ভারতের বিরোধী দল কংগ্রেসের নেতা সম্প্রতি দেখিয়েছেন, হরিয়ানা রাজ্যের ভোটার তালিকায় ব্রাজিলীয় এক ‘মডেল’ নারীর ছবি ব্যবহার করে অন্তত ২২ জন ভোটারকে নিবন্ধন করা হয়েছে। দেশটির সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি সেই নারীর খোঁজ বের করে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছে। লারিসা নেরি নামে ওই নারী জানিয়েছেন, তিনি কোনো মডেল নন, বরং পেশায় হেয়ারড্রেসার। একই সঙ্গে রাহুল গান্ধীর দাবির বিষয়টি ভাইরাল হওয়া তিনি কিছুটা ভয়ও পেয়েছিলেন।
এনডিটিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে লারিসা বলেন, তিনি মনে করেন এই পুরো ‘পাগলামি’ আসলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) ফল। লারিসা বলেন, ‘শুরুতে আমি বুঝতেই পারিনি আসলে কী ঘটেছে। ভেবেছিলাম এটা কোনো বাজে রসিকতা। প্রথমে মনে হয়েছিল এটা এআই। ভিডিওতে যখন নিজের ছবি দেখলাম, তখন হাস্যকর লাগছিল। কিন্তু পরে যখন বুঝলাম কী হচ্ছে, তখন ভয় পেয়ে যাই। এখন জানি না কী করব। কারণ, আমি জানি না মানুষ আমার ছবিটা নিয়ে কী করছে। ভাষা না জানায় এই মিমগুলোও বুঝতে পারছি না।’
লারিসা জানান, ভাইরাল ছবিটি তোলা হয়েছিল প্রায় ৮ বছর আগে, যখন তাঁর বয়স ছিল কুড়ির মতো। তিনি বলেন, ‘একজন ফটোগ্রাফার বন্ধুর অনুরোধে ছবিটা তুলেছিলাম। সে সময় তাঁর কাজের প্রয়োজনে সাহায্য করতে চেয়েছিলাম। ছবিটা তোলা হয়েছিল আমার বাড়ির সামনে দেয়ালের পাশে, কোনো প্রফেশনাল শুট ছিল না এটি। আমি কখনো মডেল ছিলাম না। আমি বহু বছর ধরে হেয়ারড্রেসার হিসেবে কাজ করছি। আমি একদম সাধারণ মানুষ, যে কিনা ভুলবশত এই ঝামেলার মধ্যে পড়ে গেছে।’
অনলাইনে উইম্যান ওয়্যারিং ব্লু ডেনিম জ্যাকেট নামে ছবিটি পাওয়া যায় বিনা মূল্যে ডাউনলোডযোগ্য ছবি সাইট আনস্প্ল্যাশ ও পেক্সেলসে। সেখানে লারিসার নাম নেই, কিন্তু ফটোগ্রাফারের নাম দেওয়া আছে। তিনি হলেন—ব্রাজিলের বেলো হরিজন্তের মাতেউস ফেরেরো। দুই সাইটে মিলিয়ে ছবিটি চার লাখের বেশি বার ডাউনলোড হয়েছে।
লারিসা বলেন, ‘আমি আগেও দেখেছি ছবিটা নানা ফটো-এডিটিং অ্যাপে বা কিছু ব্র্যান্ড তাদের কাজে ব্যবহার করেছে। কিন্তু কখনোই এমন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নয়, যেমনটা এবার করা হয়েছে।’ তিনি আরও জানান, তিনি কখনো ভারতে আসেননি, এমনকি রাহুল গান্ধীর নামও শোনেননি।
লারিসা বলেন, এখন পর্যন্ত কোনো সরকারি সংস্থা তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেনি, শুধু সাংবাদিক ও সাধারণ মানুষ কথা বলছেন। তিনি বলেন, ‘কিছু ভারতীয় ও ব্রাজিলীয় নাগরিক আমাকে ইনস্টাগ্রামে মেসেজ পাঠাতে শুরু করেছে।’
ব্রাজিলীয় এই নারী আরও বলেন, ‘যদি এটা আমার কাজ বা ফটোগ্রাফারের কাজ প্রচারের জন্য হতো, তাহলে খুশি হতাম। কিন্তু এটা ভুলভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। এটা দুঃখজনক, কারণ আমার ছবি এমন কিছুর সঙ্গে জড়িয়ে গেছে। হয়তো একে হয়রানি বলা ঠিক নয়, কিন্তু এটা একধরনের আক্রমণ মনে হয়েছে। এটা মোটেও ভালো লাগেনি।’
রাহুল গান্ধী বুধবার অভিযোগ করেন, গত বছর হরিয়ানার বিধানসভা নির্বাচনে ব্যাপক ভোট জালিয়াতি হয়েছে। তিনি দাবি করেন, লারিসার ছবি হরিয়ানার রাই বিধানসভা কেন্দ্রের ভোটার তালিকায় ২২ বার পাওয়া গেছে। এই আসনেই বিজেপির কৃষ্ণ গেহলট কংগ্রেস প্রার্থী ভাগবান আনতিলকে ৪ হাজার ৬৭৩ ভোটে হারিয়েছিলেন।
যখন এক শ্রোতা বলেন ছবির নারী হরিয়ানার নয়, রাহুল গান্ধী জবাব দেন, ‘কিন্তু সে হরিয়ানায় ২২ বার ভোট দিয়েছে, ১০টা ভিন্ন বুথে ভোট দিয়েছে, তার নানা নাম আছে—সীমা, সুইটি, সরস্বতী, রশ্মি, বিমলা। এ এক ব্রাজিলীয় মডেলের ছবি।’ গান্ধী বলেন, এটা ছিল ‘কেন্দ্রীয়ভাবে পরিচালিত এক অপারেশন।’ তাঁর ভাষায়, ‘এই নারীর ছবিটা কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে ভোটার তালিকায় ঢোকানো হয়েছে, বুথ পর্যায় থেকে নয়।’
ভারতে ব্রাজিলীয় মডেলের ছবি দিয়ে ২২টি ভোটার আইডি, রাহুলের ‘এইচ বোমা’ভারতে ব্রাজিলীয় মডেলের ছবি দিয়ে ২২টি ভোটার আইডি, রাহুলের ‘এইচ বোমা’
তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন চাইলে এক সেকেন্ডেই এসব ডুপ্লিকেট নাম বাদ দিতে পারে। তারা কেন তা করছে না? কারণ, তারা বিজেপিকে সাহায্য করছে। আমি নির্বাচন কমিশন ও ভারতের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে প্রশ্ন করছি, এবং শতভাগ প্রমাণসহ করছি। আমরা নিশ্চিত, পরিকল্পনা করে কংগ্রেসের নিশ্চিত জয়কে পরাজয়ে পরিণত করা হয়েছে।’
ছবি ভাইরাল হওয়ার পর লারিসা ইনস্টাগ্রামে নিজের স্টোরিতে লিখেছিলেন, তাঁকে ‘ভারতীয় নারী’ হিসেবে দেখানো হচ্ছে মানুষকে ঠকানোর জন্য। বন্ধুরা, ওরা আমার পুরোনো ছবি ব্যবহার করছে। তখন আমার বয়স ছিল আঠারো থেকে কুড়ির মধ্যে। জানি না, এটা নির্বাচন নাকি ভোট সংক্রান্ত কিছু...আর সেটা ভারতে! ওরা আমাকে ভারতীয় হিসেবে দেখিয়ে মানুষ ঠকাচ্ছে। কী পাগলামি! কী অদ্ভুত দুনিয়া এটা! একজন সাংবাদিক আমাকে ফোন করেছিল এসব নিয়ে কথা বলতে, আমার কাজ, সেলুন নিয়ে জানতে চেয়েছিল। আমি সাড়া দিইনি। সে আমাকে ইনস্টাগ্রামে খুঁজে পেয়ে কল করেছিল। এখন আরেকজন বন্ধু, যার কোনো সম্পর্ক নেই, সে আবার ছবিটা পাঠাল—বিশ্বাসই হচ্ছে না।’
Mytv Online