বিশ্বের দুই শীর্ষ অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে শুল্কযুদ্ধ কোনোভাবেই যেন থামছে না। প্রতিদিনই এই যুদ্ধ নিচ্ছে নতুন মোড়, কেউ কাউকে ছাড় দিচ্ছে না। ওয়াশিংটন শুল্কের পরিমাণ বাড়ালে পাল্টা শুল্ক চাপাচ্ছে বেইজিংও। কিন্তু এই বাণিজ্য যুদ্ধের শেষ কোথায়?ডোনাল্ড ট্রাম্প ৯০ দিনের জন্য বিভিন্ন দেশের ওপর কিছু শুল্ক স্থগিত করেছিলেন। কিন্তু চীন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থার সিদ্ধান্ত নেয়ায়, রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট চীনা আমদানির ওপর শুল্ক বাড়িয়ে ২৪৫ শতাংশ করেছেন। বিপরীতে মার্কিন পণ্যের ওপর তার শুল্ক ১২৫ শতাংশ বৃদ্ধি করেছে চীন।
শুল্ক সংক্রান্ত এই দ্বন্দ্ব বিশ্বের দুটি বৃহত্তম অর্থনীতির দেশকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার এবং বিশ্ব অর্থনৈতিক শৃঙ্খলাকে ওলটপালট করে দেয়ার ঝুঁকিতে ফেলেছে। তবে অনেক বিশেষজ্ঞের দাবি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে এই বাণিজ্য যুদ্ধে চীন এগিয়ে আছে বলেই মনে হচ্ছে।ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদে, ২০১৮ সালে চীনের ওপর শুল্ক বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেন। সেই সময়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চীনের রফতানির পরিমাণ ছিল দেশটির মোট রফতানির ১৯.৮ শতাংশ। দ্য কনভারসেশনের এক প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২৩ সালে এই অনুপাত কমে ১২.৮ শতাংশে নেমে আসে।
দ্য কনভারসেশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, যদিও যুক্তরাষ্ট্রে সরাসরি রফতানি কমেছে চীনের, তবু এখনও তৃতীয় দেশের মাধ্যমে আমদানি করে ওয়াশিংটন।
এনওয়াইটি নিউজ সার্ভিসের প্রতিবেদন অনুসারে, চলমান বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে ইস্পাত তৈরির মতো কয়েকটি শিল্প লাভবান হবে, যদিও সামগ্রিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে অর্থনীতি। একদিকে আমদানি মূল্য বৃদ্ধি, অন্যদিকে মুদ্রাস্ফীতিজনিত চাপের মুখে পড়তে হবে ছোট-বড় সব খুচরা বিক্রেতাদের। কৃষক এবং অন্যান্য রফতানিকারকরা মার্কিন বাণিজ্য অংশীদারদের কাছ থেকে ‘প্রতিশোধমূলক’ শুল্কের লক্ষ্যবস্তু হতে পারেন।
এনওয়াইটি নিউজ সার্ভিস জানিয়েছে, জটিল বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খলের মালিকানাধীন অটোমেকার, প্রযুক্তি কোম্পানি এবং অন্যান্য নির্মাতাদের দ্রুত পরিবর্তনশীল এবং অনিশ্চিত বাণিজ্য ব্যবস্থার সাথে খাপ খাইয়ে নিতে বিশেষভাবে কঠিন সময় কাটাতে হবে। যেকোনো স্তরের প্রায় সব মার্কিন নির্মাতাই কিছুটা হলেও আমদানির ওপর নির্ভরশীল, তা সে যন্ত্রাংশ, কাঁচামাল অথবা তাদের কারখানায় ব্যবহৃত সরঞ্জামের জন্যই হোক।
প্রতিবেদন অনুসারে, তত্ত্বগতভাবে শুল্ক, ভর্তুকি এবং অন্যান্য প্রণোদনার সঠিক মিশ্রণের মাধ্যমে সরকার কোম্পানিগুলোকে তাদের সরবরাহ শৃঙ্খলের আরও বেশি অংশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্থানান্তর করতে চাপ দিতে সক্ষম হতে পারে।
কিন্তু এতে সময় লাগবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। কারণ কোম্পানিগুলোকে নতুন কারখানা তৈরি করতে হবে এবং নতুন সরবরাহকারী খুঁজে বের করতে হবে। যেসব যন্ত্রাংশ এবং সরঞ্জাম আর স্থানীয়ভাবে তৈরি হয় না, তাদের জন্য কোম্পানিগুলোকে নতুন করে সরবরাহ শৃঙ্খল পুনর্নির্মাণ করতে হবে। এছাড়া মার্কিন শ্রমশক্তিতে ইতোমধ্যেই দক্ষ কর্মীর বেশ ঘাটতি রয়েছে।
ফলে নতুন প্রজন্মের ওয়েল্ডার, সিএনসি মেকানিক্স এবং সিএডি টেকনিশিয়ানদের প্রশিক্ষণ দিতে বছরের পর বছর সময় লাগবে যুক্তরাষ্ট্রের। সবমিলিয়ে, এই বাণিজ্য যুদ্ধে কি সত্যিকার অর্থেই কেউ জয়ী হবে? এর উত্তর কেবল সময়ই বলবে।
সূত্র: ইকোনমিক টাইমস