জীবিত স্বামীকে মৃত দেখিয়ে মামলা, গ্রেফতার সেই নারী

আপলোড সময় : ২২-১১-২০২৪ ০২:০৬:০১ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ২২-১১-২০২৪ ০২:০৬:০১ অপরাহ্ন
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দিন ছাত্র-জনতার বিজয় মিছিল চলাকালে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের গুলিতে তার স্বামী নিহত হয়েছেন উল্লেখ করে এক নারী মামলা করেন। মামলার তিন মাস পর তার স্বামী আশুলিয়া থানায় এসে হাজির হয়ে জানান, তার অজান্তে স্ত্রী তাকে মৃত দেখিয়ে অসৎ উদ্দেশ্যে মামলা করেছেন।সাভারের আশুলিয়ায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনা সাভারসহ দেশব্যাপী আলোচনা তৈরী হয়।

শুক্রবার সকালে আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো: রকিবুল হাসান নয়া দিগন্তকে জানান, ‘জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কুলসুমকে উদ্ধার ও আরো তিনজনকে আটক করা হয়েছে। তাদের দুপুরে আদালতে পাঠানো হবে।এর আগে, আশুলিয়া থানা পুলিশ বৃহস্পতিবার রাতে কক্সবাজার থেকে আশুলিয়া থানা পুলিশ মূলহোতা সেই নারী কুলসুমকে (২১) উদ্ধার ও তিনজনকে আটক করে। তারা বর্তমানে আশুলিয়া থানায় পুলিশ হেফাজতে রয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত ৫ আগষ্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ত্যাগ করে পালিয়ে যাওয়ার পর সাভার-আশুলিয়া থানায় নিরীহ সাধারণ মানুষকে একটি চক্র হয়রানিমূলকভাবে মামলায় জড়িয়ে অর্থ বাণিজ্য করছিল। এ মামলা থেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও সাধারণ মানুষ রেহাই পাননি। যদিও অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে বলে আসছে জুলাই-আগষ্টের ঘটনায় যেন কোনো নিরীহ ও সাধারণ মানুষ ভোগান্তির শিকার না হন।

এ বিষয়ে কুলসুম জানান, ‘আটক রুহুল আমিন এবং শফিক তাকে মামলা না করলে ভয়ভীতি দেখান এবং পাঁচ লাখ টাকা প্রদান ও প্রতি মাসে ২০ হাজার টাকা দিবে বললে তিনি মামলাটি করেন।’জানা গেছে, গত ২৪ অক্টোবর কুলসুম বেগম নামের এক নারী তার স্বামীকে হত্যার অভিযোগ এনে ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন। এতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১৩০ জনকে আসামি করা হয়। পরে এটি ৮ নভেম্বর ঢাকার আশুলিয়া থানায় এজাহারভুক্ত হয়।

মামলার বাদী স্থায়ী ঠিকানা দেখিয়েছেন মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার স্বল্প সিংজুরী বাংগালা গ্রামে। বর্তমান ঠিকানা দেখিয়েছেন আশুলিয়ার জামগড়া।এজাহার সূত্রে জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ৫ আগস্ট সকালে তার স্বামী মো: আল আমিন মিয়া (৩৪) মুক্তিকামী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অংশ নেন। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বিকেল ৪টার দিকে আশুলিয়ার বাইপাইল এলাকায় বিজয় মিছিলে তিনিও ছিলেন। তবে পরাজয় মেনে না নিতে পেরে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী বাহিনী নির্বিচার গুলি চালায়। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে তার স্বামী মারা যান।

মামলার বাদী কুলসুম বেগম আরো বলেন, ‘অনেক খোঁজাখুঁজি করে তিনি স্বামীর সন্ধান পাননি। পরে আশুলিয়া নারী ও শিশু হাসপাতালের ৬ আগস্টের জানতে পারেন, এই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিপুলসংখ্যক অজ্ঞাতনামা লাশ দাফন করেছে। এসব কাগজপত্র হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে আছে। পরে তিনি হাসপাতালে থাকা কাগজপত্র, ছবি ও ভিডিও দেখে তার স্বামীর লাশ শনাক্ত করেন। মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়াও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মো: আসাদুজ্জামান খান, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, মানিকগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুছ ছালাম, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, সাবেক ত্রাণ ও দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমানসহ ১৩০ জনের নাম উল্লেখ আছে।

আল আমিন মিয়ার পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ‘আল আমিন সিলেটের দক্ষিণ সুরমার পিরিজপুরের বাসিন্দা। মামলা দায়েরের প্রায় দুই সপ্তাহ পর তিনি জানতে পারেন, তাকে মৃত দেখিয়ে স্ত্রী মামলা করেছেন। মামলা থেকে আসামির নাম প্রত্যাহার করার কথা বলে নাকি তার স্ত্রী লোকজনের কাছ থেকে টাকা পয়সাও নিচ্ছেন। আল আমিন তখন মৌলভীবাজারের জুড়ি উপজেলায় ছিলেন। বিষয়টির সত্যতা পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে তিনি জুড়ী থানায় যোগাযোগ করেন। সেখানকার পুলিশ তাকে নিজের এলাকা দক্ষিণ সুরমা থানায় বিষয়টি জানাতে পরামর্শ দেয়। পরবর্তীতে আল আমিন আশুলিয়া থানায় আসেন এবং পুলিশকে জানান, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে মেকানিকের কাজের সুবাদে তিনি স্ত্রীসহ জুড়িতে অবস্থান করছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি লালমনিরহাটে। তবে দীর্ঘদিন ধরে তারা সিলেটের দক্ষিণ সুরমার পিরিজপুরে বসবাস করছেন। এখানেই তিনি স্ত্রী-পরিবার নিয়ে থাকেন। ৫ আগস্ট স্ত্রীর সাথে তিনি সিলেটেই ছিলেন। এর তিন-চার দিন পর ঝগড়া করে মানিকগঞ্জে চলে যান। এরপর আর কুলসুমের সাথে আল আমিনের কোনো যোগাযোগ হয়নি। পরে একজনের কাছ থেকে জানতে পারেন, আমি ৫ তারিখের (৫ আগস্ট) আন্দোলনে মারা গেছি উল্লেখ করে তিনি একটা মামলা করছেন। ওই মামলার একজন আসামি আমাকে ফোন দিয়া ঘটনাটি বলছে। এটা জানার পর আমি দক্ষিণ সুরমা থানায় গেছি। একটা জিডি করছি, ওসির সাথে পরামর্শ করছি। এরপর ওইখান থেকে আজকে আমাকে আশুলিয়া থানায় পাঠিয়েছে।


ওই আল আমিন গণমাধ্যমকে বলেছিল, ‘আমি জীবিত আছি। আমার স্ত্রী মিথ্যা মামলা করেছে। আমি এখনো মারা যাইনি। আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতেছি। আমি মনে করছি, ওরে কেউ জোরজবরদস্তি করে মামলা দেয়াইছে বা কোনো চক্রান্তের সাথে জড়িত।’এদিকে, আশুলিয়া থানা পুলিশের আটক রুহুল আমিন এবং শফিক তাদের বিরুদ্ধে কুলসুমের অভিযোগ অস্বীকার করেন।




 


Chairman & Managing Director : Nasir Uddin

Director News & Broadcast : Zeker Uddin Samrat

 __________________________________________________________

MyTv Bhaban, 155, 150/3, Hatirjheel, Dhaka-1219

Phone. ☎ +880255128896 ; Fax. +880255128899

Email. news@mytvbd.tv