মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলা এখন দেশের গাজর উৎপাদনের অন্যতম কেন্দ্র। উন্নত যাতায়াত ব্যবস্থা, বেলে-দোঁআশ মাটির উর্বরতা আর গাজরের স্বাদ দেশজুড়ে সুনাম কুড়িয়েছে। ফলে দিন দিন বাড়ছে চাষের পরিমাণ, আর কৃষকের মুখে ফুটছে হাসি।
জেলা কৃষি অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ মৌসুমে ৯৬০ হেক্টর জমিতে গাজর চাষ হয়েছে, যার ৯৫০ হেক্টরই সিংগাইরে। গত বছরের তুলনায় ১০ হেক্টর বেশি জমিতে চাষ হয়েছে এবার। এখানকার উৎপাদিত গাজর দিয়ে দেশের প্রায় ৪০% চাহিদা মেটানো সম্ভব বলে জানানো হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে কৃষকেরা চলতি মৌসুমে প্রায় ৫০ কোটি টাকার গাজর বিক্রি করতে পারবেন।
সিংগাইরের প্রতিটি ইউনিয়নে গাজরের আবাদ হলেও জয়মন্টপ ইউনিয়নের দুর্গাপুর, চর দুর্গাপুর, ভাকুম, চর ভাকুম, পূর্ব ও পশ্চিম ভাকুম গ্রামগুলো যেন গাজরের রাজধানী! পুরো গ্রাম জুড়েই বিস্তীর্ণ মাঠে দেখা মেলে গাজর তুলতে ব্যস্ত কৃষক আর শ্রমিকদের।
চর আজিমপুর গ্রামের বাবুল হোসেন বলেন, সাড়ে ৩ লাখ টাকা খরচ করে ৭ লাখ টাকার গাজর বিক্রি করেছেন, প্রতি বিঘায় লাভ হয়েছে ৪০ হাজার টাকা। ভাকুমের জয়নাল মিয়া বলেন, তিনি ৮ বিঘা জমিতে গাজর চাষ করে ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকায় আগেভাগেই বিক্রি করে দিয়েছেন, খরচ বাদে বেশ ভালো লাভ হয়েছে।
গাজর ব্যবসায়ী সিদ্দিক জানান, আগে ঢাকার বাজার থেকে গাজর কিনে বিভিন্ন জেলায় পাঠাতেন, কিন্তু এখন ক্ষেত থেকেই সরাসরি গাজর কিনছেন। এতে পরিবহন খরচ কমলেও শ্রমিকের মজুরি বেড়েছে, তবুও লাভজনক থাকায় এই অঞ্চলের গাজরই তাদের পছন্দ।
আগে হাতে বা পা দিয়ে গাজর পরিষ্কার করতেন শ্রমিকরা। তবে এখন মেশিন দিয়ে দিনে ৩০০-৪০০ বস্তা গাজর পরিষ্কার করা যায়। শ্রমিক মহিবুল্লা বলেন, প্রতিটি বস্তা পরিষ্কার করতে তারা ১২০ টাকা মজুরি পান, দিনে গড়ে ১০০ বস্তার বেশি কাজ করা যায়।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. রবীআহ নূর আহমেদ জানান, সিংগাইরের গাজরের উৎপাদন ও চাহিদা দুটোই বাড়ছে। অক্টোবরের শেষ থেকে আবাদ শুরু হয়ে জানুয়ারি-মার্চ পর্যন্ত চলে গাজর তোলা। বাজার ভালো থাকলে কৃষকেরা এই মৌসুমে ৫০ কোটি টাকার বেশি আয় করতে পারবেন।