গেল ১৫ বছরে সাংবাদিকদের ভূমিকা পর্যালোচনা করার জন্য সরকার জাতিসংঘকে চিঠি দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘মিট দ্য রিপোর্টার্স’ অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, “জাতিসংঘের অফিসকে আমরা একটি চিঠি দিচ্ছি। এটা আজ কালকের মধ্যে যাবে। চিঠিতে আমরা বলছি, তারা যেন একটা ইনডিপেন্ডেন্ট এক্সপার্ট নিয়ে এসে বাংলাদেশের জার্নালিজম কীভাবে ব্যর্থ হয়েছে গত ১৫ বছরে...আমরা চাই এটা নিয়ে রিভিউ করতে।”
ঢাকায় এএফপির সাবেক ব্যুরো প্রধান শফিকুল বলেন, “হাসিনার কু-প্ররোচনায় কীভাবে সাংবাদিকরা মানুষকে জঙ্গি ট্যাগ দিয়ে তাকে কিলিংয়ের বৈধতা দিয়েছে...এই কাজগুলো কারা করেছে? অনেক ক্ষেত্রে একটা ভালো লোক বা আমি জানি তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই, তাকে জঙ্গি ট্যাগ করে দিলেন। এটা মানে কি, আমি রাষ্ট্রকে প্ররোচনা দিচ্ছেন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে, তাকে মেরে ফেলতে। এই কাজগুলো তো হয়েছে। আমাদের জার্নালিজমের ফেইলিওর তো অনেকগুলো ছিল।”
“আপনাদের গণতন্ত্র চলে গেল, তিনটা ভয়াবহ রকমের ভুয়া নির্বাচন হল। প্রত্যেকটা সমাজে এ ধরনের ঘটনা ঘটলে সাংবাদিকদের ভূমিকা কিন্তু সামনে আসে। অনেকেই এখন সুশীল সাজেন। তো এই ফেইলিওরগুলো আমরা জানতে চাই। যে কোথায়-কোথায় জার্নালিজমের ফেইলিওর হয়েছে, সেটা নিয়ে ইউএনকে আমরা চিঠি দেব।"সাংবাদিকদের ছুটিছাটা-সুবিধা বাড়ানো হবে কিনা এই প্রশ্নের জবাবে সাংবাদিকদের সংগঠনগুলোর কড়া সমালোচনা করেন প্রায় তিন দশক সাংবাদিকতা পেশায় দায়িত্ব পালন করা শফিকুল।তিনি বলেন, “আপনাদের ইউনিয়ন এগুলোর ব্যাপারে বলা উচিত। সরকারই আপনাদের হয়ে সব করে দেবে, এটার চেয়েও আমার মনে হয় ইউনিয়ন এই আলাপটা তোলা উচিত। নেগোসিয়েশনটা হচ্ছে ইউনিয়নের সাথে মালিকদের।
“কিন্তু আমাদের ইউনিয়ন তো গত ১৫ বছর পূর্বাচলের প্লট নিয়ে ব্যস্ত ছিল, ডিজিএফআইয়ের দালালি নিয়ে ব্যস্ত ছিল। একটা ঠান্ডা মাথার খুনী মনিরুল, তার সাথে সবাই ছবি দিচ্ছেন, মনিরুল ভাই আপনি না আসলে দেশ উদ্ধার হত না, এই সমস্ত মেসেজ দিতেন। আমার মনে হয় ইউনিয়নের এই আওয়াজগুলো তোলা উচিত। আমাদের সাংবাদিকদের ভয়াবহ রকমের ঠকানো হয়।শফিকুল বলেন, “৩০ হাজার টাকার নিচে কোনো সাংবাদিক বেতন পাবে না। আর যারা দিতে পারবে না, তারা আল্লাহর ওয়াস্তে বন্ধ করে দেন। আমাদের ডিএফপির যে সিস্টেম, সর্ষের ভেতরে ভূত। সে জায়গাটায় আওয়াজ তোলা উচিত। সাংবাদিক নেতারা পত্রিকার অনুমোদন নিয়ে ডিএফপির তালিকায় সবার উপরে রেখে দেয়, অথচ একট কপি চলে না। নিজে পড়েন, উনার বউ পড়েন, আর কেউ পড়েন না। এই আওয়াজগুলো ইউনিয়নের তোলা উচিত।”গত কয়েক দিনে ভারতে বাংলাদেশের সাতটি টেলিভিশন স্টোশনের ইউটিউব চ্যানেল দেখার সুযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
সে প্রসঙ্গে শফিকুল বলেন, “ইন্ডিয়ার এটা খুবই ন্যক্কারজনক ঘটনা। এটাতে বোঝা যায় ইন্ডিয়া কর্তৃপক্ষ ফ্রিডম অফ স্পিচে কতটা বিশ্বাস করেন। আমরা এটা দেখছি, যাদেরকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে তারা বাংলাদেশে খুবই রেসপেক্টেড নিউজপেপার বা ওয়েবসাইট বা টিভি স্টেশন। এটাতে বোঝা যায়, তারা (ইন্ডিয়া) সত্যকে নিতে পারছেন না, সত্য কথাকে নিতে পারছেন না।
“অনেকে জিজ্ঞেস করেন যে, আমরা পাল্টা অ্যাকশনে যাব কিনা। আমাদের কোনো ইচ্ছা নাই পাল্টা অ্যাকশনে যাওয়ার। তাতে হবে কি, তাদের অ্যাকশনটাকে বৈধতা দেওয়া হবে। আমাদের কোনো ইচ্ছা নাই। আমরা জানি ইন্ডিয়ান মিডিয়া কী তামাশা করে। সত্যিকার অর্থে তারা তামাশা বিক্রি করে প্রতিদিন।”
আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরে দেশের শেয়ারবাজারে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে বলে অভিযোগ করেন শফিকুল আলম।তিনি বলেন, “গত ১৫ বছরে শেয়ারবাজারে এক ডাকাতকে সরিয়ে আরেক ডাকাতকে আনা হয়েছে। যারা ভেতরে-ভেতরে সবাই এক।”
অনেকদিন ধরেই শেয়ারবাজারে অস্থিরতা চলছে। কয়েকদিন ধরে অব্যাহত দরপতন চলছে। সে বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে শফিকুল বলেন, “কবে শেয়ারবাজার ঠিক হবে সে টাইমলাইন আমি বলতে পারব না। এগুলোর তো কিছু প্র্যাক্টিক্যাল বিষয় আছে। ইচ্ছা করলেই আপনি বললেন যে কালকে আনব, আনা তো যায় না।"
“প্রধান উপদেষ্টা কাল বলেছেন যে, শেয়ার মার্কেটে যাতে একটা মিনিংফুল রিফর্ম হয়৷ এমন যেন ব্যবস্থা না হয়, যে আমি এক ডাকাতকে সরিয়ে আরেক ডাকাতকে আনলাম। এবং আরেক ডাকাত এসে প্রথমে কিছু মেজার নিলেন, শেয়ার মার্কেট কিছুটা ভালো হল। সবাই খুশি হলেন।”প্রেস সচিব বলেন, “শেয়ার মার্কেটটা যাতে ডাকাতদের আড্ডাখানা না হয়। এটা আমাদের চিন্তাভাবনা করতে হবে। যাতে বাংলাদেশের প্রত্যেকটা বিনিয়োগকারী তাদের সবার সুবিধা যাতে নিশ্চিত হয়। যাতে সংঘবদ্ধ চক্র শেয়ারবাজারকে ম্যানিপুলেট না করতে পারে৷
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের আমলের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “গত ১৫ বছরে কি হয়েছে? ২০১০ সালে যে ভয়াবহ ডাকাতি হয়েছে শেয়ারবাজারে, কোনো ধরনের কোনো জবাবদিহিতা এসেছে এটার মধ্যে? কেউ কি এটার জন্য আইনের আওতায় এসেছেন? আসেন তো নাই। এই সময়ে যেটা হয়েছে, এক ডাকাত সরিয়ে আরেক ডাকাতকে আনা হয়েছে।”
এর সুরাহা করতে সরকারের প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরে শফিকুল বলেন, “প্রধান উপদেষ্টার কথা হচ্ছে যে, এমন বিদেশি বিশেষজ্ঞ আনতে হবে, যারা নির্মোহভাবে বাংলাদেশের শেয়ারবাজারকে একটি রিফর্মের জায়গায় নিতে পারবেন। যাতে সবাই বেনেফিটেড হয়। শেয়ারমার্কেটের ক্লিনআপ প্রসেসটা যদি ঠিকভাবে হয়, বিশ্বাস করেন এই শেয়ার মার্কেটটা উঠবে।”
আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমার মনে হয় যে আমাদের পুরো সোসাইটি, আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো সবাই কিন্তু এটা গ্রহণ করে নিয়েছে। আমরা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এটা ‘ইউনিভার্সালি অ্যাকসেপ্টেড হয়েছে।“পুরো বাংলাদেশ একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ায়। কোথাও কিছু দেখেছেন? পুরো বাংলাদেশের মানুষ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে।”