যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান পারমাণবিক আলোচনার বিষয়ে রাশিয়াকে অবহিত করতে মস্কো সফর করেছেন ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি। এ সফরের মাধ্যমে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির একটি চিঠি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ব্রিটিশ সংবাদ সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, খামেনির চিঠিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পারমাণবিক আলোচনা সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) ওমানের মধ্যস্থতায় ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে ইরানের একটি বৈঠক হয়, যেটিকে উভয় পক্ষই 'গঠনমূলক ও ইতিবাচক' হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। আলোচনার দ্বিতীয় দফা হতে পারে এ সপ্তাহের শেষ দিকে রোমে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই ইরানের ওপর 'সর্বোচ্চ চাপ' প্রয়োগের কৌশল অনুসরণ করছেন। এর অংশ হিসেবে তেহরানের তেল রপ্তানি শূন্যে নামিয়ে আনার লক্ষ্যে একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন এবং পরমাণু কর্মসূচি বন্ধ করতে চাপ দিয়ে আসছেন।
তবে তেহরান জানিয়ে দিয়েছে, তারা ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি কোনো অবস্থাতেই বন্ধ করবে না এবং এটিকে তাদের সার্বভৌম অধিকার বলে দাবি করেছে।
এরইমধ্যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, যদি ইরান আলোচনা ব্যর্থ করে, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র সামরিক হামলা চালাতে পারে এবং নতুন করে দ্বিতীয় দফার অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে।
রাশিয়া অবশ্য এই হুমকিকে ‘অবৈধ ও অগ্রহণযোগ্য’ আখ্যা দিয়েছে। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য ও ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তির অন্যতম স্বাক্ষরকারী হিসেবে রাশিয়া বরাবরই ইরানের ঘনিষ্ঠ মিত্র এবং আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ জানিয়েছেন, পারমাণবিক ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে উত্তেজনা প্রশমনে রাশিয়া তার সহায়তা অব্যাহত রাখবে।
এদিকে, আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ)-র প্রধান রাফায়েল গ্রোসি সতর্ক করে বলেছেন, ইরান এখন পরমাণু অস্ত্র তৈরির খুব কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। ফরাসি সংবাদপত্র লে মন্ডে-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “ইরান বোমা তৈরির দিক থেকে খুব বেশি দূরে নয়।”
আইএইএ’র সর্বশেষ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, তেহরান ইতোমধ্যে ৬০% সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম মজুদ করেছে, যা পরমাণু বোমা তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় ৯০% সমৃদ্ধির মাত্রার একেবারে কাছাকাছি। বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশটি বর্তমানে প্রায় ৪২ কেজি উচ্চ-সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম তৈরি করে ফেলেছে, যা একটি পরমাণু অস্ত্র তৈরির জন্য যথেষ্ট।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ইরান আন্তর্জাতিক পরিদর্শকদের কিছু পরমাণু স্থাপনায় প্রবেশাধিকার না দিয়ে স্বচ্ছতা নষ্ট করছে বলেও অভিযোগ করেছে সংস্থাটি।