ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প তার দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য সুস্পষ্ট একটি রোডম্যাপসহ ‘অনেক অনেক বেশি প্রস্তুত’।
ওয়াশিংটন এপ্রিলের প্রথম দিক থেকেই ভারতসহ বিশ্বজুড়ে থাকা তার বাণিজ্য অংশীদারদের অসংখ্য পণ্যে শুল্ক বসানোর হুমকি দিয়ে রেখেছে; তার কয়েক সপ্তাহ আগে প্রচারিত এক পডকাস্ট সাক্ষাৎকারে মোদী এ মন্তব্য করলেন।
অটোমোবাইল থেকে শুরু করে কৃষি পর্যন্ত প্রায় সব খাতের রপ্তানিকারকদের মধ্যে এপ্রিলের ওই শুল্ক নিয়ে প্রবল শঙ্কা কাজ করছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
গত মাসে মোদী ও ট্রাম্প যে বৈঠক করেছিলেন তাতে দুই দেশ তাদের শুল্কবিরোধ নিষ্পন্ন করতে এবং দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ২০৩০ সালের মধ্যে ৫০ হাজার কোটি ডলারে নিতে এ বছরের মধ্যেই একটি চুক্তির প্রথমাংশ নিয়ে কাজ করতে সম্মত হয়েছিল।
“এবার তাকে আগের তুলনায় অনেক বেশি প্রস্তুত মনে হচ্ছে,” জানুয়ারিতে শুরু হওয়া ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদকে ইঙ্গিত করে বলেন মোদী।
মার্কিন কম্পিউটার বিজ্ঞানী ও পডকাস্টার লেক্স ফ্রিডম্যানের সঙ্গে তার এ পডকাস্ট রোববার প্রচারিত হয়।
“তার (ট্রাম্প) মনে সুনির্দিষ্ট ধাপসহ একটি সুস্পষ্ট রোডম্যাপ রয়েছে, প্রতিটি ধাপের নকশাই হয়েছে তাকে তার লক্ষ্যের দিকে নিয়ে যেতে,” বলেছেন মোদী।
তিন ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলা এ আলোচনায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী কূটনীতি থেকে শুরু করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, এমনকী তার ছেলেবেলা নিয়েও কথা বলেছেন।
ফ্রিডম্যান এ আলোচনাকে তার জীবনের সবচেয়ে ‘প্রভাব বিস্তারকারী’ আলোচনা হিসেবে অভিহিত করেছেন।
অনুষ্ঠানে মোদী ট্রাম্পের শিষ্টাচার ও নম্রতার ভূয়সী প্রশংসা করেন, দুই নেতার মধ্যকার বন্ধন আরও শক্তিশালী করার ওপরও জোর দেন তিনি।
“তার (ট্রাম্প) কাজকর্মেই তার ‘আমেরিকা প্রথম’ নীতি প্রতিফলিত হচ্ছে, যেমনটা আমিও বিশ্বাস করি—দেশই প্রথম। ভারত প্রথম, আমি এর পক্ষে, যে কারণে আমরা একে অপরকে ভালো বুঝি,” বলেন এক দশকেরও বেশি সময় ধরে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় দেশ ও অর্থনীতি সামলানো মোদী।
ফ্রিডম্যানের সঙ্গে মোদীর এ পডকাস্টে প্রতিবেশী চীন ও পাকিস্তান নিয়েও কথা বলেন মোদী।
রাশিয়ায় তার সঙ্গে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বৈঠকের পর হিমালয় সীমান্তে সামরিক উত্তেজনা কমাতে গত বছর বেইজিং ও নয়া দিল্লি যে ঐতিহাসিক চুক্তি করে, তারপর দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কে ব্যাপক উন্নতি হয়েছে।
“ধীরে হচ্ছে, কিন্তু নিশ্চিতভাবেই আস্থা, উৎসাহ ও আশা ফিরে আসবে। অবশ্যই, সময় লাগবে, যেহেতু ৫ বছরের একটা দূরত্ব ছিল,” ২০২০ সালে সীমান্তে দুই দেশের সেনাদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনার উল্লেখ করে বলেন মোদী।
দুই দেশ এখন তাদের সম্পর্ক ২০২০ সালের ওই ঘটনার আগের জায়গায় ফিরিয়ে নিতে কাজ করছে।
দুই দেশেরই লক্ষ্য হচ্ছে—নিজেদের মধ্যকার পার্থক্য যেন ‘বিবাদে পরিণত না হয়’ তা নিশ্চিত করা, বলেছেন মোদী।
পাকিস্তানের সঙ্গেও শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হবে বলে আশাবাদ তার।
“শান্তি প্রতিষ্ঠার সব মহৎ উদ্যোগকে বৈরিতা ও বিশ্বাসঘাতকতার মুখোমুখি হতে হয়েছে। তারা জ্ঞানকে ধারণ করবে এবং শান্তির পথ বেছে নেবে বলে আমরা আন্তরিকভাবে আশা করছি,” বলেছেন তিনি।
মোদীর এসব মন্তব্য নিয়ে টীন ও পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া জানতে দেশদুটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে রয়টার্স যোগাযোগ করলেও তাদের দিক থেকে সাড়া পাওয়া যায়নি।