সার্বিয়ার রাজধানী বেলগ্রেডে প্রেসিডেন্ট আলেকসান্দার ভুচিচের ১২ বছরের শাসনের অবসান এবং তাৎক্ষণিক নির্বাচনের দাবিতে আয়োজিত বিক্ষোভে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শনিবার (২৮ জুন) বিকেলে আয়োজিত এই বিক্ষোভে পুলিশের কাঁদানে গ্যাস ছোড়া ও কয়েক ডজন বিক্ষোভকারীকে আটক করার ঘটনা ঘটেছে।
বেলগ্রেডের স্লাভিয়া স্কোয়ার ও আশপাশের এলাকাগুলোতে বিপুল সংখ্যক মানুষ ‘আমরা নির্বাচন চাই’ স্লোগান নিয়ে অবস্থান নেন। বিক্ষোভটি আসে প্রায় আট মাস ধরে চলা ছাত্র-নেতৃত্বাধীন আন্দোলনের ধারাবাহিকতায়, যার মাধ্যমে ভুচিচের দীর্ঘদিনের ক্ষমতার ভিত্তি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠেছে।
পুলিশ মহাপরিচালক দ্রাগান ভাসিলজেভিক জানিয়েছেন, সংঘর্ষে ছয় পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন এবং গ্রেফতার করা হয়েছে বহু বিক্ষোভকারীকে। স্বাধীন সংস্থা ‘আর্কাইভ অব পাবলিক গ্যাদারিংস’ জানিয়েছে, এদিনের বিক্ষোভে অংশ নেয় প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষ—যা এই আন্দোলনের ইতিহাসে অন্যতম বৃহৎ জমায়েত।
প্রেসিডেন্ট ভুচিচ তার ইনস্টাগ্রামে লিখেছেন, বিক্ষোভকারীরা ‘সার্বিয়াকে উৎখাত করতে চেয়েছিল’, তবে ব্যর্থ হয়েছে। অপরদিকে, আন্দোলনকারীরা এক বিবৃতিতে জানান, ‘ক্ষমতাসীনদের কাছে দাবি মানার যথেষ্ট সময় ও সুযোগ ছিল। কিন্তু তারা বেছে নিয়েছে দমননীতি।’
আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল ২০২৩ সালের নভেম্বরে, উত্তর সার্বিয়ার নোভি সাদ শহরের একটি রেলস্টেশনের ছাদ ধসে ১৬ জনের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে। অনেকেই এই দুর্ঘটনার পেছনে সরকারের অবহেলা ও অবকাঠামোগত দুর্নীতিকে দায়ী করেন।
পদত্যাগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী মিলোস ভুসেভিচ, তবে প্রেসিডেন্ট ভুচিচ রয়েছেন ক্ষমতায়। আইন বিভাগের ছাত্র স্টেফান ইভাকোভিচ বলেন, ‘আমরা আবার প্রমাণ করেছি, থামব না। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।’ উত্তর সার্বিয়ার সিদ শহরের কৃষক স্লাদজানা লোজানোভিচ বলেন, ‘ভুচিচ শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা ছাড়বেন বলে আমি মনে করি না।’
সমাবেশের আগে আন্দোলনকারীরা রাত ৯টার মধ্যে নির্বাচন ঘোষণার জন্য ভুচিচকে আলটিমেটাম দিয়েছিলেন। তার কোনো সাড়া না পেয়ে আয়োজকরা ঘোষণা দেন, জনগণ যেন ‘স্বাধীনতা নিজ হাতে নেয়’।
ভুচিচের দাবি, এই বিক্ষোভের পেছনে রয়েছে ‘বিদেশি শক্তি’। তিনি বলেন, পুলিশকে সংযত থাকতে বলা হয়েছে, তবে ‘নাশকতা সৃষ্টিকারীদের’ বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ হবে।
প্রেসিডেন্ট ভুচিচ তাৎক্ষণিক নির্বাচন দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে ২০২৭ সাল পর্যন্ত মেয়াদ পূর্ণ করার কথা বলেছেন। অথচ বিরোধীরা তার বিরুদ্ধে সংগঠিত অপরাধ, রাজনৈতিক দমন ও গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ এনে আসছে, যা সরকার অস্বীকার করে।
বিক্ষোভ শুরুর আগের দিন পুলিশ বেশ কয়েকজন বিরোধী কর্মীকে গ্রেফতার করে, যাদের বিরুদ্ধে সংবিধানবিরোধী তৎপরতা ও সন্ত্রাসবাদের অভিযোগ আনা হয়। এছাড়া একাধিক বিদেশি নাগরিককেও দেশে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। সমালোচকরা দাবি করেছেন, বিক্ষোভ ঠেকাতে ট্রেন পরিষেবা বন্ধ করতে ‘বোমা হামলার’ গুজব ছড়ায় সরকার—যা আগেও তারা করেছে।