৪০ বছর বয়সী এলিরান মিজরাহি, চার সন্তানের বাবা এবং প্রাক্তন ইসরায়েলি সেনা, গত বছর হামাসের হামলার পর গাজায় লড়াই করতে পাঠানো হয়। আহত হয়ে দেশে ফিরলেও, তার মানসিক অবস্থা বদলে যায়। গাজায় যে ভয়াবহতা সে দেখেছিল, তা তাকে তাড়া করত, ফলে চরম ট্রমায় ভুগতে শুরু করে। অবশেষে, পুনরায় গাজায় পাঠানোর আগে আত্মহত্যা করেন তিনি।
এলিরানের মা জেনি মিজরাহি সিএনএনকে জানান, “সে গাজা ছেড়েছিল, কিন্তু গাজা তাকে ছাড়েনি।” চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায়, এলিরান ‘পোস্টট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডার’ (পিটিএসডি) নামক মানসিক সমস্যায় ভুগছিলেন। গাজার যুদ্ধ থেকে ফিরে আসা হাজার হাজার ইসরায়েলি সেনা একই সমস্যা মোকাবেলা করছেন, তবে আত্মহত্যার সঠিক সংখ্যা জানা যায়নি।
গাজার পরিস্থিতি ভয়াবহ। গত ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় ১,২০০ জন নিহত হয়, এবং ইসরায়েলের বোমা হামলায় গাজায় নারী ও শিশু সহ ৪২,০০০ এর বেশি মানুষ মারা গেছে। এলিরানের বোন শিরের মতে, যুদ্ধের কারণে তার ভাইয়ের মৃত্যু হয়েছে। গাজার ভয়াবহতা দেখে এলিরান অনুভব করতেন, “আমি যে কী দেখে এসেছি, তা কেউ বুঝবে না।”
গাজার চার মাসে এলিরান বুলডোজার চালানোর কাজ করেছিলেন। যুদ্ধক্ষেত্রে ভয়াবহ দৃশ্য দেখে তার মানসিক স্বাস্থ্য দ্রুত খারাপ হতে থাকে। চিকিৎসা নেয়ার পরও তার সমস্যা সমাধান হয়নি। এলিরান পরিবারের কাছে জানাতেন, “গাজার পরিস্থিতি কেবল সেখানকার মানুষরাই বুঝতে পারবে।”
যুদ্ধের পর এলিরানের বন্ধুরা এই অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন। তাদের মতে, গাজার দৃশ্য তাদের খাবার খেতে এবং ঘুমাতে প্রভাবিত করছে। ইসরায়েলি সেনাদের মধ্যে গাজার বেসামরিক জনগণের প্রতি অবিশ্বাস তৈরি হয়েছে। অনেক সেনা গাজার যুদ্ধের কারণেই মানসিক সমস্যায় ভুগছেন।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গাজা যুদ্ধ থেকে ফিরে আসা এক-তৃতীয়াংশ সেনা মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যায় ভুগছেন। চলতি বছরের শেষ নাগাদ ১৪,০০০ সেনাকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করা হবে।
গাজার যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে, ইসরায়েলে আত্মহত্যার হার বাড়ছে। ২০২১ সালে অন্তত ১১ জন সেনা আত্মহত্যা করেছেন। বর্তমানে এই সমস্যা সম্পর্কে আলোচনা বৃদ্ধি পাচ্ছে, তবে সমস্যার গভীরতা এবং ফলাফল নিয়ে যথেষ্ট উদ্বেগ রয়েছে।
সুত্র- সিএনএন