অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে অবশেষে নিজ দেশ ভারতের মাটিতে ফিরলেন সোনালী খাতুন। অন্তঃসত্ত্বা সোনালীর সঙ্গে তখন তাঁর ৮ বছরের সন্তান সাব্বির। গতকাল শুক্রবার চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ সীমান্ত দিয়ে বিজিবি সদস্যরা ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিএসএফের হাতে ওই নারী ও তাঁর শিশুসন্তানকে হস্তান্তর করে। নিজ দেশে ফেরত যাওয়ার সময় সোনালীর চোখমুখ ছিল অন্ধকার। মুখে ছিল না হাসির রেখা। কারণ তাঁর স্বামী দানেশ তাদের সঙ্গে ফিরতে পারেননি।
২৫ জুন বিএসএফ কুড়িগ্রাম সীমান্ত দিয়ে ছয় ভারতীয় নাগরিককে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠায় (পুশইন)। এরপর তারা চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় প্রবেশ করলে স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে গ্রেপ্তার করে। ২২ আগস্ট আদালতের নির্দেশে তাদের জেলহাজতে পাঠানো হয়। আটক ব্যক্তিদের মধ্যে অন্তঃসত্ত্বা ভারতীয় নারী সোনালী, তাঁর নাবালক শিশু ও স্বামী দানেশও ছিলেন। মানবিক বিবেচনায় আদালত ২ ডিসেম্বর তাদের স্থানীয় জিম্মায় প্রদান করেন ও কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে দেশে ফেরত পাঠানোর নির্দেশনা দেন। ভারতীয় হাইকমিশনের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে অন্তঃসত্ত্বা নারী ও শিশুর পুশইনজনিত মানবিক ঝুঁকি ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি নজরে রেখে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বিজিবি সদরদপ্তর কূটনৈতিক পর্যায়ে নিবিড় যোগাযোগ স্থাপন করে। উভয় দেশের সম্মতিতে ভারতীয় নাগরিকদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল সোনালী ও তাঁর সন্তানকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হলো।
দেশে ফেরার সময় সোনালী বলেন, আমার বাড়ি পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলায়। ভারতের পুলিশ আমাদের দিল্লি থেকে ধরেছে। আমার স্বামীকে ছেড়ে দেবে বলেছিল। আমরা বাংলায় কথা বলেছিলাম।
মহানন্দা ব্যাটালিয়নের (৫৯ বিজিবি) অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল গোলাম কিবরিয়া বলেন, বিএসএফের এ ধরনের অমানবিক পুশইন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ড এবং দ্বিপক্ষীয় সীমান্ত ব্যবস্থাপনা চুক্তির স্পষ্ট লঙ্ঘন। দীর্ঘদিন ধরে এ ধরনের কর্মকাণ্ড সীমান্ত এলাকায় মানবিক সংকট তৈরি করছে, উভয় দেশের সৌহার্দ্যপূর্ণ সীমান্ত ব্যবস্থাপনার প্রতিবন্ধকতা হিসেবে দেখা দিচ্ছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকার, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং বিজিবি মানবিক মূল্যবোধ, আন্তর্জাতিক আইন ও প্রতিবেশীসুলভ সম্পর্ককে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে পুরো প্রক্রিয়াটি সম্মানজনকভাবে সম্পন্ন করেছে। বিশেষ করে অন্তঃসত্ত্বা নারী ও শিশুর সুরক্ষা নিশ্চিত করে বিজিবি দায়িত্বশীলতা ও মানবিকতার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। বিজিবি আশা প্রকাশ করেছে, ভবিষ্যতে বিএসএফ পুশইনসহ এমন আন্তর্জাতিক আইনবিরোধী কর্মকাণ্ড বন্ধ করবে এবং সীমান্তে মানবিক, দায়িত্বশীল ও আইনসম্মত আচরণ বজায় রাখবে।
ভারতের পুশইন করা ছয়জন হলেন– পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার মন্নু শেখের ছেলে দানেশ (২৮), ভোদু শেখের মেয়ে সোনালী খাতুন (২৬), সেরাজুল শেখের মেয়ে সুইটি বিবি (৩৩), আজিজুল দেওয়ানের ছেলে কুরবান শেখ (১৬) ও ইমাম দেওয়ান (৬) এবং দানেশের ছেলে সাব্বির শেখ (৮)।
এদিকে সুইটি বিবির আরেক সন্তান মো. ইমাম দেওয়ান (৬) ও সোনালী বিবির সন্তান সাব্বির শেখ (৮) কারাগারে বন্দি থাকলেও মামলার আসামি ছিল না।
বাংলাদেশে পুশইনের শিকার পশ্চিমবঙ্গের সোনালী এবং তাঁর আট বছরের সন্তানকে ভারতে ফিরিয়ে আনতে হবে বলে গত বুধবার দেশটির কেন্দ্রীয় সরকারকে নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। একই সঙ্গে দেশে ফিরিয়ে আনার পরে তাঁর চিকিৎসার ব্যবস্থা করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কেউ ভারতের নাগরিক কিনা, তা যাচাই করার জন্য কেন্দ্রের পদ্ধতি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন আদালত।
Mytv Online