ইউরোপীয় ক্লাব ফুটবলের প্রভাব-প্রতিপত্তিই যেন হয়ে উঠেছে আধুনিক ফুটবলের অনিবার্য বাস্তবতা। গতি, কৌশল, তারকাখ্যাতি এবং প্রচারণা—সব দিক থেকেই ইউরোপীয় ক্লাবগুলোকেই ক্লাব বিশ্বকাপের ফেভারিট হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। তবে এবারের আসরে সেই ‘স্বাভাবিক’ ধারণাটিতে বড় ধাক্কা দিয়েছে লাতিন আমেরিকার দুটি ক্লাব।
টানা দুই দিন ইউরোপের শীর্ষ ক্লাবদের হারিয়ে চমক দিয়েছে ব্রাজিলের বোটাফোগো ও ফ্ল্যামেঙ্গো। টেকনিক, ঐতিহ্য এবং ফুটবলীয় জেদের এক অনন্য নিদর্শন গড়ে তারা বুঝিয়ে দিয়েছে—লাতিন ফুটবল এখনও বেঁচে আছে, এবং বেশ ভালোভাবেই। সদ্য উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ী পিএসজিকে হারিয়েছে কোপা লিবার্তাদোরেস চ্যাম্পিয়ন বোটাফোগো (১-০)। পরদিনই ইংলিশ জায়ান্ট চেলসিকে ৩-১ গোলে হারিয়ে চমক আরও বাড়িয়েছে ফ্ল্যামেঙ্গো।
চলমান ক্লাব বিশ্বকাপে ব্রাজিলের চারটি এবং আর্জেন্টিনার দুটি ক্লাব অংশ নিচ্ছে। এখন পর্যন্ত ব্রাজিলের সব ক্লাবই নিজেদের গ্রুপে শীর্ষে এবং অপরাজিত। পালমেইরাস, বোটাফোগো, ফ্ল্যামেঙ্গো ও ফ্লুমিনেন্স—চারটি দলই দেখিয়ে দিচ্ছে দক্ষিণ আমেরিকার ক্লাব ফুটবলের ধার। অন্যদিকে, আর্জেন্টিনার রিভারপ্লেট ‘ই’ গ্রুপে শীর্ষে, যদিও বোকা জুনিয়র্স রয়েছে তৃতীয় স্থানে।
ইউরোপীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে এই লাতিন জাগরণ নজরে এনেছে ম্যানসিটির কোচ পেপ গার্দিওলা ও বায়ার্নের ফরোয়ার্ড হ্যারি কেইনের মতো তারকাদের। গার্দিওলা বলেন, ‘মানুষ যখন বলে ইউরোপীয় দল হেরেছে, আমি বলি—স্বাগত আসল ফুটবলের জগতে। এই দলগুলো যেভাবে লড়াই করে, তা অসাধারণ।’ তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্বের অনেক সেরা ফুটবলারের উৎপত্তি দক্ষিণ আমেরিকা থেকেই। ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, কলম্বিয়া, উরুগুয়ে—সব দেশই ফুটবলকে অনেক কিছু দিয়েছে।’
একই সুর হ্যারি কেইনের কণ্ঠেও। তিনি বলেন, ‘এই ক্লাব বিশ্বকাপ অন্য রকম অভিজ্ঞতা দিচ্ছে। দক্ষিণ আমেরিকার দলগুলো ইউরোপীয় ক্লাবগুলোর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠছে। প্রতিযোগিতার গুরুত্ব বেড়েছে। এটা উপভোগ করছি এবং আমরা আরও এগিয়ে যেতে চাই।’
সবমিলিয়ে এবারের ক্লাব বিশ্বকাপ যেন কেবল এক টুর্নামেন্ট নয়—এটা বিশ্ব ফুটবলে লাতিন আমেরিকার পুনর্জাগরণের ঘোষণা। ইউরোপীয় আধিপত্যের ভিড়ে ফুটবলের পুরোনো প্রাণশক্তি আবারও আলোচনায় উঠে এসেছে লাতিন ছন্দে।