বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন,অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা যদি আলোচনার জন্য আহ্বান জানান, বিএনপি অবশ্যই সেখানে অংশ নেবে। কিন্তু অন্য একটি রাজনৈতিক দল দিয়ে আহ্বান জানানোর প্রয়োজন কী? তারা কারা?
জামায়াতে ইসলামীকে উদ্দেশ করে সালাহউদ্দিন বলেন, আপনারা যারা ১৯৭১ সালে উল্টা দিকে যাত্রা করেছিলেন, ১৯৪৭ সালে বিপরীত দিকে যাত্রা শুরু করেছিলেন, জাতীয় পার্টির হাত ধরে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের সহচর হয়েছিলেন। আপনারা আবার যদি আওয়ামী লীগের হাত ধরে পুনরুত্থান চান। কী পরিণত হবে, আল্লাহ মালুম।আপনারা যা শুরু করেছেন তাতে উৎসাহিত হবে পতিত ফ্যাসিস্ট, তাতে উৎসাহিত হবে বাংলাদেশে অন্য যে কোনো রকমের অগণতান্ত্রিক শক্তি। যদি আপনারা বলতে চান যে, আপনারা খেতে পারবেন না, সেজন্য বাড়া ভাতে ছাই ছিটিয়ে দেবেন- সেটা বাংলাদেশের মানুষ আর কখনো গ্রহণ করবে না। সেই সুযোগ দেব না।
গতকাল শনিবার বিকেলে রাজধানীর কাকরাইলের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল আয়োজিত ‘ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের ৫০ বছর’ উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এসব মন্তব্য করেন তিনি।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন,আমরা মনে করেছিলাম- জাতীয় ঐকমত্য কমিশন রেফারির ভূমিকা পালন করবে। অন্তর্বর্তী সরকার অত্যন্ত নিরপেক্ষভাবে তার দায়িত্ব পালন করবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভূমিকা পালন করবেন। অথচ এখন আপনারা রেফারি হয়ে হাত দিয়ে একটা গোল দিয়ে দিয়েছেন। এখন বলছেন, রাজনৈতিক দলগুলোকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে সাত দিনের মধ্যে, না হলে আমরা সিদ্ধান্ত নেব।আমরা আপনাদেরকে সমর্থন করেছি,করব ওই সীমারেখার মধ্যে। আর যদি মনে করেন যে, আরেকটি রাজনৈতিক দল দিয়ে আমাদের আহ্বান জানাবেন আলোচনার জন্য। তারা কারা? অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা যদি আমাদেরকে আহ্বান জানান কোনো বিষয়ে আলোচনা করার জন্য, আমরা সব সময় আলোচনায় আগ্রহী, যাব।
অন্তর্বর্তী সরকারের এভাবে সময় বেঁধে দেওয়ার এখতিয়ারও নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, আপনারা কোনো নির্বাচিত সরকার নয়, এটা আপনারা যেন সব সময় এটা মনে রাখেন। আপনাদের এ রকম কোনো এখতিয়ার নেই, আমাদেরকে আদেশ করার যে, ৭ দিনের ভেতরে আপনার সিদ্ধান্ত না হলে আমরা সিদ্ধান্ত নেব, এত শক্তি প্রদর্শন আপনাদের বোধ হয় মানায় না।
জামায়াতের নায়েবে আমীর সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরের বক্তব্যের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, আপনারা ঘি খেতে চান, খান। কিন্তু আমরা বাংলাদেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য রাজপথের এই ময়দানকে অগণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আর উত্তপ্ত হতে দেব না। আপনারা বলেছেন ১১ নভেম্বর পর্যন্ত আল্টিমেটাম। আল্টিমেটাম কারা দিচ্ছে সরকারকে? সরকার তো আপনাদের পক্ষে সুপারিশ দিয়েছে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন তো আপনারা যা চান, তাই দিয়েছে। সেজন্য আপনারা তার সাথে সুর মিলিয়ে কথা বলছেন।পতিত ফ্যাসিস্টদের লকডাউনের কর্মসূচি ‘পাগলের সুখ মনে মনে’ বলেও মন্তব্য করেন সালাহউদ্দিন আহমদ।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের যারা রাজনীতিতে বিশ্বাস করে নাই কোনোদিন, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় যারা বিশ্বাস করে নাই কোনোদিন, ফ্যাসিবাদী কায়দায় এই দেশে দীর্ঘ অপশাসন চালিয়েছে তারা যাদের মাধ্যমে এদেশকে ‘করদ রাজ্য’ প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল। তাদেরকে সেই দেশে আশ্রয় দিয়েছে অর্থাৎ দিল্লিতে তারা আশ্রয় লাভ করেছে।এখন ওখান থেকে বসে যদি মানুষ বলে না যে, পাগলের সুখ মনে মনে- এখন আওয়ামী লীগ যদি মনে করে ১৩ নভেম্বর বাংলাদেশের মানুষ তাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে লকডাউন করবে তাহলে আপনাদের ৫ অগাস্ট বিদায় করে দিল কেন?
সালাহউদ্দিন বলেন, এই এক বছরের ভেতরে কীভাবে আপনাদের মনে হল যে, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদী শক্তির পক্ষে বাংলাদেশের জনগণ আপনাদের লকডাউনে সাড়া দেবে।আপনাদের যদি দুঃসাহস থাকে, আসুন- বাংলাদেশের মানুষে কীভাবে আপনাদের আপ্যায়ন করে দেখুন।
তিনি বলেন, আমরা চাই, আপনারা এসে বিচারের মুখোমুখি হোন। আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড়ান। আপনাদের সুবিচার নিশ্চিত করার দায়িত্ব এদেশের মানুষের।সেটা না করে পাগলের সুখ মনে মনে পাওয়ার জন্য দেশের মানুষকে আহ্বান করে এখানে লকডাউন হবে। তাহলে আমি মনে করি, তারা শুধু পতিত ফ্যাসিস্ট নয়, তাদের বোধহয় মতিষ্ক রীতিমত অসুস্থ।
ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিবের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছিরের সঞ্চালনায় সভায় ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক আমানুল্লাহ আমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায়সহ ছাত্রনেতারা বক্তব্য রাখেন।
Mytv Online