ঢাকা , মঙ্গলবার, ১৯ অগাস্ট ২০২৫ , ৪ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
ইসরায়েলি হামলা ও অনাহারে গাজায় নিহতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৬২ হাজার রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধবিরতির কোনো প্রয়োজন নেই: ট্রাম্প শহীদ জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের গুণগত পরিবর্তনের কারিগর: মাহফুজ আলম লাইনচ্যুত ট্রেন উদ্ধারে গিয়ে উদ্ধারকারী ট্রেনও লাইনচ্যুত ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুই কোটি টাকার ভারতীয় শাড়ি-লেহেঙ্গা জব্দ প্রেসিডেন্ট হওয়ার খবর উড়িয়ে দিলেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান বিদেশে বাংলাদেশি সব মিশন থেকে রাষ্ট্রপতির ছবি সরানোর নির্দেশ যেসব জেলায় বৃষ্টি হতে পারে আজ ফারুকীর সর্বশেষ অবস্থা জানালেন তিশা গাজায় ২৪ ঘণ্টায় আরও ৭০ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করল ইসরাইল শেখ হাসিনা গণশত্রুতে পরিণত হয়েছে: এ্যানি পাঁচ মেডিকেল কলেজে হচ্ছে বার্ন ইউনিট শেখ মুজিব জাতির পিতা নন, স্বাধীনতায় তার ত্যাগ স্বীকার করি: নাহিদ করমর্দন করলেন ট্রাম্প ও পুতিন ভোলাগঞ্জের পাথর লুটের ঘটনায় মামলা, অজ্ঞাতনামা আসামি ২ হাজার ৪০ মিনিট অ্যাম্বুলেন্স আটকে রাখলো সিন্ডিকেট, ভেতরে নবজাতকের মৃত্যু ভারতে বাংলাভাষীদের হেনস্তার তীব্র সমালোচনা করলেন মমতা ভোলাহাট সীমান্ত দিয়ে ১৩ জনকে বিএসএফের পুশ ইন ভারতে ‘মৃত’ ভোটারদের সঙ্গে চা খেলেন রাহুল গান্ধী ওসিকে গালি দেওয়ায় বিএনপি নেতা আকতারের সব পদ স্থগিত

কাঁদলেন আবুল হায়াত, কাঁদালেন বিপাশা–নাতাশাসহ সবাইকে

  • আপলোড সময় : ০৩-১১-২০২৪ ১২:৩৩:২৩ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ০৩-১১-২০২৪ ১২:৩৩:২৩ অপরাহ্ন
কাঁদলেন আবুল হায়াত, কাঁদালেন বিপাশা–নাতাশাসহ সবাইকে
ব্যতিক্রমী একটি বই প্রকাশনা অনুষ্ঠানের সাক্ষী ছিল শিল্পকলা একাডেমির চিত্রশালা মিলনায়তন। মিলনায়তনে উপস্থিত অতিথিদের প্রায় সবাই একই মত প্রকাশ করলেন। নাট্যজন আবুল হায়াতের আত্মজীবনীমূলক বই ‘রবি পথ-কর্মময় ৮০’ থেকে নির্বাচিত গল্প উপস্থিত অতিথিদের সামনে পড়ে শোনান নাট্যাঙ্গনের পরিচিতমুখেরা। এ তালিকায় আজাদ আবুল কালাম যেমন ছিলেন, তেমনি ছিলেন অপি করিম, দীপা খন্দকার, ইন্তেখাব দিনার, রওনক হাসান প্রমুখ। ফাঁকে ফাঁকে কথা বলেন আমন্ত্রিত অতিথিরা। শেষ দিকে অনুষ্ঠানে আবেগঘন পরিস্থিতি তৈরি হয়। বইয়ের লেখক আবুল হায়াত স্ত্রী শিরিন হায়াতসহ মঞ্চে ওঠে কাঁদলেন, কাঁদিয়েছেন মেয়ে বিপাশা-নাতাশাসহ উপস্থিত সবাইকে।

আগেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, আজ শনিবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির চিত্রশালা মিলনায়তনে ‘রবি পথ-কর্মময় ৮০’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন হবে। নাট্যজন আবুল হায়াতের আত্মজীবনীমূলক এই বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে এসেছিলেন নাট্যাঙ্গনের অনেকেই। বাবার বই প্রকাশ উপলক্ষে বড় মেয়ে বিপাশা হায়াত উড়ে আসেন যুক্তরাষ্ট্র থেকে। প্রধান অতিথি হয়ে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। সবার বক্তব্য শেষে পরিবারের সবাইকে নিয়ে মঞ্চে ওঠেন আবুল হায়াত।শুরুতে আত্মজীবনী প্রকাশ প্রসঙ্গে আবুল হায়াত বলেন, ‘বইটা কেন লিখেছি, এর কোনো জবাব নেই। ১০ বছর ধরে লিখেছি। বইটা পড়লেও সবাই তা টের পাবেন। আমি নিজেও তো অনেকের বই পড়েছি। ভাবলাম, লিখি না, আমার জীবনেও তো অনেক ঘটনা আছে। বই লেখার ক্ষেত্রে যে ঘটনা আমাকে সবচেয়ে বেশি আঘাত করেছে, মুর্শিদাবাদ থেকে একটি পরিবার চট্টগ্রামে এল শুধু টেবিলে বসে একটা দাগ টানার কারণে; যখন বলা হলো, এটা হিন্দুস্তান, এটা পাকিস্তান। তার কারণে আমার মা-বাবা একটা দেশ ছেড়ে আরেকটা দেশে এলেন। বোঝালেন যে এটা তোমার দেশ না, এটা তোমার দেশ। প্রথমত, সেখান থেকে কষ্টটা, ক্ষতটা আমি আমার লেখায় ফুটিয়ে তুলতে চেষ্টা করেছি।


তারপর আমি যে তিন বছর বয়সে এলাম, এরপর বড় হলাম—সেই বিষয়গুলো লিখতে লিখতে মনে হলো, বাকি জীবনটা লিখে ফেলি। এরপর অনেকবার ফেলে রেখেছি, অবহেলা করেছি। এক পাতা লিখেছি, ছিঁড়ে ফেলেছি। দশ পাতা লিখেছি। তারপরও পড়ে ছিল বহুদিন। বিপাশা নিয়মিত বলত লেখার ব্যাপারে। আমি বলেছিলাম, “আমার জীবনী কে পড়বে?” তখন বিপাশা বলেছিল, “তুমি তোমার জীবনের শ্রেষ্ঠ লেখক। তোমার জীবনী তোমার চেয়ে ভালো কেউ লিখতে পারবে না। আমি চাই, তোমার জীবনীটা লেখা হোক।” এটা মনে হয়েছে, হ্যাঁ, তাই তো, আমার জীবনী আমার চেয়ে ভালো আর কে লিখবে। আমিও তারপর ভাবলাম, লিখি। এরপর তিথি (সুবর্ণ প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী) যখন বলল, “আমি ছাপাব।” তখন তাড়াতাড়ি লেখা শেষ করলাম। ভেবেছি আর সময় পাব কি না। এভাবেই লেখা হলো।’‘রবি পথ-কর্মময় ৮০’ লেখার গল্প বলতে বলতে একসময় মঞ্চের পরিবেশ অন্য রকম হয়ে ওঠে। আবুল হায়াত কাছে টেনে নিলেন স্ত্রী শিরিন হায়াতকে। সেই গল্পটা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বললেন এভাবে, ‘আজ থেকে তিন বছর আগে চিকিৎসক বললেন, আমার ক্যানসার হয়েছে। আমি জানতে পারলাম, আমি ক্যানসার রোগী। হাসপাতাল থেকে বাসা পর্যন্ত আর কথা বলতে পারিনি।’

স্ত্রীকে জড়িয়ে ধরে আবুল হায়াত বললেন, ‘এই মহিলা (শিরিন হায়াত) সারাক্ষণ আমাকে বলতে লাগল, “আরে কী হয়েছে। এটা কি কোনো ব্যাপার নাকি। আমরা আছি। চিকিৎসা করব। যেখানে যা যা লাগে, আমরা করব। তুমি ভালো হয়ে যাবে।” আমার মেয়েরা খবর পেয়েছে। তারাও বিভিন্নভাবে বলেছে, “আব্বু এটা নিয়ে চিন্তা করো না।” যা–ই হোক, আমার তো মন মানে না। রাতে খাবার খেয়েছি কি খাইনি, জানি না। বিছানায় শুয়ে পড়েছি। অন্ধকারে একা কাঁদছি। হঠাৎ টের পেলাম, উনি পাশে এসে শুয়েছেন। আমি তখনো নিঃশব্দে কাঁদছি। হঠাৎ ওনার একটা হাত আমার গায়ে এসে পড়ল। আমি ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলাম। তখন উনি “আল্লাহ তায়ালা এই রোগটা তোমাকে কেন দিল, আমাকে দেখতে পেল না?” বলেই হাউমাউ করে কেঁদে আমাকে জড়িয়ে ধরল। সারাটা জীবন আমার সঙ্গে; আমার দুঃখ, কষ্ট, বেদনা, আনন্দ—সবকিছুতে সে। আজকে আমি এই যে তিনটা বছর ক্যানসারের সঙ্গে যুদ্ধ করছি, শুধু তাঁর কারণে। সে আমার সবচেয়ে বড় সহযোদ্ধা, আমাকে শিখিয়েছে, আই এম আ ফাইটার।’

আবুল হায়াত যখন এসব বলছিলেন, পুরো মিলনায়তনে পিনপতন নীরবতা। কেউ চোখ মুছছিলেন। হঠাৎ মিলনায়তনের সবাই দাঁড়িয়ে গেলেন। সম্মান প্রদর্শন করলেন আবুল হায়াতকে। করতালি দিলেন। আবুল হায়াত তখন বলছিলেন, ‘আমি শেষ দিন পর্যন্ত যুদ্ধ করে যেতে চাই। আপনারা দোয়া করবেন। সাথে আমার পরিবার তো রয়েছে।আরেকজনের কথা না বললেই নয়, চিকিৎসক অসিত কুমার সেনগুপ্ত, তিনি প্রতিটা মুহূর্ত আমাকে সাহস জুগিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর কারণে আমি আপনাদের সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলতে পারছি।’ আবুল হায়াতের কথা শেষ হয় ঠিকই, তখনো অনেকে চোখের পানি মুছছিলেন, কেউ হাত দিয়ে, কেউ শাড়ির আঁচলে।

 

কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ
ইসরায়েলি হামলা ও অনাহারে গাজায় নিহতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৬২ হাজার

ইসরায়েলি হামলা ও অনাহারে গাজায় নিহতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৬২ হাজার