২০২৫ শিক্ষাবর্ষে নতুন শ্রেণিতে ভর্তিতে অনলাইনে আবেদনের সুযোগ শেষ হয়েছে গতকাল শনিবার। ব্যয়ের হিসেবে সামর্থ্য বিবেচনায় সন্তানের ভর্তিতে অভিভাবকদের প্রথম পছন্দ সরকারি স্কুল। একই কারণে বেসরকারি স্কুল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন সাধারণ মধ্য ও নিম্নবিত্তরা। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে জনসংখ্যা অনুপাতে শহর এবং জেলা-উপজেলা পর্যায়ে আরও সরকারি স্কুল প্রতিষ্ঠার দাবি করেছেন অভিভাবকরা।স্কুলে ভর্তির কারিগরি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান টেলিটকের তথ্যানুযায়ী, গতকাল পর্যন্ত সরকারি ও বেসরকারি স্কুলে ভর্তির জন্য ৯ লাখ ৬৫ হাজার ৭০৪ শিক্ষার্থী ভর্তির আবেদন করেছে। এরমধ্যে ৩ হাজার ১৯৮ বেসরকারি বিদ্যালয়ে রয়েছে ১০ লাখ ৭ হাজার ৬৭১ আসন। এর বিপরীতে আবেদন করেছে ৩ লাখ ৩৯ হাজার ৮০০ শিক্ষার্থী। আর সরকারি ৬৮০ স্কুলে ১ লাখ ৮ হাজার ৭১৬ আসনের বিপরীতে আবেদন পড়েছে ৬ লাখ ২৫ হাজার ৯০৪টি। সে হিসাবে আসন অনুযায়ী ছয় গুণেরও বেশি আবেদন পড়েছে সরকারি স্কুলে। অন্যদিকে বেসরকারি স্কুলের মোট আসনের অর্ধেকও আবেদন পড়েনি।
সরকারি বাংলাবাজার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে লটারিতে ভর্তিচ্ছু এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক মোহাম্মদ আহসান উল্লাহ গতকাল শনিবার আমাদের সময়কে বলেন, নিত্যপণ্যের মূল্য চড়া। জীবনযাপনে সাধারণ মানুষের নাভিশ^াস। নানা কারণে আয় রোজগারও কমে গেছে। এরপর প্রতি বছর বাড়ে বেসরকারি স্কুলের টিউশন ফি। আবার সন্তানের লেখাপড়াও চালিয়ে নিতে হবে। ব্যয়ের কথা মাথায় রেখে এ বছর সন্তানকে সরকারি স্কুলে দিতে চাই। এখন ভাগ্যে কী আছে, তার অপেক্ষা করছি।
ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ষষ্ঠ শ্রেণি পড়ুয়া এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক জানান, আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের ফারাক অনেক বেশি। তাই সাধ্যের কথা মাথায় রেখে এ বছর মেয়েকে সরকারি স্কুলে ভর্তির জন্য আবেদন করেছি। তেজগাঁও সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তিচ্ছু এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক সোনিয়া বেগম অভিযোগ করে বলেন, চাহিদা থাকার পরও সরকারি স্কুলের সংখ্যা কম। সরকার নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না করলে আসন বাড়িয়ে ভর্তি নিতে পারে। সাধারণ মধ্যবিত্তদের জন্য প্রতি মাসে ৫ থেকে ৮ হাজার টাকা টিউশন ফি দিয়ে সন্তানকে বেসরকারি স্কুলে পড়ানোর কথা ভাবা যায় না। ছেলে লটারিতে চান্স না পেলে কী হবে? কোথায় পড়াব- এ নিয়ে টেনশনে আছি। একই স্কুলে ভর্তিচ্ছু আরেক শিক্ষার্থীর অভিভাবক খাদিজা বেগম অভিযোগ করেন, সরকারি স্কুল প্রতিষ্ঠা না করে বেসরকারি স্কুলগুলোকে শিক্ষাবাণিজ্যে উৎসাহ দিচ্ছে সরকার।
এ বিষয়ে কথা হলে শিক্ষাবিদ প্রফেসর মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, এখন বৈশি^ক অর্থনৈতিক একটা সংকট চলছে। দেশে নিত্যপণ্যের দ্রব্যমূল্য চড়া। মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্তরা পরিবারের খরচ মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে। শিক্ষা ব্যয়ের বিষয়টি তাদের আরও ভাবিয়ে তুলছে। আর্থিক যে জোগান আছে, সেটা দিয়ে মৌলিক চাহিদাগুলো মেটানোর চেষ্টা হচ্ছে। এতে অভিভাবদের মধ্যে একটা পরিবর্তন এসেছে। এক সময়ে বেসরকারি স্কুলে ভর্তি ছিল সোনার হরিণ, এখন সরকারি স্কুলে ভর্তি হচ্ছে সোনার হরিণ। ব্যয় কমাতে এখন তারা সরকারি স্কুলকেই পছন্দ করছেন বেশি। এ জন্য শহর গ্রামে চাহিদার ভিত্তিতে নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করতে পারে সরকার।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (মাধ্যমিক) প্রফেসর ড. খান মইনুদ্দিন আল মাহমুদ সোহেল গতকাল সন্ধ্যায় আমাদের সময়কে বলেন, প্রাথমিক সিদ্ধান্ত আছে ১২ ডিসেম্বর লটারি অনুষ্ঠানের। তবে তারিখ পরিবর্তন হতে পারে। দুই এক দিনের মধ্যে চূড়ান্ত তারিখ জানিয়ে দেওয়া হবে।এবার ভর্তি নীতিমালা অনুযায়ী, কোটা পদ্ধতিতে কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়েছে। এতদিন মুক্তিযোদ্ধা বা শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের পুত্র-কন্যা এবং পুত্র-কন্যা পাওয়া না গেলে নাতি-নাতনিদের ভর্তির জন্য ৫ শতাংশ কোটা সংরক্ষিত রাখার নিয়ম ছিল। নতুন সিদ্ধান্তে বীর মুক্তিযোদ্ধা বা শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের পুত্র-কন্যার জন্যই কেবল ৫ শতাংশ কোটা সংরক্ষিত থাকবে। এ কোটায় শিক্ষার্থী না পাওয়া গেলে মেধাতালিকা থেকে এ আসনে ভর্তি করতে হবে।
সরকারি-বেসরকারি স্কুলে ভর্তির ক্ষেত্রে ৬৮ শতাংশই কোটা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৪০ শতাংশই ক্যাচমেন্ট এরিয়া কোটা। তা ছাড়া বীর ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ৫ শতাংশ, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও অধীনস্ত দপ্তর-সংস্থাগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য ১ শতাংশ, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের ১০ শতাংশ, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীর ২ শতাংশ এবং অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীর যমজ ও সহোদর ভাই-বোনরা ৫ শতাংশ কোটায় সংরক্ষিত আসনে ভর্তির সুযোগ পাবেন। পাশাপাশি কোনো শ্রেণি শাখার জন্য শিক্ষার্থীর চাহিদা সংখ্যা কোনোভাবেই ৫৫ জনের বেশি দেওয়া যাবে না। তথ্য ফরমে ঢাকা মহানগরের প্রতিষ্ঠান প্রধানরা প্রতিষ্ঠান-সংলগ্ন সর্বোচ্চ তিনটি থানাকে ‘ক্যাচমেন্ট’ এলাকা হিসেবে নির্ধারণ করবেন।
সরকারি বাংলাবাজার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে লটারিতে ভর্তিচ্ছু এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক মোহাম্মদ আহসান উল্লাহ গতকাল শনিবার আমাদের সময়কে বলেন, নিত্যপণ্যের মূল্য চড়া। জীবনযাপনে সাধারণ মানুষের নাভিশ^াস। নানা কারণে আয় রোজগারও কমে গেছে। এরপর প্রতি বছর বাড়ে বেসরকারি স্কুলের টিউশন ফি। আবার সন্তানের লেখাপড়াও চালিয়ে নিতে হবে। ব্যয়ের কথা মাথায় রেখে এ বছর সন্তানকে সরকারি স্কুলে দিতে চাই। এখন ভাগ্যে কী আছে, তার অপেক্ষা করছি।
ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ষষ্ঠ শ্রেণি পড়ুয়া এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক জানান, আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের ফারাক অনেক বেশি। তাই সাধ্যের কথা মাথায় রেখে এ বছর মেয়েকে সরকারি স্কুলে ভর্তির জন্য আবেদন করেছি। তেজগাঁও সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তিচ্ছু এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক সোনিয়া বেগম অভিযোগ করে বলেন, চাহিদা থাকার পরও সরকারি স্কুলের সংখ্যা কম। সরকার নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না করলে আসন বাড়িয়ে ভর্তি নিতে পারে। সাধারণ মধ্যবিত্তদের জন্য প্রতি মাসে ৫ থেকে ৮ হাজার টাকা টিউশন ফি দিয়ে সন্তানকে বেসরকারি স্কুলে পড়ানোর কথা ভাবা যায় না। ছেলে লটারিতে চান্স না পেলে কী হবে? কোথায় পড়াব- এ নিয়ে টেনশনে আছি। একই স্কুলে ভর্তিচ্ছু আরেক শিক্ষার্থীর অভিভাবক খাদিজা বেগম অভিযোগ করেন, সরকারি স্কুল প্রতিষ্ঠা না করে বেসরকারি স্কুলগুলোকে শিক্ষাবাণিজ্যে উৎসাহ দিচ্ছে সরকার।
এ বিষয়ে কথা হলে শিক্ষাবিদ প্রফেসর মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, এখন বৈশি^ক অর্থনৈতিক একটা সংকট চলছে। দেশে নিত্যপণ্যের দ্রব্যমূল্য চড়া। মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্তরা পরিবারের খরচ মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে। শিক্ষা ব্যয়ের বিষয়টি তাদের আরও ভাবিয়ে তুলছে। আর্থিক যে জোগান আছে, সেটা দিয়ে মৌলিক চাহিদাগুলো মেটানোর চেষ্টা হচ্ছে। এতে অভিভাবদের মধ্যে একটা পরিবর্তন এসেছে। এক সময়ে বেসরকারি স্কুলে ভর্তি ছিল সোনার হরিণ, এখন সরকারি স্কুলে ভর্তি হচ্ছে সোনার হরিণ। ব্যয় কমাতে এখন তারা সরকারি স্কুলকেই পছন্দ করছেন বেশি। এ জন্য শহর গ্রামে চাহিদার ভিত্তিতে নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করতে পারে সরকার।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (মাধ্যমিক) প্রফেসর ড. খান মইনুদ্দিন আল মাহমুদ সোহেল গতকাল সন্ধ্যায় আমাদের সময়কে বলেন, প্রাথমিক সিদ্ধান্ত আছে ১২ ডিসেম্বর লটারি অনুষ্ঠানের। তবে তারিখ পরিবর্তন হতে পারে। দুই এক দিনের মধ্যে চূড়ান্ত তারিখ জানিয়ে দেওয়া হবে।এবার ভর্তি নীতিমালা অনুযায়ী, কোটা পদ্ধতিতে কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়েছে। এতদিন মুক্তিযোদ্ধা বা শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের পুত্র-কন্যা এবং পুত্র-কন্যা পাওয়া না গেলে নাতি-নাতনিদের ভর্তির জন্য ৫ শতাংশ কোটা সংরক্ষিত রাখার নিয়ম ছিল। নতুন সিদ্ধান্তে বীর মুক্তিযোদ্ধা বা শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের পুত্র-কন্যার জন্যই কেবল ৫ শতাংশ কোটা সংরক্ষিত থাকবে। এ কোটায় শিক্ষার্থী না পাওয়া গেলে মেধাতালিকা থেকে এ আসনে ভর্তি করতে হবে।
সরকারি-বেসরকারি স্কুলে ভর্তির ক্ষেত্রে ৬৮ শতাংশই কোটা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৪০ শতাংশই ক্যাচমেন্ট এরিয়া কোটা। তা ছাড়া বীর ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ৫ শতাংশ, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও অধীনস্ত দপ্তর-সংস্থাগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য ১ শতাংশ, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের ১০ শতাংশ, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীর ২ শতাংশ এবং অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীর যমজ ও সহোদর ভাই-বোনরা ৫ শতাংশ কোটায় সংরক্ষিত আসনে ভর্তির সুযোগ পাবেন। পাশাপাশি কোনো শ্রেণি শাখার জন্য শিক্ষার্থীর চাহিদা সংখ্যা কোনোভাবেই ৫৫ জনের বেশি দেওয়া যাবে না। তথ্য ফরমে ঢাকা মহানগরের প্রতিষ্ঠান প্রধানরা প্রতিষ্ঠান-সংলগ্ন সর্বোচ্চ তিনটি থানাকে ‘ক্যাচমেন্ট’ এলাকা হিসেবে নির্ধারণ করবেন।