এখন আর দপ্তরে ঘুরে ঘুরে কাজ করার প্রয়োজন নেই। ঘরে বসেই অনলাইনে আবেদন করা থেকে শুরু করে ফি পরিশোধ পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়াটি মাত্র কয়েকটি ধাপেই সম্পন্ন করা যায়। ই-পাসপোর্টের আবেদন পদ্ধতিটি আগে থেকে জানা থাকলে অপ্রয়োজনীয় ঝামেলা কমে, পাশাপাশি সময় ও পরিশ্রম দুটোই সাশ্রয় হয়। ই-পাসপোর্টের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো এখানে সহজভাবে তুলে ধরা হলো।ই-পাসপোর্টের আবেদন প্রক্রিয়াটি মূলত পাঁচটি সহজ ধাপে সম্পন্ন করা যায়। প্রতিটি ধাপ ঠিকভাবে অনুসরণ করলে বাড়তি ঝামেলা ছাড়াই পাসপোর্ট পাওয়া সম্ভব।
ই-পাসপোর্টের সরকারি ওয়েবসাইটে
শুরুতেই নিশ্চিত হতে হবে, আপনি যে এলাকায় বসবাস করছেন সেখানে ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম চালু হয়েছে কি না। এ তথ্য জানার জন্য ই-পাসপোর্টের সরকারি ওয়েবসাইটে ঢুকে সংশ্লিষ্ট নির্দেশনা দেখে নেয়া যেতে পারে। এতে আবেদন করার আগে অপ্রয়োজনীয় সময় নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়।
অনলাইনে আবেদন
ওয়েবসাইটে প্রবেশ করার পর সেখানে থাকা ‘অনলাইনে আবেদন’ অপশনে ক্লিক করতে হবে। এরপর বর্তমান ঠিকানার জেলা ও থানা নির্বাচন করে এগোতে হবে। একটি সক্রিয় ও বৈধ ইমেইল ঠিকানা দিয়ে অনলাইন ফর্মে নাম, জন্মতারিখ, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বরসহ প্রয়োজনীয় ব্যক্তিগত তথ্যগুলো সতর্কতার সঙ্গে পূরণ করতে হবে। সব তথ্য যাচাই করে ফর্মটি সাবমিট করলে আবেদনপত্রের একটি প্রিন্টযোগ্য কপি তৈরি হবে, যা পরবর্তী ধাপে কাজে লাগবে।
পাসপোর্টের ফি পরিশোধ
পাসপোর্টের ফি নির্ধারণ করা হয় পাসপোর্টের মেয়াদ পাঁচ বছর নাকি দশ বছর এবং পৃষ্ঠাসংখ্যা ৪৮ নাকি ৬৪—এই বিষয়গুলোর ওপর ভিত্তি করে। আবেদনকারীর প্রয়োজন অনুযায়ী ফি ভিন্ন হতে পারে। ফি পরিশোধের ক্ষেত্রে অনলাইনে ব্যাংক কার্ড, মোবাইল ব্যাংকিং যেমন বিকাশ বা নগদের মাধ্যমে সহজেই অর্থ দেয়া যায়।
চাইলে অনুমোদিত ব্যাংকে গিয়ে সরাসরি নগদেও ফি জমা দেওয়া সম্ভব, সেক্ষেত্রে ব্যাংক স্লিপের নম্বর আবেদন ফরমে যুক্ত করতে হয়। ফি পরিশোধের পর প্রাপ্ত রসিদটি অবশ্যই সংরক্ষণ করা জরুরি, কারণ পাসপোর্ট অফিসে উপস্থিত হলে এটি দেখাতে হতে পারে।
ই-পাসপোর্টের ফি নির্ধারণ
দেশের ভেতরে আবেদনকারীদের ক্ষেত্রে ই-পাসপোর্টের ফি নির্ভর করে পৃষ্ঠাসংখ্যা, মেয়াদ এবং ডেলিভারির ধরন অনুযায়ী। ৪৮ পৃষ্ঠার পাঁচ বছর মেয়াদি পাসপোর্টের জন্য সাধারণ সেবায় ফি ৪ হাজার ২৫ টাকা, জরুরি সেবায় ৬ হাজার ৩২৫ টাকা এবং অতি জরুরি সেবায় ৮ হাজার ৬২৫ টাকা দিতে হয়। একই পাসপোর্ট যদি দশ বছর মেয়াদি হয়, তাহলে সাধারণ সেবায় ফি দাঁড়ায় ৫ হাজার ৭৫০ টাকা, জরুরি সেবায় ৮ হাজার ৫০ টাকা এবং অতি জরুরি সেবায় ১০ হাজার ৩৫০ টাকা।
অন্যদিকে, ৬৪ পৃষ্ঠার পাঁচ বছর মেয়াদি পাসপোর্টের ক্ষেত্রে সাধারণ সেবার ফি ৬ হাজার ৩২৫ টাকা, জরুরি সেবায় ৮ হাজার ৬২৫ টাকা এবং অতি জরুরি সেবায় ১২ হাজার ৭৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর ৬৪ পৃষ্ঠার দশ বছর মেয়াদি পাসপোর্টের জন্য সাধারণ সেবায় দিতে হবে ৮ হাজার ৫০ টাকা, জরুরি সেবায় ১০ হাজার ৩৫০ টাকা এবং অতি জরুরি সেবায় ফি ১৩ হাজার ৮০০ টাকা।
বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহ
অনলাইন আবেদন জমা দেয়ার পর আপনার দেয়া তথ্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে পাসপোর্ট অফিসের সার্ভারে পাঠানো হয়। এরপর নির্ধারিত তারিখে আবেদনপত্রের প্রিন্ট কপি ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সঙ্গে নিয়ে সংশ্লিষ্ট পাসপোর্ট অফিসে উপস্থিত হতে হবে। সেখানে আবেদনকারীর ছবি তোলা হবে, আঙুলের ছাপ নেয়া হবে এবং ডিজিটাল স্বাক্ষর গ্রহণের মাধ্যমে বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
আবেদনকারীর বয়স ও পরিস্থিতি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ভিন্ন হতে পারে। ১৮ বছরের বেশি বয়সীদের ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্রের মূল কপি ও একটি ফটোকপি লাগবে। ঠিকানা প্রমাণের জন্য নাগরিক সনদ অথবা বিদ্যুৎ বিলের কপি দিতে হতে পারে। আবেদনকারী বিবাহিত হলে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে কাবিননামার একটি কপি প্রয়োজন হয়। আগে কোনো পাসপোর্ট থাকলে তার কপিও জমা দিতে হবে। পাশাপাশি যারা সরকারি চাকরিতে কর্মরত, তাদের ক্ষেত্রে জিও বা এনওসি প্রয়োজন হতে পারে।
সেকেন্ডহ্যান্ড বাইক কিনে পড়তে পারেন বিপদে; যেসব বিষয়ে সতর্ক থাকা জরুরি
১৮ বছরের কম বয়সী আবেদনকারীদের জন্য জন্মনিবন্ধন সনদ বাধ্যতামূলক। সঙ্গে বাবা-মায়ের জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি ও তাদের ছবি দিতে হয়। ছয় বছরের কম বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট মান অনুযায়ী ৩-আর সাইজের ল্যাব প্রিন্ট ছবি জমা দিতে হয়, যেখানে ব্যাকগ্রাউন্ড হবে ধূসর।
আর যদি পাসপোর্ট হারিয়ে যায়, সে ক্ষেত্রে থানায় করা সাধারণ ডায়েরির মূল কপি জমা দেয়া বাধ্যতামূলক। সম্ভব হলে পুরোনো পাসপোর্টের একটি ফটোকপিও সঙ্গে রাখতে হবে।
পাসপোর্ট সংগ্রহ
পাসপোর্ট প্রস্তুত হয়ে গেলে আবেদনকারীর মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হয়। এরপর নির্ধারিত সময়ে পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে ডেলিভারি স্লিপ বা ফি পরিশোধের রসিদ দেখিয়ে পাসপোর্ট সংগ্রহ করা যায়। প্রয়োজনে আবেদনকারীর পক্ষ থেকে অনুমোদিত কোনো প্রতিনিধি জাতীয় পরিচয়পত্রসহ উপস্থিত হয়ে পাসপোর্ট গ্রহণ করতে পারেন।
পাসপোর্ট বিতরণের সময়সীমা
পাসপোর্ট বিতরণের সময়সীমাও সেবার ধরন অনুযায়ী ভিন্ন হয়। নিয়মিত সেবায় বায়োমেট্রিক তথ্য গ্রহণের পর সাধারণত ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে, অর্থাৎ প্রায় ২১ দিনের মধ্যে পাসপোর্ট দেওয়া হয়। জরুরি সেবার ক্ষেত্রে সময় লাগে প্রায় ৭ কর্মদিবস বা ১০ দিন। আর অতি জরুরি সেবায় সাধারণত ২ কর্মদিবসের মধ্যেই পাসপোর্ট হস্তান্তর করা হয়।
আবেদনের অগ্রগতি
আবেদন জমা দেয়ার পর ই-পাসপোর্ট পোর্টালের মাধ্যমে খুব সহজেই আবেদনের অগ্রগতি জানা যায়। এজন্য ওয়েবসাইটে গিয়ে ‘স্ট্যাটাস চেক’ অপশনে প্রবেশ করতে হবে। সেখানে জন্মতারিখ ও আবেদনের ক্রমিক নম্বর দিয়ে সার্চ করলে বর্তমান অবস্থার তথ্য দেখা যাবে। পাশাপাশি যারা অনলাইনে অ্যাকাউন্ট খুলে আবেদন করেছেন, তারা নিজের পোর্টাল অ্যাকাউন্টে লগইন করেও সব আবেদন সংক্রান্ত হালনাগাদ অবস্থা এক জায়গা থেকেই দেখতে পারেন।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ও সতর্কতা মাথায় রাখা প্রয়োজন। ১৮ বছরের কম বয়সীদের জন্য পাসপোর্টের মেয়াদ স্বয়ংক্রিয়ভাবে ৫ বছর এবং পৃষ্ঠাসংখ্যা ৪৮ নির্ধারিত হয়। জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকলে পিতা বা মাতার জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ফর্মে উল্লেখ করতে হবে। এছাড়া, আবেদন ফর্ম পূরণের সময় সব তথ্য যথাযথভাবে দেওয়াটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ ভুল বা অসম্পূর্ণ তথ্যের কারণে আবেদন বাতিল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
পুলিশ ভেরিফিকেশন
এখন থেকে পাসপোর্ট আবেদনের জন্য আলাদা পুলিশ ভেরিফিকেশনের প্রয়োজন নেই। সরকারের পক্ষ থেকে জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) তথ্যের ভিত্তিতে আবেদনকারীর পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়। এই পরিবর্তন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগ থেকে অনুমোদিত সারসংক্ষেপে নিশ্চিত করা হয়েছে।
পুলিশ ভেরিফিকেশন শিথিল করার মূল যুক্তি হলো ইতিবাচক পুলিশ প্রতিবেদন থাকলে আবেদনকারীকে সহজেই পাসপোর্ট দেয়া সম্ভব।
বিদ্যমান প্রক্রিয়ায়, সাধারণ পাসপোর্ট সাধারণত ১২ কর্মদিবসের মধ্যে এবং এক্সপ্রেস ডেলিভারির ক্ষেত্রে মাত্র তিন কর্মদিবসের মধ্যে ইস্যু হয়ে যায়।
Mytv Online