যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনৈতিক আলোচনা ফের শুরু করতে হলে ওয়াশিংটনকে অবশ্যই ইরানের ওপর হামলার পরিকল্পনা বাদ দিতে হবে—এমনটাই জানিয়েছেন দেশটির উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাজিদ তাখত-রাভানছি। বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, “আমরা এখন একটি প্রশ্নের উত্তর চাই: আমরা যখন আলোচনায় থাকবো, তখন কি আবার হামলার পুনরাবৃত্তি হবে?” যুক্তরাষ্ট্র যদি এর পরিষ্কার জবাব না দেয়, তাহলে আলোচনা অর্থহীন বলেই মনে করছে তেহরান।
তাখত-রাভানছি জানান, যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসন মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে জানিয়েছে তারা আলোচনায় ফিরতে চায়। তবে একদিকে আলোচনার আগ্রহ, আরেকদিকে চলমান হামলার হুমকি—এই দ্বৈত অবস্থানকে “গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন” হিসেবে দেখছে ইরান।
উল্লেখ্য, গত ১৩ জুন ইসরায়েল ইরানে সামরিক অভিযান শুরু করে। এর মাত্র দুই দিন পর মাস্কটে ইরান-যুক্তরাষ্ট্রের ষষ্ঠ দফা আলোচনার কথা থাকলেও, আলোচনার আগেই যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পরমাণু স্থাপনাগুলোতে বোমা হামলা চালায়। লক্ষ্য ছিল ফোর্দো, নাতাঞ্জ ও ইসফাহান।
এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় তাখত-রাভানছি বলেন, “ইরান শান্তিপূর্ণ কাজে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণে সক্ষম এবং পরমাণু বোমা তৈরির অভিযোগ ভিত্তিহীন। গবেষণার জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তা না পেয়ে আমাদের নিজস্ব সক্ষমতার ওপর নির্ভর করতে হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “কোন মাত্রায় থাকবে বা কতটা সক্ষমতা থাকবে তা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। কিন্তু যদি বলা হয়, ‘তোমার সমৃদ্ধকরণ থাকবে না, না মানলে বোমা মারবো’—এগুলো জঙ্গলের আইন।”
ইসরায়েলের অভিযোগ ছিল—ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির দ্বারপ্রান্তে। এই অভিযোগে ইসরায়েল ইরানের পরমাণু স্থাপনায় হামলার পাশাপাশি বেশ কয়েকজন বিজ্ঞানী ও সামরিক কর্মকর্তাকে হত্যা করে। এর জবাবে পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান।
১২ দিনের এই সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রও সরাসরি ইরানের স্থাপনায় হামলা চালায়। যদিও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিয়ে এখনও ধোঁয়াশা রয়ে গেছে। ট্রাম্প দাবি করেছেন, “ইরানের পরমাণু স্থাপনা পুরোপুরি ধ্বংস।” তবে আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (IAEA)-র মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রসি জানান, স্থাপনাগুলো মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হলেও সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়নি, এবং ইরান কয়েক মাসের মধ্যেই পুনরায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ শুরু করতে পারবে।
এই পরিস্থিতিতে ইরানের পার্লামেন্ট IAEA’র সঙ্গে সহযোগিতা স্থগিতের প্রস্তাব পাস করেছে। তাদের অভিযোগ, সংস্থাটি যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলঘেঁষা আচরণ করছে।
তাখত-রাভানছি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রকে আগে নিশ্চিত করতে হবে—আলোচনার সময় আর কোনো হামলা চালানো হবে না। তা না হলে ইরান কোনো আলোচনায় অংশ নেবে না।” আলোচনা কবে শুরু হবে কিংবা এজেন্ডা কী, এসব বিষয় এখনও নির্ধারিত হয়নি বলেও জানিয়েছেন তিনি।