সারা দেশের দৃষ্টি এখন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের দিকে। কাদের অধীনে হবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন, কারা আসতে যাচ্ছেন নির্বাচন কমিশনে-এ নিয়ে সবার আগ্রহ। ইসি গঠনের জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, ব্যক্তি, পেশাজীবী সংগঠন থেকে পাঁচ শর বেশি বিশিষ্টজনের নামের প্রস্তাব পেয়েছে সার্চ কমিটি। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে এ নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। সার্চ কমিটিকে সাচিবিক সহায়তা দেওয়া মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কাছে এসব নাম জমা দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একাধিক সূত্র বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। পাঁচ শর বেশি নাম পেলেও চূড়ান্ত সংখ্যাটি বলতে পারেননি সূত্রগুলো। সার্চ কমিটির কাছে যোগ্য ব্যক্তিদের নাম প্রস্তাবের শেষ দিন ছিল গতকাল। সবচেয়ে বেশি নাম গত দুই দিনেই জমা হয়েছে বলে জানা গেছে। মন্ত্রিপরিষদ সূত্রগুলো জানান, গতকাল বিকাল ৫টা পর্যন্ত কমিটির কাছে সরাসরি অথবা ইমেইলে এ নামগুলো প্রস্তাব করা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করে দুটি সূত্র জানান, প্রস্তাবিত নামের এ সংখ্যা ৫ শতাধিক। বিভিন্নজনকে এ বিষয়ে কাজ ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। কেউ ইমেইল থেকে নাম তালিকা করছেন, হার্ডকপি যারা দিয়েছেন তা ঠিক করছেন। কেউ তালিকা একত্র করে ফাইল করছেন। আরেক সূত্র জানান, পাঁচজনের বেশি এ বিষয়ে কাজ করছেন। প্রত্যেককেই আলাদাভাবে কাজ ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। গত দুই দিন প্রচুর তালিকা জমা দেওয়ার চাপ ছিল। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই এ বিপুলসংখ্যক নাম পেয়েছেন বলে জানান সূত্রগুলো। গতকাল তালিকা নিয়ে রাত ১০টার বেশি সময় পর্যন্ত কাজ চলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে। জানা গেছে, ছোট বড় প্রায় সব দলই নামের প্রস্তাব দিয়েছে। একাধিক দলের সূত্র জানান, নামের তালিকায় কিছু কিছু দল সরকারি কর্মকর্তা, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, শিক্ষক, সাহিত্যিক ও সাবেক সেনা কর্মকর্তাদের নাম প্রস্তাব করেছে। পেশার কথা উল্লেখ করলেও কোনো দলই নির্দিষ্ট করে প্রস্তাবিত কারও নাম বলতে চায়নি।
গত রাতে মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আবদুর রশীদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘রাজনৈতিক দল, বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন, ব্যক্তি পর্যায়সহ সার্চ কমিটির কাছে অনেক নাম জমা পড়েছে। এখনো সুনির্দিষ্ট হয়নি তবে সংখ্যাটা অনেক।’ বিভিন্নভাবে আসা প্রস্তাবিত নামের সংখ্যা পাঁচ শর বেশি বলে জানা গেছে-এ বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘এটা অসম্ভব নয়। তবে আমাদের কর্মকর্তারা এটা নিয়ে তালিকা “কম্পাইলের” কাজ করছেন। এটি চূড়ান্ত হলে সার্চ কমিটি যেভাবে চায় সেভাবে আমরা পরবর্তী সভায় উপস্থাপন করব।’
ইসি গঠনে যোগ্য ব্যক্তি খুঁজে পেতে ৩ নভেম্বর রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী সংগঠন ও ব্যক্তি পর্যায় থেকে পাঁচজন করে নাম প্রস্তাব চেয়েছিল সার্চ কমিটি। তবে ব্যক্তিগত পর্যায় ও পেশাজীবী সংগঠন থেকে কেউ কেউ পাঁচজনের বেশি নামও প্রস্তাব করেছেন বলে জানা গেছে। পূর্ণাঙ্গ জীবনবৃত্তান্তসহ প্রস্তাবিত নামগুলো সরাসরি বা ইমেইলের মাধ্যমে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠাতে বলা হয়।
জানা গেছে, নির্দিষ্ট সময়ে যেসব নাম জমা পড়েছে সার্চ কমিটি সেগুলো যাচাইবাছাই করে যোগ্য ব্যক্তিদের নির্বাচন করবে। পাশাপাশি তারা নিজেদের মধ্যে এবং বিভিন্ন ব্যক্তি, দল, সংগঠন ও পেশাজীবীর সঙ্গে বৈঠক করে মোট ১০টি নাম চূড়ান্ত করে রাষ্ট্রপতির কাছে জমা দেবে। রাষ্ট্রপতি সেখান থেকে একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও আরও চারজন নির্বাচন কমিশনারের নাম চূড়ান্ত করে নির্বাচন কমিশন গঠন করে দেবেন। অন্যতম বড় দল বিএনপি রবিবার পাঁচজনের নামের তালিকা জমা দেয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে। মন্ত্রিপরিষদের সচিব ড. শেখ আবদুর রশীদের কাছে এ নামের তালিকা হস্তান্তর করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ ও যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী।
গতকাল বিকালে গণঅধিকার পরিষদের পক্ষে নাম জমা দেন দলটির সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল। পরে রাশেদ খান জানান, নির্বাচন কমিশনে এমন মানুষ নিয়োগ দেওয়া যাবে না যাঁরা আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করবেন। ইসিতে ন্যূনতম বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষককে নিয়োগের দাবিও জানান তিনি। জানা গেছে, সাবেক সেনা কর্মকর্তা, আমলা, চিকিৎসক, আইনজীবীসহ ছয়জনের নাম ইসিতে জমা দিয়েছে গণঅধিকার পরিষদ। এর আগে রবিবার নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে নাম চেয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করে সার্চ কমিটি। এর আগে ৩১ অক্টোবর সার্চ কমিটি গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। ছয় সদস্যের সার্চ কমিটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী। কমিটির সদস্য হিসেবে আছেন হাই কোর্টের সিনিয়র বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান, বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক জিন্নাতুন নেছা তাহমিদা বেগম ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক অধ্যাপক চৌধুরী রফিকুল আবরার, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক মো. নূরুল ইসলাম এবং পিএসসি চেয়ারম্যান মোবাশ্বের মোনেম। এ কমিটি ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে রাষ্ট্রপতির কাছে ইসি গঠনের জন্য ১০ জনের নাম প্রস্তাব করবে।
উল্লেখ্য, গত নির্বাচন কমিশন গঠনের সময় ২০২২ সালেও ৬ শতাধিক নামের প্রস্তাব পেয়েছিল তখনকার সার্চ কমিটি। পরে সংক্ষিপ্ত করে ৩২২ জনের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছিল মন্ত্রিপরিষদের ওয়েবসাইটে। সেখান থেকে ওই সময় ইসি গঠন করা হয়েছিল।