ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজার একটি স্কুলে হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। এতে সেখানে আশ্রয় নেয়া এক শিশুসহ অন্তত ১০ জন নিহত হয়েছেন। হামলা থেকে সৃষ্ট আগুনে ঝলসে মারা যায় শিশুটি। আহত হয়েছেন আরও অনেকেই। খবর আল জাজিরার।
প্রতিবেদন মতে, গাজাজুড়ে বিরামহীন হামলা চলছে। এরই ধারাবাহিকতায় বুধবার (২৩ এপ্রিল) সকালে গাজা শহরের জাফা স্কুলে বোমাবর্ষণ করা হয়। গাজার জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মানুষ স্কুলটিতে আশ্রয় নিয়েছিল।ফিলিস্তিনি সিভিল ডিফেন্স এক টেলিগ্রাম বার্তায় জানিয়েছে, বুধবার ভোরে স্কুলে হামলার পর তাদের জরুরি উদ্ধারকর্মীরা ১০টি লাশ উদ্ধার করেছে। তারা আরও জানায়, এ ঘটনায় বিপুল সংখ্যক মানুষ আহত হয়েছেন।
হামলার পর আল জাজিরার সংবাদদাতা আনাস আল-শরিফ সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, ‘বাস্তুচ্যুতদের তাঁবুতে ঘুমন্ত অবস্থায় শিশুদের পুড়িয়ে মারা হচ্ছে। এই গণহত্যা থেকে বাঁচার কোনো নিরাপদ জায়গা নেই। গাজা শহর ও এর উত্তরাঞ্চলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে ইসরাইলি বিমান হামলা ও কামানের গোলাবর্ষণ চলছে।’স্কুল থেকে আশ্রয়কেন্দ্রে রূপ নেয়া ভবনে হামলার ভিডিও ফুটেজ সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। এছাড়া গাজার আরও কয়েকটি এলাকায় হামলা চালানো হয়েছে। এর মধ্যে জাবালিয়ায় কমপক্ষে একজন নিহত হয়েছেন।
এর আগে গত মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) দিনভর গাজায় হামলা চালানো হয়। তাতে গাজা শহরের আল ডোরা পেডিয়াট্রিক হাসপাতাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেখানে উদ্ধার অভিযান চালানোর জন্য ব্যবহৃত কয়েকটি বুলডোজারও ধ্বংস হয়।গাজা গণমাধ্যম অফিসের তথ্য মতে, এদিন কমপক্ষে ৩২ ফিলিস্তিনি নিহত হন। আহত হন আরও অর্ধশতাধিক। নতুন হতাহতের ফলে বুধবার পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ৫১ হাজার ২৬৬ জনে দাঁড়িয়েছে। যার বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এর মধ্যে গত ১৮ মার্চ গাজায় নতুন করে ইসরাইলি হামলা শুরু হওয়ার পর থেকে প্রায় ১৯০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
বুধবার গাজা কর্তৃপক্ষের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইসরাইলি আক্রমণে আহত হওয়া আরও ৬০ জনেরও বেশি মানুষকে গাজার বিভিন্ন হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। এর ফলে সংঘাতের শুরু থেকে আহতের সংখ্যা বেড়ে ১ লাখ ১৬ হাজার ৯৯১ জনে পৌঁছেছে। অনেক মানুষ এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে এবং রাস্তায় পড়ে থাকলেও উদ্ধারকারীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারেননি।দীর্ঘ ১৫ মাস সামরিক অভিযানের পর যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপে গত ১৯ জানুয়ারি গাজায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় ইসরাইল। তারপর প্রায় দু’মাস গাজায় কম-বেশি শান্তি বজায় ছিল। কিন্তু গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহারের প্রশ্নে হামাসের মতানৈক্যকে কেন্দ্র করে মার্চ মাসের তৃতীয় গত সপ্তাহ থেকে ফের গাজায় বিমান হামলা শুরু করে ইসরাইল।
এদিকে গাজায় চলমান সহিংসতা বন্ধের প্রচেষ্টায় স্থবিরতার মধ্যে যুদ্ধবিরতির নতুন পরিকল্পনা প্রস্তাব করেছে মধ্যস্থতাকারী দেশ কাতার ও মিশর। এ নিয়ে এখন আলোচনা চলছে। কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আব্দুল রহমান বিন জসিম আল থানি বলেছেন, তার দেশ গাজা যুদ্ধের অবসান ঘটাতে মধ্যস্থতাকারীদের সাথে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে