পরিবহন ও নগর পরিকল্পনার অব্যবস্থাপনা নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, ঢাকার রাস্তায় চলাচলকারী প্রায় সব বাসই “টক্সিক”, অর্থাৎ বিপজ্জনক কালো ধোঁয়া ছড়াচ্ছে। শহরের বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণের দায় রাষ্ট্রের হলেও গণপরিবহন ব্যবস্থার দুরাবস্থা এতটাই চরম যে বাসগুলো ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। একইসঙ্গে তিনি উন্নয়ন প্রকল্পের নামে মেট্রো স্টেশনের জন্য পার্ক বা উন্মুক্ত স্থান দখল অগ্রহণযোগ্য বলেও সতর্ক করেন। রোববার (২৩ নভেম্বর) বাংলাদেশ টিওডি (ট্রানজিট–অরিয়েন্টেড ডেভেলপমেন্ট) সেমিনারে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজওয়ানা হাসান বলেন, স্মার্ট পরিবহন নীতি এখনও দৃশ্যমান নয়। এর ফলে নভেম্বর-ডিসেম্বরে ঢাকার বায়ুদূষণ পরিস্থিতি বিশ্বের মধ্যে শীর্ষে ওঠে। প্রতিদিন আমি দেখি, বাসগুলো একটার পর একটা কালো ধোঁয়া ছাড়ছে। একেকটা যেন চলন্ত দূষণ-কারখানা।এসময় মেট্রোর স্টেশন নির্মাণে আনোয়ারা পার্ক ও পান্থকুঞ্জ পার্ক ব্যবহারের প্রসঙ্গ টেনে রিজওয়ানা হাসান বলেন, উন্মুক্ত স্থান রক্ষা বাধ্যতামূলক। মানুষের আশেপাশে খোলা জায়গা নেই। ভূমিকম্পের মতো দুর্যোগে আশ্রয় নেওয়ার মতো জায়গা ঢাকায় হাতে গোনা। তাই পার্ক দখলের সংস্কৃতি চলতে পারে না।
তিনি বলেন, টিওডি একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ, কিন্তু এটা স্মার্ট পরিবহন নীতির অংশমাত্র। তাই নতুন বাজার, স্টেশন বা অবকাঠামো পরিকল্পনার আগে জানতে হবে কোন এলাকায় মানুষের কী দরকার।তিনি বলেন, ঢাকা শহর বাজারে ভরপুর। আর বাজার মানেই বিশৃঙ্খলা, পার্কিং–চাপ। তাই টিওডির নামে নতুন বাজার বানানোর ধারণা আমি সতর্কতার সঙ্গে দেখি।বায়ুদূষণ, উন্মুক্ত স্থান সংকট এবং ‘দুর্বল শাসনব্যবস্থা’- প্রসঙ্গে উদ্বেগ জানিয়ে রিজওয়ানা হাসান বলেন, নিমতলী ও চকবাজারের আগুনের মতো বিপর্যয়ও আমাদের শিক্ষা দেয়নি। রাসায়নিক গুদাম সরাতে দুটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হলেও অগ্রগতি বেদনাদায়ক ধীর।
এসময় পরিবেশ উপদেষ্টা ঢাকার পরিচ্ছন্নতা নিয়েও তিনি প্রশ্ন তোলেন। শহরের বিভাজক ও খালি জমি সবুজায়নে সরকারি প্রক্রিয়ার জটিলতা ও ধীরগতির কথা তুলে তিনি বলেন, বর্ষায় গাছ লাগালে রক্ষণাবেক্ষণের ঝুঁকি কমে। কমিউনিটিকে যুক্ত করুন, তারা নিজেরাই সবুজ রক্ষা করবে।
রিজওয়ানা হাসানের মতে, টিওডি প্রকল্পের সাফল্য নির্ভর করবে মানুষের অংশগ্রহণের ওপর। পরিকল্পনা টেবিলে বসে হয়, কিন্তু টিকে থাকে তখনই যখন কমিউনিটি মনে করে-এটা তাদের। তিনি আশা প্রকাশ করেন, জাইকা ও রাজউকের অংশীদারিত্ব টেকসই উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করবে এবং ঢাকার মানুষের জন্য আরও খোলা জায়গা, নিরাপদ গণপরিবহন ও সবুজায়ন নিশ্চিত করবে।
Mytv Online