নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ‘স্বীকৃতি’ পেতে চায় আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও রুহুল আমিন হাওলাদারের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি।এর আগে গত শনিবার (৯ আগস্ট) এ দুজনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির কাউন্সিলও হয়। এর পরদিনই নবনির্বাচিত কমিটির চার জনের তালিকা নির্বাচন কমিশনে জমা দেন তারা।তালিকার অন্য দুজন হলেন সিনিয়র কো–চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশিদ ও নির্বাহী চেয়ারম্যান মুজিবুল হক চুন্নু।জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরকে বাদ দিয়ে দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা এ কাউন্সিল করেন। এ কাউন্সিলকে দলের ‘দশম কাউন্সিল’ বলেও জানান তারা। সেখানে আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে চেয়ারম্যান ও রুহুল আমিন হাওলাদারকে মহাসচিব নির্বাচন করা হয়।
তারা নিজেদের এ কমিটিকে জাতীয় পার্টির ‘মূল ধারা’ দাবি করেন। ওই কাউন্সিলকে গঠনতান্ত্রিকভাবে ‘বৈধ’ দাবি করে তারা বলছেন, লাঙ্গল প্রতীক ব্যবহারের বৈধ অধিকার কেবল তাদের কমিটিরই আছে। তবে চিঠিতে বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য নির্বাচন কমিশনের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন তারা।
জাতীয় পার্টির দশম কাউন্সিল পরবর্তী নবনির্বাচিত নেতৃত্বের’ তথ্য দিয়ে নির্বাচন কমিশন সচিবের বরাবরে এ চিঠি দেয়া হয়েছে সম্প্রতি। ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ৯ আগস্ট গুলশানের একটি কমিউনিটি সেন্টারে সারা দেশের প্রায় পাঁচ হাজার কাউন্সিলরের অংশগ্রহণে চার জনকে কণ্ঠভোটে কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির শীর্ষ পদে নির্বাচিত করা হয়েছে। শিগগিরই কমিশনে হালনাগাদ তথ্য দেয়া হবে।
তবে জাতীয় পার্টির ‘গঠনতন্ত্রে’ চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের একচ্ছত্র এখতিয়ার থাকায় এ আবেদন ইসি আমলে নেবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।ইসি কর্মকর্তারা জানান, এখন পর্যন্ত ইসিতে জি এম কাদেরের দল নিবন্ধিত ও প্রতীক লাঙ্গল। এ নিয়ে অন্য কারও কাউন্সিল আমলে নেয়ার কথা নয়। তবু যেকোনো ধরনের আবেদন এলে ইসির কাছে উপস্থাপন করা হয়, কমিশন বিষয়টি আলোচনা করে নিষ্পত্তি করবে।জি এম কাদের গত ৭ জুলাই তখনকার সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, কো-চেয়ারম্যান এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুসহ দলের ১০ নেতাকে অব্যাহতি দেন।
পরে অব্যাহতি পাওয়া নেতারা আদালতের দ্বারস্থ হলে গত ৩১ জুলাই জি এম কাদের ও যুগ্ম দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আলমের সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনার ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন আদালত। এরপর তাকে বাদ দিয়েই গত জাতীয় কাউন্সিল করেন বিদ্রোহী জ্যেষ্ঠ নেতারা।
এদিকে জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের দলীয় কার্যক্রমে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে। মামলার বাদী জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ মামলাটি প্রত্যাহার করে নেওয়ায় ঢাকার একটি আদালত জি এম কাদেরের দলীয় কার্যক্রমে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আদেশ প্রত্যাহারের এই আদেশ দেন। আজ বুধবার (১৩ আগস্ট) মামলাটিতে জি এম কাদেরের পক্ষে নিযুক্ত আইনজীবী মনোয়ার হোসাইন আলম সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
১২ আগস্ট বাদীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার যুগ্ম জেলা জজ অতিরিক্ত আদালতের বিচারক রোবায়েত ফেরদৌস মামলাটি প্রত্যাহারের আদেশ দেন। গত ২ আগস্ট মামলাটি প্রত্যাহারের আবেদন করেন জাতীয় পার্টির দফতর সম্পাদক এম এ রাজ্জাক খান।
এর আগে, গত ৩০ জুলাই জাতীয় পার্টির সদ্য অব্যাহতি পাওয়া মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুসহ দলটির সাবেক শীর্ষ দশ নেতার করা মামলায় সাংগঠনিক কার্যক্রমে চেয়ারম্যান হিসেবে জি এম কাদেরের নিষেধাজ্ঞা চাওয়া হলে ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. নুরুল ইসলাম তা মঞ্জুর করেন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০১৯ সালের ১৮ জুলাই পার্টির মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা গঠনতন্ত্রের পরিপন্থিভাবে জিএম কাদেরকে পার্টির চেয়ারম্যান ঘোষণা করেন। ওই বছরের ২৮ ডিসেম্বর জিএম কাদের পার্টির সম্মেলন ও কাউন্সিল করে অবৈধভাবে নতুন গঠনতন্ত্র অনুমোদন করেন। সর্বশেষ ২০২৫ সালের ২৮ জুন প্রাথমিক সদস্য পদসহ সব পদ থেকে দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্যসহ সাত জনকে, পরে আরো তিন জনকে অব্যাহতি দেয়া হয়। জাতীয় পার্টির নিজস্ব ওয়েবসাইট থেকেও তাদের নাম মুছে ফেলা হয়। ওই ঘটনায় গত ১০ জুলাই মুজিবুল হক চুন্নু, ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদসহ ১০ জন বাদী হয়ে একটি মামলা করেন।