্কিন তহবিল পাঠানোর সমালোচনা করেছিলেন। সহায়তাকে লেনদেনমূলক করার প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি।সম্প্রতি, ট্রাম্প বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি ইউক্রেইনকে সহায়তা দেয়, তাহলে এর বিনিময়ে ইউক্রেইনের দুর্লভ খনিজ সম্পদ ব্যবহারের অধিকার পাওয়া উচিত। তবে ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এই শর্ত মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।ট্রাম্প এই মাসের শুরুতে ফক্স নিউজকে বলেছেন, তিনি ইউক্রেইনকে জানিয়ে দিয়েছেন ৫০০ বিলিয়ন ডলারের গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদের সমতুল্য কিছু পাওয়া না গেলে যুক্তরাষ্ট্র শুধুমাত্র আর্থিক সহায়তা দিয়ে যেতে পারে না। তিনি দাবি করেছেন, ইউক্রেইন এই শর্তে মূলত সম্মত হয়েছে, যাতে যুক্তরাষ্ট্র ‘বোকা বনে না যায়’।
সম্প্রতি, সম্প্রতি ইউএসএআইডির কার্যক্রম স্থগিতের কারণে এরই মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ইউক্রেইন। তহবিল স্থগিতের ফলে ইউক্রেইনের দাতব্য সংস্থা ও এনজিওগুলো কর্মী ছাঁটাইসহ গুরুত্বপূর্ণ সেবামূলক প্রকল্প বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে। অথচ গত তিন বছরে ইউএসএআইডির সবচেয়ে বেশি তহবিল পেয়ে এসেছে ইউক্রেইন।
বাস্তুচ্যুত হয়েছে লাখ লাখ ইউক্রেইনীয় রাশিয়ার আগ্রাসনের পর লাখ লাখ ইউক্রেইনীয় বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। অনেকে দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে আশ্রয় নিয়েছেন, আবার অনেকে নিরাপত্তার খোঁজে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন।জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ ইউরোপজুড়ে ৬৩ লাখের বেশি ইউক্রেইনীয় শরণার্থী রয়েছেন। জার্মানিতে ১২ লাখ, পোল্যান্ডে ১০ লাখ ও চেক প্রজাতন্ত্রে ৩ লাখ ৯০ হাজার শরণার্থী আশ্রয় নিয়েছে।২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত রাশিয়ায় ১২ লাখ ইউক্রেইনীয় শরণার্থী থাকার তথ্য দিয়েছে জাতিসংঘ।ইউক্রেইন রাশিয়া যুদ্ধে হাজার হাজার বেসামরিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তরের হিসাবমতে, ৪০ হাজারের বেশি ইউক্রেইনীয় বেসামরিক মানুষ যুদ্ধে বিস্ফোরক অস্ত্রের আঘাতে হতাহত হয়েছে।এর মধ্যে বিস্ফোরক অস্ত্র হামলায় নিহতের সংখ্যা বেশি। নিহতদের মধ্যে অন্তত ৬,২০৩ জন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ এবং ৬৬৯ জন শিশু রয়েছে।