জুলাই শহীদ জসিম উদ্দিনের মেয়ে ও পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার পাংগাশিয়া ইউনিয়নের আলোচিত কলেজছাত্রী লামিয়া ধর্ষণ মামলায় তিন কিশোর আসামিকে ১০ বছর করে বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি পর্নোগ্রাফি আইনে দুই আসামিকে আরো তিন বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন বিচারক।আজ বুধবার (২২ অক্টোবর) বেলা ১১টার দিকে পটুয়াখালী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক নিলুফার শিরিন আসামিদের উপস্থিতিতে এই রায় ঘোষণা করেন।পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, ‘এই মামলাটি ছিল বহুল আলোচিত।
১৬ জন সাক্ষীর জবানবন্দি শেষে আদালত ন্যায়বিচারের স্বার্থে এই রায় ঘোষণা করেছেন। যেহেতু আসামিরা অপ্রাপ্তবয়স্ক, তাই শিশু আইনের বিধান অনুযায়ী দণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে।’
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(৩) ধারায় তিন আসামি- সাকিব মুন্সী (১৭), সিফাত মুন্সী (১৭) ও ইমরান মুন্সীকে (১৭) ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেন আদালত। এ ছাড়া পর্নোগ্রাফি আইনে সাকিব ও সিফাত মুন্সীকে আরো তিন বছর করে কারাদণ্ড দেন আদালত।একটির পর একটি সাজা কার্যকর হবে।
রায় ঘিরে আজ সকাল থেকেই আদালত প্রাঙ্গণে ছিল কড়া নিরাপত্তা। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আসামিদের নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে আদালতে আনা হয়। রায় শুনতে আদালত চত্বরে ভিড় করেন স্থানীয়রা।২০২৫ সালের ১৮ মার্চ বিকেলে দুমকি উপজেলার দক্ষিণ পাংগাশিয়া গ্রামের শহীদ জসিম উদ্দিনের কন্যা ও দুমকি সরকারি জনতা কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী লামিয়া দাদার কবর জিয়ারত শেষে নানাবাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে মায়ের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলার সময় পাংগাশিয়ার আলগী গ্রামের মৃত জলিল মুন্সীর বাড়ির সামনে সড়ক পার হচ্ছিলেন তিনি। এ সময় তিন আসামি পিছু নিয়ে তার মুখ ও হাত চেপে ধরে পাশের বাগানে নিয়ে গিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করে। এরপর বিবস্ত্র অবস্থায় ছবি তোলে এবং বিষয়টি কাউকে জানালে ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়।পরদিন সকালে লামিয়া নিজেই দুমকি থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধিত ২০০৩) এর অধীনে মামলা দায়ের করেন।
তদন্তে তিনজনের সম্পৃক্ততা প্রমাণিত হলে দুমকি থানার তদন্ত কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম ১ মে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। দীর্ঘ সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আজ আদালত এই বহুল আলোচিত মামলার রায় ঘোষণা করে।
শহীদের পরিবারের ট্র্যাজেডি২০২৪ সালের ২৬ এপ্রিল ঢাকার শেখেরটেক এলাকার বাসা থেকে লামিয়ার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এর আগেই তার বাবা ‘জুলাই আন্দোলনে’ নিহত হন জসিম উদ্দিন। ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই মোহাম্মদপুরে পুলিশের গুলিতে আহত হওয়ার ১০ দিন পর মারা যান।লামিয়ার মা রুমা বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছেন, মেয়েকেও হারালাম। আমি বিচার চাই, যেন আর কোনো মা আমার মতো সন্তানহারা না হয়।’রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, ‘ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হয়েছে। এই রায় সমাজে একটি বার্তা দেবে।’
অন্যদিকে, আসামিপক্ষের আইনজীবী মো. শহিদুল ইসলাম তালুকদার বলেন, ‘আমার মক্কেলরা নির্দোষ। আদালতে আমরা ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করেছিলাম, কিন্তু সর্বোচ্চ শাস্তি হয়েছে। আমরা এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করব।’
Mytv Online