বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ভারতের সংবাদমাধ্যম 'দ্য হিন্দু'-তে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেছেন।
ড. ইউনূস অভিযোগ করেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত থেকে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, হাসিনাকে বিচারের মুখোমুখি করতে ভারত সরকারের উচিত তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো। তবে যদি ভারত তা না করে, তাহলে দুই দেশের সম্পর্ক খারাপ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তিনি সতর্ক করে বলেন, “আমাদের অন্তর্বর্তী সরকার স্বল্পস্থায়ী, কিন্তু পরবর্তী সরকারও এই বিষয়টি উপেক্ষা করবে না।”
ড. ইউনূস জানান, তার সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে অর্থনীতি স্থিতিশীল করার জন্য উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে। তিনি ব্যাংকিং ব্যবস্থার সংস্কার, ঋণ পুনর্বিন্যাস এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধির বিষয়টি তুলে ধরেন। এছাড়া, তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় থেকে পাওয়া সমর্থনের কথাও উল্লেখ করেন, যা বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের লক্ষ্য এবং মেয়াদ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি জানান, সরকার নির্বাচনের জন্য পরিবেশ তৈরি করছে এবং একইসঙ্গে বিভিন্ন সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক সংস্কার চালাচ্ছে। তার মতে, নির্বাচন আয়োজনের প্রক্রিয়া শুরু হলেও সংস্কারের কাজ সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত কিছুটা সময় লাগতে পারে।
ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে ড. ইউনূস বলেন, “আমাদের স্বপ্ন ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো একটি মডেল, যেখানে দুই দেশের মধ্যে চলাচল ও বাণিজ্যের স্বাধীনতা থাকবে।” তবে শেখ হাসিনার ভারত থেকে রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়টিকে তিনি দুই দেশের সম্পর্কের জন্য একটি প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিহ্নিত করেন।
ড. ইউনূস বলেন, তিনি রাজনীতিবিদ নন এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সিদ্ধান্তের প্রতি তিনি শ্রদ্ধাশীল। তিনি ইঙ্গিত দেন যে, আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে এবং অন্তর্বর্তী সরকার এর কোনো বাধা দেবে না।
ড. ইউনূসের এই বক্তব্য বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এবং ভারত-বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বহুল আলোচনা ও বিতর্ক সৃষ্টি করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।