ঢাকা , বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫ , ১৭ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
শেষবার গুলশানের বাসায় খালেদা জিয়া খালেদা জিয়ার জানাজা কখন, কে পড়াবেন? পাকিস্তানের স্পিকার ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ কয়েকটি দেশের প্রতিনিধিরা আসছেন রুমিন ফারহানাকে বহিষ্কার করলো বিএনপি খালেদা জিয়ার জানাজায় যোগ দিতে ঢাকামুখী বিএনপির নেতাকর্মীরা খালেদা জিয়ার মরদেহ এভারকেয়ার থেকে যে পথে নেওয়া হবে খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোকে কাতর পুরো জাতি কান্নার রোল নয়াপল্টনে, চলছে কোরআন খতম হিরো আলম যোগ দেওয়ায় দল থেকে বেরিয়ে গেলেন সাধনা রাষ্ট্রীয় শোকের মধ্যে প্রাথমিকে নিয়োগ পরীক্ষা, যা জানাল অধিদপ্তর তীব্র শীতের মধ্যেই বৃষ্টির পূর্বাভাস খালেদা জিয়ার প্রয়াণে আমি শোকাহত: মমতা ব্যানার্জি মায়ের মৃ’ত্যু’তে ফেসবুকে তারেক রহমানের আবেগঘন পোষ্ট প্রথমবারের মতো অপারেশন সিঁদুরে ক্ষয়ক্ষতির কথা স্বীকার করল পাকিস্তান যদি রাস্তায় কাগজ বা ময়লা পড়ে থাকে আমরা সরিয়ে দেবো: তারেক রহমান কারাবন্দি বুশরা বিবিকে নিয়ে জাতিসংঘের উদ্বেগ শাহবাগে যানচলাচল বন্ধ, ডাইভারশনে ধীরগতিতে চলছে গাড়ি ঢাকা-৮ আসনে এনসিপির হয়ে লড়বেন নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন গণঅধিকারের আবু হানিফ ঢাকা-১৫ আসনে মনোনয়ন জমা দিলেন জামায়াত আমির

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোকে কাতর পুরো জাতি

  • আপলোড সময় : ৩১-১২-২০২৫ ০৮:১৮:৪৫ পূর্বাহ্ন
  • আপডেট সময় : ৩১-১২-২০২৫ ০৮:১৮:৪৫ পূর্বাহ্ন
খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোকে কাতর পুরো জাতি
মঙ্গলবার সকাল ৬টা। সূর্যের আলো ফোটার আগেই দেশের আকাশটা হঠাৎই যেন অস্বাভাবিকভাবে ভারি হয়ে ওঠে। ঘনকুয়াশা আর হিম বাতাসেও এক ধরনের স্তব্ধতা, অজানা শূন্যতার হাহাকারে ভরা। ঠিক সেই সময়ে পৃথিবীকে বিদায় জানালেন খালেদা জিয়া। এ খবর বিদ্যুৎগতিতে ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে। মুহূর্তেই শোকে স্তব্ধ পুরো দেশ। শিশু থেকে বৃদ্ধ, সবার চোখ অশ্রুতে সিক্ত। সব ধর্ম, দল-মত নির্বিশেষে বাদ যাননি কেউ। বুক চাপরে কাঁদছেন নেতাকর্মীরা। কাঁদছে দেশ। এতদিন যার কণ্ঠে ছিল ঐক্য ও গণতন্ত্রের বাণী, যার নেতৃত্বে স্বপ্ন দেখতে শিখেছি, তিনি আজ নেই-এই সত্যটা মেনে নেওয়া যেন অসম্ভব। তাই তো বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মৃত্যুর খবরে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের পথে নেতাকর্মীদের ঢল নামে। তাদের কান্নার শব্দে ভারী হয়ে ওঠে হাসপাতাল এলাকা। কেউবা নীরবে অশ্রুসিক্ত, আবার কেউবা স্মৃতিচারণ করেছেন। মঙ্গলবার দিনভর এমনই দৃশ্যই চোখে পড়ে।

এছাড়াও বিএনপির নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় ও গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়েও নেতাকর্মীদের কান্নার রোল পড়ে। অনেককেই বিলাপ করতে করতে মূর্ছা যেতেও দেখা যায়। সারা দেশের দলীয় কার্যালয়গুলোতেও নেতাকর্মীরা শোকে হয়েছে মুহ্যমান।

বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মৃত্যুর খবর শুনে এদিন ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে নেতাকর্মীরা এভারকেয়ারে ছুটে আসেন এক পলক দেখতে। নেতাকর্মী, সমর্থক, সাধারণ মানুষ-সব মিলিয়ে হাসপাতালের প্রধান ফটক পরিণত হয় শোক, নীরবতা ও আবেগের এক প্রান্তরে। এদিকে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে সরকার। ৭ দিনের শোক কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপি। খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোকে ভাসছে নেট দুনিয়া।

সরেজমিন দেখা যায়, বিএনপির শীর্ষ নেতারা এভারকেয়ার হাসপাতালে অবস্থান করছেন। বাইরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যারিকেড। প্রধান ফটকে হাজারো মানুষের অপেক্ষা। তাদের সবার চোখে পানি। তাদের কেউ কেউ নেত্রীকে একপলক দেখতে তীব্র শীত উপেক্ষা করে শত শত মাইল দূর থেকে এসেছেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উপস্থিতি আরও বাড়তে থাকে। তাদের অনেক নেতাকর্মী একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছেন।

নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এদিন এভারকেয়ারের পথে যেসব মানুষের ঢল নেমেছে, তাদের অনেকেই সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নন। কেউ এসেছেন দীর্ঘদিনের পরিচিত এক রাজনৈতিক চরিত্রের প্রস্থান দেখতে, কেউ এসেছেন কেবল শোক প্রকাশ করতে। তাদের অনেকেই বলছিলেন, ‘খালেদা জিয়াকে টিভি, পত্রিকায় দেখে বড় হয়েছি, তিনি আর নেই, এটা নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস হচ্ছিল না।’

সকাল সোয়া দশটা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যারিকেডের পাশেই অঝোরে কান্না করছিলেন আলেয়া বেগম নামের ৬০ বছর বয়সি এক বৃদ্ধা। সকালে টেলিভিশনে খালেদা জিয়ার মৃত্যুর খবর পান তিনি। নিজেকে ঠিক রাখতে পারেননি। এজন্য ১৩ বছর বয়সি নাতিকে নিয়ে নারায়ণগঞ্জ থেকে এভারকেয়ারের সামনে আসেন তিনি। হাসপাতালে প্রবেশ করতেও চেয়েছেন-তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঢুকতে দেয়নি। পরে পাশেই বসে অঝোরে কান্না করছেন আর বারবার আল্লাহর দরবারে হাত তুলে খালেদা জিয়ার জন্য দোয়া করছেন। চোখ মুছে আলেয়া বেগম বলেন, খালেদা জিয়াকে মায়ের মতোই ভালোবাসি। বিভিন্ন কারণে কয়েকবার তার সঙ্গে দেখা হয়েছে। তাই খবর পেয়ে শেষবারের মতো এক নজর দেখতে আসছি।

ভোরে ফজরের নামাজ শেষে বন্ধুদের সঙ্গে হাঁটতে বের হয়েছিলেন বগুড়ার সোনাতলার ৬৫ বছর বয়সি আনোয়ার হোসেন। মোবাইলে ফেসবুক চালু করতেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে খালেদা জিয়ার মৃত্যুর খবর। পরিবারের কাউকে কিছু না জানিয়ে বাসে করে ঢাকায় আসেন। তিনি বলেন, এটা দেখে মনকে বুঝাতে পারিনি। তাই দ্রুত চলে এসেছি।

শুধু আলেয়া ও আনোয়ার হোসেনই নন, খালেদা জিয়ার মৃত্যুর পর এদিন এভারকেয়ার হাসপাতালের পথে ঢল নামে।

সারাদিনই হাসপাতালের সামনে ভিড় করেন নেতাকর্মীরা। তাদের অনেকেই দীর্ঘসময় অপেক্ষা করে কান্না করতে করতে ফিরে যান।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের গোলাম কিবরিয়া বলেন, আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়া। তার বক্তব্য শোনার জন্য কর্মসূচিতে আসতাম। তাকে দেখার জন্য আসতাম। আজও তার মৃত্যুর খবরে তাকে দেখার জন্য আসছি। কিন্তু আর তো দেখা হবে না প্রিয় নেত্রীকে। আর তো তার ডাকে আসা হবে না কর্মসূচিতে। আল্লাহ যেন তাকে জান্নাতবাসী করেন।

নেতাকর্মীরা বলছেন, আজ তাদের চোখে ঘুম নেই, আছে শুধু অশ্রু আর স্মৃতির ভিড়। কেউ হারিয়েছে একজন পথপ্রদর্শককে, কেউ একজন অভিভাবককে, কেউবা একজন নির্ভরতার শেষ আশ্রয়কে। তার একটি কথা, একটি হাসি, একটি দৃঢ় উপস্থিতি আজ বারবার মনে পড়ে বুকটা ভারী করে দিচ্ছে তাদের। মনে হয়, তিনি আছেন এই তো পাশেই, ডাক দিলেই সাড়া দেবেন। কিন্তু বাস্তবতা নির্মম, নীরব হলেও কোটি মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন খালেদা জিয়া।

এদিকে এভারকেয়ারের উদ্দেশে আসা সড়কের উভয় পাশে নেতাকর্মীদের ভিড় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও দলের স্বেচ্ছাসেবকরা।

 

কমেন্ট বক্স