‘ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টর’ নামে কোনো পদ না রাখার ঘোষণা এবং সব দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিলেও শিক্ষার্থীরা তা লিখিতভাবে বাস্তবায়ন চান। আশ্বাসে সন্তুষ্ট না হয়ে বরং কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শোয়াইব আহমাদ খানকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
বুধবার (১৬ এপ্রিল) বিকেলে রাজধানীর তেজগাঁও সাতরাস্তা মোড়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সরাসরি দেখা করেন কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক। এ সময় তিনি বলেন, “৩০ শতাংশ পদোন্নতির কোনো নিয়ম নেই, তবুও বিষয়টি আপিলে পাঠানো হয়েছে।”
সঙ্গে থাকা ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ বলেন, “আমরা শিক্ষার্থীদের সব দাবির সঙ্গে একমত। তবে বাস্তবায়নের জন্য আমাদের কিছুটা সময় প্রয়োজন।”
তবে এসব কথায় আশ্বস্ত না হয়ে, ডিজিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি, কেবল মুখে বলা চলবে না—সবকিছু লিখিত দিতে হবে। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যক্ষের কার্যালয়ে অবস্থান করছিলেন।
এ সময় ‘কারিগরি ছাত্র আন্দোলন’-এর পক্ষ থেকে প্রতিনিধি জুবায়ের পাটোয়ারী বলেন, “আমরা চাই, কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত কাউকে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হোক।”
এর আগে সকাল ১০টা থেকেই আন্দোলন শুরু করেন ঢাকা পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীরা। সাতরাস্তা মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু হয়। রাজধানীর এই আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে সারা দেশেই জেলা-জেলায় সড়ক অবরোধে অংশ নেয় শিক্ষার্থীরা।
তাদের মূল দাবি—জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ‘ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টর’-দের ৩০ শতাংশ কোটা বাতিলসহ ছয় দফা দাবি। তারা জানিয়েছেন, এসব দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ ছাড়বেন না।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, তেজগাঁও সাতরাস্তা মোড় অবরোধ করে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষার্থীরা। এর প্রভাব ছড়িয়ে পড়েছে পুরো শহরে। তীব্র যানজটে অচল হয়ে পড়ে ফার্মগেট, বিজয় সরণি, কারওয়ানবাজার, মগবাজার, এফডিসি মোড়, হাতিরঝিল, গুলশান, মালিবাগ, মৌচাক এলাকা। এমনকি তেজগাঁও, মহাখালী ও কারওয়ানবাজার এলাকার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ইনকামিং রুটও স্থবির হয়ে পড়ে।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, “এটা কেবল শুরু। দাবি পূরণ না হলে আন্দোলন আরও তীব্র হবে।”
পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের ৬ দফা দাবি হলো-
১. জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর পদে ক্রাফট ইন্সট্রাক্টরদের অবৈধ পদোন্নতির রায় হাইকোর্ট কতৃর্ক বাতিল করতে হবে। পাশাপাশি, ক্রাফট ইন্সট্রাক্টর পদবি পরিবর্তন এবং মামলার সাথে সংশ্লিষ্টদের স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুত করতে হবে। ২০২১ সালে রাতের আঁধারে নিয়োগপ্রাপ্ত ক্রাফট ইন্সট্রাক্টরদের নিয়োগ সম্পূর্ণভাবে বাতিল এবং সেই বিতর্কিত নিয়োগবিধি অবিলম্বে সংশোধন করতে হবে।
২. ডিপ্লোমা ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে যেকোনো বয়সে ভর্তির সুযোগ বাতিলসহ উন্নত বিশ্বের আদলে চার বছর মেয়াদি মানসম্পন্ন কারিকুলাম নিশ্চিত করে একাডেমিক কার্যক্রম পরবর্তী প্রবিধান থেকে পর্যায়ক্রমিকভাবে সম্পূর্ণ ইংরেজি মাধ্যমে চালু করতে হবে।
৩. উপ-সহকারী প্রকৌশলী ও সমমানের (১০ম গ্রেড) পদ চার বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং ও মনোটেকনোলজি (সার্ভেয়িং) হতে পাসকৃত শিক্ষার্থীদের জন্য সংরক্ষিত থাকা সত্ত্বেও যেসব সরকারি, রাষ্ট্রায়ত্ত, স্বায়ত্তশাসিত ও স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের নিম্নস্থ পদে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৪. কারিগরি সেক্টর পরিচালনায় পরিচালক, সহকারী পরিচালক, বোর্ড চেয়ারম্যান, উপসচিব, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও অধ্যক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সকল পদে কারিগরি শিক্ষা বহির্ভূত জনবল নিয়োগ নিষিদ্ধ করতে হবে এবং তা আইনানুগভাবে নিশ্চিত করতে হবে। এই পদগুলোতে অনতিবিলম্বে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত জনবল নিয়োগ এবং সকল শূন্য পদে দক্ষ শিক্ষক ও ল্যাব সহকারী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে।
৫. কারিগরি শিক্ষায় বৈষম্য ও দুরাবস্থা দূর করার পাশাপাশি দক্ষ জনসম্পদ তৈরিতে কারিগরি ও উচ্চশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নামে স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করে দ্রুত সময়ের মধ্যে কারিগরি শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠন করতে হবে।
৬. পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে পাসকৃত শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগের লক্ষ্যে একটি উন্নতমানের টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে। পাশাপাশি, নির্মাণাধীন চারটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (নড়াইল, নওগাঁ, খাগড়াছড়ি ও ঠাকুরগাঁও) পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক হতে পাসকৃত শিক্ষার্থীদের জন্য অস্থায়ী ক্যাম্পাস ও ডুয়েটের আওতাভুক্ত একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে আগামী সেশন থেকে শতভাগ সিটে ভর্তির সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।