কিছুদিন আগেও মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকা পার হতে গিয়ে রীতিমতো ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে হতো। ঘণ্টার পর ঘণ্টা জ্যামে বসে থাকতে হতো। বিশেষ করে বেড়িবাঁধ সিগন্যাল তো যেন যানজটের ঘাঁটি ছিল। কিন্তু এখন আর আগের মতো থেমে থাকতে হয় না। একটু ধীর হলেও গাড়ি চলে সারাক্ষণ। যেন এক অচেনা স্বস্তির ঢেউ নেমেছে পুরো মোহাম্মদপুরজুড়ে।
এই স্বস্তির কথা জানালেন বেসরকারি চাকরিজীবী মো. হাসান। বসিলার বাসিন্দা তিনি। প্রতিদিনই কাজের প্রয়োজনে মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড হয়ে যাতায়াত করতে হয়। যানজট কমে যাওয়ায় বেশ খুশি হাসান। বলছিলেন, “আগে এই রাস্তা পার হতে কমপক্ষে আধাঘণ্টা লাগতো, কখনো কখনো আরও বেশি। এখন তো গাড়ি থামাতে হয় না, শুধু একটু গতি কম থাকে, ব্যস। এতটাই পরিবর্তন!”
এই পরিবর্তনের পেছনে মূল ভূমিকা রেখেছে বেড়িবাঁধ সিগন্যাল বন্ধ করে দুই পাশে চালু হওয়া ইউটার্ন। আগে যেখানটায় সব গাড়ি আটকে থাকত, এখন সেখানে আর সিগন্যাল নেই। একদিকে গাড়িগুলো ময়ূরভিলার সামনে থেকে ইউটার্ন নিচ্ছে, অন্যদিকে লাউতলা এলাকায় ইউটার্নের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ফলে চারদিক থেকেই গাড়ি চলে যাচ্ছে একটানা। মাঝপথে থেমে থাকার আর প্রয়োজন পড়ে না।
সরেজমিনে দেখা গেল, বেড়িবাঁধ সিগন্যাল পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছে ট্রাফিক পুলিশ। আশেপাশে আগে যে অবৈধ দোকান, সিএনজি আর ইজিবাইকের স্ট্যান্ড ছিল, সেগুলোও এখন আর চোখে পড়ে না। এমনকি মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডে মালঞ্চ পরিবহনের মতো দীর্ঘদিনের অবৈধ স্ট্যান্ডও তুলে দেওয়া হয়েছে। ফলে রাস্তা অনেকটাই খোলামেলা, আর তাই যানজটও কম।
তবে পুরোপুরি স্বস্তিতে নেই সবাই। মোহাম্মদপুর সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ী মইনুল হোসেন বললেন, “জ্যাম তো কমেছে ঠিকই, কিন্তু এখন নতুন সমস্যা শুরু হয়েছে – ধুলাবালি আর কাদা। সামান্য বৃষ্টি হলেই রাস্তা কর্দমাক্ত হয়ে যায়, আর রোদে ধুলা উড়ে চোখে-মুখে লাগে। ইউটার্নের আশেপাশে কার্পেটিং নেই বলেই এমনটা হচ্ছে।”
এই বিষয়ে মোহাম্মদপুর ট্রাফিক জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. আসলাম সাগর বললেন, যানজট কমাতে তারা একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছেন। উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পরামর্শে সড়ক ও জনপথ বিভাগ ও সিটি করপোরেশনের সঙ্গে কাজ ভাগ করে নেন। যদিও জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে কার্পেটিং এবং মিড আইল্যান্ড তৈরির কাজ হওয়ার কথা ছিল, সেটা শুরু হয়নি। তবে ৩ মে থেকে ট্রাফিক বিভাগের উদ্যোগে সিমেন্টের ব্লক বসিয়ে অস্থায়ী মিড আইল্যান্ড তৈরি করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, “আমরা নিজেরাই ডিপিডিসি খনন করা রাস্তা ভরাট করেছি। যেসব রাস্তা ছিল উঁচু-নিচু, সেগুলো সমান করার চেষ্টা করেছি। বেড়িবাঁধ কালভার্ট রোডেও ইটের খোয়া আর রাবিশ দিয়ে ভরাট করেছি যাতে ডাইভারশন দেওয়া যায়। সিএনজি ও ইজিবাইকের স্ট্যান্ড সামনে সরিয়ে নিয়েছি। ফলে গাড়ি এখন সহজেই চলাচল করতে পারে।”
তবে সবকিছু সহজ হয়নি। প্রতিনিয়ত হকার, ইজিবাইক চালক আর ভ্রাম্যমাণ দোকানদারদের সঙ্গে সংঘাতে জড়াতে হচ্ছে। “ময়ূরভিলায় দোকান উচ্ছেদ করলেও আবার বসে পড়ে। বসিলার ইউটার্নে ময়লা ফেলার প্রবণতাও বন্ধ হচ্ছে না। একবার তো সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্ন কর্মীকেই ধরা হলো ময়লা ফেলতে গিয়ে,”—বলেন তিনি।
সবচেয়ে বড় সমস্যাটা এখন রাস্তার কার্পেটিং না হওয়া। বৃষ্টি হলে কাদা, রোদে ধুলাবালি। বড় গাড়িগুলো প্রায়ই গর্তে আটকে পড়ে। ইউটার্ন এলাকায় আবার প্রায়ই ইট ভাঙার কাজ হয়, সেখান থেকেই ধুলার মাত্রা বেশি। এসব ঝামেলার মধ্যেই প্রতিদিন কাজ করতে হয় ট্রাফিক পুলিশকে।
তবে হতাশ নন মো. আসলাম সাগর। জানালেন, “তেজগাঁও ট্রাফিক বিভাগ, ডিএমপি ছাড়াও স্থানীয় বাসিন্দা ও ক্লাব সদস্যরা পাশে আছে। আশা করি খুব শিগগিরই মোহাম্মদপুর-বসিলা সড়কের পুরো চেহারাটাই বদলে যাবে।”